০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না -ভারতকে মেজর হাফিজ

  • আপডেট: ০৪:২৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪
  • 26

ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, ভারতকে বলতে চাই, আপনারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। লড়াই করেছেন, আমাদের পাশাপাশি যুদ্ধে করেছেন কিন্তু এদেশের প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না, জনগণের বিপক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে কিন্তু কোনো রকমভাবে আমাদের দেশ, সাধারণ মানুষ সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবেন না। সার্কের প্রত্যেকটা দেশ আপনাদের বিরুদ্ধে কেনো? ছোট ছোট দেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলংকাও। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা চাই, বন্ধুত্ব হবে জনগণের সাথে। সুতরাং বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি, বাংলাদেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মেজর হাফিজ বলেন, শেখ হাসিনা ইতিহাসের সবচাইতে বড় ঘাতক, এহেন ঘটনা নেই করেনি, কত মায়ের বুক যে খালি করেছে। আমরা আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সভা থেকে দাবি করব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। ভারতকে বলব, যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।

বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সেনা তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর। তার নেতৃত্বে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একটা তদন্ত হয়েছিল। তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। আমরা চাই, তার নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।

হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, বিডিআরে মেধাবী চৌকশ সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেয়া হয়েছিলো। এদেরকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে নির্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখছি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা, ভেরি স্লো। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এর বিচার শেষ হবে না। অতি দ্রুত প্রয়োজন লাগলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন। তাহলে নিহতদের রুহের মাগফিরাত হবে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) এর সদর দফতর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকেও হত্যা করা হয়েছিলো। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সেনা বাহিনী থেকে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দিয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা নিকৃষ্টতম প্রতিষ্ঠান। ভোট ডাকাতি করে এতোদিন আওয়ামী লীগকে বহাল রেখেছে তারা। এই কমিশন বলেছিলো, আওয়ামী লীগ আসলে ভোটাররা আসবে। ইলেশনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমান, এক ঘুমে ২৪% ভোট ৫৫% হয়ে গেছে দুপুরেই। কি ধরনের ইলেশন কমিশন এরা, এখনো তারা কি করে থাকে? স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা কেউ নির্বাচিত নয়, তাদের সকল নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান তিনি।

শেখ হাসিনার নামের সেনানিবাস বাতিলের দাবি জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি অত্যন্ত গর্ব করি, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আমরা পাঁচটি কেন্টনমেন্টে বিদ্রোহী সৈনিকেরা বাংলাদেশ সেনা বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এই সেনাবাহিনী সংগ্রামী জনগণের সাথে ছিলো। আমিসহ আরও ২৪ জন তরুন কর্মকর্তা, আমরা ক্যাপ্টেন ছিলাম, জিয়াউর রহমানসহ তিনজন মেজর, আমরা গুটিকতক ক্যাপ্টেন, একজন লেফটেন্টেসহ এই সেনা বাহিনী গড়ে তুলেছি। আমাদেরকে সেনাবাহিনীর ফাউন্ডিং ফাদার মনে করা হয়। এখানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা নিয়ে গঠিত হয়েছিলো মুক্তিবাহিনী। এই সেনা বাহিনী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কি করে অপেক্ষায় ছিলাম। ২ আগস্টে বর্তমান সেনা বাহিনী প্রধানকে আমি একটা এসএমএস পাঠিয়েছিলাম, জনগণের সাথে থাকতে এবং বিপ্লবে যোগ দিতে। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সরানোর ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা রেখেছে। সেজন্য আমি তাদেরকে অভিবাদন জানাই। আমাদের দাবি স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার নামে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি করতে হবে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদেরকে দেশের আর্দশ বলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাফিজ উদ্দীন বলেন, আবু সাঈদের ছবি এখানে আছে। এরা বাংলাদেশের আর্দশ। গত কয়েক বছরে আমরা একাত্তর ভুলে গিয়েছিলাম। একাত্তরের চেতনায় উদ্বিপ্ত যুবকরা যে এখনো আছে তার প্রমাণ শহীদ আবু সাঈদ। আবু সাঈদের মৃত্যু সারা বিশ্ব দেখেছে। তার মৃত্যু দৃশ্য দেখে দুই চোখ দিয়ে অশ্রু নির্গত হয়। এমন সাহসী সন্তান এখনো আছে বাংলাদেশে। প্রথমে গুলি লেগেছে, সে শুয়ে পড়েনি, তারপরেও দাঁড়িয়ে আছে হাত প্রসারিত করে।

তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়া হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। তাকে একটা কথা বলেছি, যেদিন নির্বাচন হবে, ইনশাল্লাহ বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। কিন্তু আমরা যেন আওয়ামী লীগ না হই। আমরা জিয়াউর রহমানের বিএনপি থাকব, কোনো চাঁদাবাজী, কোনো দখলবাজী, কোনো দুর্নীতি আমাদের দলে কেউ করতে পারবে না। এখনো কেউ এসব করতে পারবে না। বিএনপি এসবের বিরুদ্ধে।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীরসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে মুক্তযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, শেখ হাসিনার দেশে ফিরিয়ে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার সাথে জড়িত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচার, ভুয়া ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল, জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) বাতিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের জাতীয় বীর ঘোষণা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভাব রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন এবং অস্বচ্ছল পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান।#

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না -ভারতকে মেজর হাফিজ

আপডেট: ০৪:২৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪

ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, ভারতকে বলতে চাই, আপনারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। লড়াই করেছেন, আমাদের পাশাপাশি যুদ্ধে করেছেন কিন্তু এদেশের প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না, জনগণের বিপক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে কিন্তু কোনো রকমভাবে আমাদের দেশ, সাধারণ মানুষ সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবেন না। সার্কের প্রত্যেকটা দেশ আপনাদের বিরুদ্ধে কেনো? ছোট ছোট দেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলংকাও। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা চাই, বন্ধুত্ব হবে জনগণের সাথে। সুতরাং বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি, বাংলাদেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মেজর হাফিজ বলেন, শেখ হাসিনা ইতিহাসের সবচাইতে বড় ঘাতক, এহেন ঘটনা নেই করেনি, কত মায়ের বুক যে খালি করেছে। আমরা আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সভা থেকে দাবি করব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। ভারতকে বলব, যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।

বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সেনা তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর। তার নেতৃত্বে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একটা তদন্ত হয়েছিল। তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। আমরা চাই, তার নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।

হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, বিডিআরে মেধাবী চৌকশ সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেয়া হয়েছিলো। এদেরকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে নির্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখছি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা, ভেরি স্লো। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এর বিচার শেষ হবে না। অতি দ্রুত প্রয়োজন লাগলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন। তাহলে নিহতদের রুহের মাগফিরাত হবে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) এর সদর দফতর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকেও হত্যা করা হয়েছিলো। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সেনা বাহিনী থেকে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দিয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা নিকৃষ্টতম প্রতিষ্ঠান। ভোট ডাকাতি করে এতোদিন আওয়ামী লীগকে বহাল রেখেছে তারা। এই কমিশন বলেছিলো, আওয়ামী লীগ আসলে ভোটাররা আসবে। ইলেশনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমান, এক ঘুমে ২৪% ভোট ৫৫% হয়ে গেছে দুপুরেই। কি ধরনের ইলেশন কমিশন এরা, এখনো তারা কি করে থাকে? স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা কেউ নির্বাচিত নয়, তাদের সকল নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান তিনি।

শেখ হাসিনার নামের সেনানিবাস বাতিলের দাবি জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি অত্যন্ত গর্ব করি, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আমরা পাঁচটি কেন্টনমেন্টে বিদ্রোহী সৈনিকেরা বাংলাদেশ সেনা বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এই সেনাবাহিনী সংগ্রামী জনগণের সাথে ছিলো। আমিসহ আরও ২৪ জন তরুন কর্মকর্তা, আমরা ক্যাপ্টেন ছিলাম, জিয়াউর রহমানসহ তিনজন মেজর, আমরা গুটিকতক ক্যাপ্টেন, একজন লেফটেন্টেসহ এই সেনা বাহিনী গড়ে তুলেছি। আমাদেরকে সেনাবাহিনীর ফাউন্ডিং ফাদার মনে করা হয়। এখানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা নিয়ে গঠিত হয়েছিলো মুক্তিবাহিনী। এই সেনা বাহিনী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কি করে অপেক্ষায় ছিলাম। ২ আগস্টে বর্তমান সেনা বাহিনী প্রধানকে আমি একটা এসএমএস পাঠিয়েছিলাম, জনগণের সাথে থাকতে এবং বিপ্লবে যোগ দিতে। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সরানোর ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা রেখেছে। সেজন্য আমি তাদেরকে অভিবাদন জানাই। আমাদের দাবি স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার নামে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি করতে হবে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদেরকে দেশের আর্দশ বলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাফিজ উদ্দীন বলেন, আবু সাঈদের ছবি এখানে আছে। এরা বাংলাদেশের আর্দশ। গত কয়েক বছরে আমরা একাত্তর ভুলে গিয়েছিলাম। একাত্তরের চেতনায় উদ্বিপ্ত যুবকরা যে এখনো আছে তার প্রমাণ শহীদ আবু সাঈদ। আবু সাঈদের মৃত্যু সারা বিশ্ব দেখেছে। তার মৃত্যু দৃশ্য দেখে দুই চোখ দিয়ে অশ্রু নির্গত হয়। এমন সাহসী সন্তান এখনো আছে বাংলাদেশে। প্রথমে গুলি লেগেছে, সে শুয়ে পড়েনি, তারপরেও দাঁড়িয়ে আছে হাত প্রসারিত করে।

তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়া হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। তাকে একটা কথা বলেছি, যেদিন নির্বাচন হবে, ইনশাল্লাহ বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। কিন্তু আমরা যেন আওয়ামী লীগ না হই। আমরা জিয়াউর রহমানের বিএনপি থাকব, কোনো চাঁদাবাজী, কোনো দখলবাজী, কোনো দুর্নীতি আমাদের দলে কেউ করতে পারবে না। এখনো কেউ এসব করতে পারবে না। বিএনপি এসবের বিরুদ্ধে।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীরসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে মুক্তযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, শেখ হাসিনার দেশে ফিরিয়ে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার সাথে জড়িত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচার, ভুয়া ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল, জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) বাতিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের জাতীয় বীর ঘোষণা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভাব রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন এবং অস্বচ্ছল পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান।#