এখনও নোয়াখালীতে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি

  • আপডেট: ০১:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
  • 37

ছবি :সংগৃহীত

নোয়াখালীতে এখনও প্রায় ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এবারের বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা গত ৫০-৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। সরকারি হিসেব বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। বন্যা পরবর্তীতে দীর্ঘ হয়েছে জেলার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি। আর এর জন্য খাল দখল, খালের ওপর বহুতল ভবন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কালভার্ট, বাঁধ নির্মাণকে দায়ী করে দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জলাবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নামলেও এখনও রয়েছে প্রতিটি বাড়ির উঠানে। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও এর চেয়ে বেশি।

জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ফেনী থেকে নেমে আসা উজানের পানি প্রবেশ করায় নোয়াখালীর আটটি উপজেলা প্লাবিত হয়। এরই মধ্যে টানা ভারী বৃষ্টিতে প্রতিটি বাড়ির উঠান ও সড়ক ৮-৯ ফুট পানির নিচে প্লাবিত হয়। নিজেদের বসতঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বহুতল ভবনে ও পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন বন্যাকবলিত মানুষ। এখনও অনেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে রয়েছেন। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল জেলার সদর, কবিরহাট, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলা। কিন্তু বন্যার দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পানিবন্দি চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ ওয়ার্ড। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও বেশির ভাগ বাড়ির উঠানে হাঁটু পরিমাণ পানি রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ জানান, প্রায় ২ মাস আগে তিনি বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যান। কয়েক দিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে যাওয়ার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে তাদের চলে আসতে হয়। এরপর থেকে চৌমুহনী বাজারের ছোট একটি বাসায় তারা ভাড়া নিয়েছেন। এখনও পরিবারের সবাই ওই বাসায় আছে। কবে নাগাদ পানি নামবে, আর কবে বাড়ি আসতে পারবেন তা নিশ্চিত নয় তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন শুধু চৌমুহনী পৌরসভা নয়, একই চিত্র জেলার সদর উপজেলার নেয়াজপুর, চরমটুয়া, কাদির হানিফ ইউনিয়ন, কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর, সুন্দলপুর ইউনিয়ন, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড়, ডমুরুয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের। এ ছাড়াও বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। আর এই জলাবদ্ধতা দীর্ঘ হওয়ায় বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ।

স্থানীয়রা আরও বলছেন, নোয়াখালীর ভাটি এলাকা লক্ষ্মীপুর জেলা। নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুর হয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে। তাই নোয়াখালীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে লক্ষ্মীপুর জেলার খালের ওপর সকল বাঁধ, অবৈধ স্থাপনা, ভেসাল জালসহ পানি নামার জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো সরানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করা দরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী খালের সদর উপজেলার বিভিন্ন অংশ, শহরের ওপর ছাগলমারা খাল, চাটখিলের খিলপাড়া, রামনারায়ণপুর, বদলকোট, নোয়খলা, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড়, সোনাইমুড়ী উপজেলার বগাদিয়া উত্তর পোল থেকে কালিকাপুর পর্যন্ত, কলেজ গেইট থেকে নান্দিয়া পাড়া পর্যন্ত, বজরা থেকে চাঁদুপুর পর্যন্ত খাল দখল হয়ে আছে। বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্থাপনা রয়েছে। চৌমুহনী বাজারে খালের সিংহভাগ অংশ ব্যবসায়ীরা ময়লা আর্বজনা ফেলে ভরাট করেছে। এছাড়া কবিরহাট উপজেলার রিকশা ওয়ালার দোকান এলাকায় খালের মাঝখানে দেওয়া হয়েছে একাধিক বাঁধ। দখল করা হয়েছে ওয়াপদা খালের বেশির ভাগ অংশ। আর এ খাল দখল ও বাঁধই হয়েছে জেলার মানুষের গলারকাঁটা।

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী সোহান বলেন, বাজারের প্রধান সড়ক ছাড়া বাকি সবকয়টি এলাকা অনেক নিচু। বন্যার পর কয়েক বার পানি নেমেছিলো, আবার বৃষ্টিতে পানি জমতে থাকে। একদিন বৃষ্টি হলে ৩-৪ দিন পানি জমে থাকে। চৌমুহনী বাজারের বড় খালগুলোতে ময়লা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। আশপাশের সবগুলো ছোট খাল দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট ও বাড়ির সামনে বাঁধ দিয়ে সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে প্রতিটি জায়গায় পানি আটকে আছে। এ বাঁধগুলো না থাকলে হয়তো পানি সরাসরি বড় খালে চলো আসতো। বড় খাল সংস্কার করার পাশাপাশি ছোট খালগুলোর দখলকৃত স্থানগুলো উদ্ধার করা না হলে এ পানি সহজে নামবে না।

জেলা শহর মাইজদীর আরিফুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, শহরে জলাবদ্ধতার কারণ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। তার মতে শহরে যেভাবে ড্রেন করার কথা ছিল সেটি সেভাবে না করে ড্রেনের জায়গায় কোনোভাবে নালা করা হয়েছে। ফলে এ টুকু জায়গা দিয়ে পানি নামছে না, তারপর ড্রেনে ময়লা ফেলে পানির গতিপথ বন্ধ করা হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আজ প্রায় ৩ মাসের বেশি সময় ধরে শহরে জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। কবে এটি থেকে মানুষ মুক্তি পাবে এটি কারও জানা নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগের কাগজে-কলমে অনেক খালের হিসাব থাকলেও বাস্তবে তা নেই। কয়েক বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালীরা খালগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন, নিজেরাও দখলে নিয়েছেন অনেকাংশ। অথচ; একসময় জেলার বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী থেকে এসব খাল হয়ে পণ্যবাহী নৌকা জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং পাশের লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চাঁদপুরে যেতো। বর্তমানে নৌকা তো দূরের কথা এসব খাল দিয়ে পানি নামতে পারছে না।

জেলা প্রশাসকের সবশেষ তথ্যমতে, জেলায় বন্যায় এখনও পানিবন্দি ১১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। খোলা রয়েছে ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্র, যেখানে এখনও রয়েছেন প্রায় ৭ শতাধিক মানুষ।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বন্যা পরবর্তী সময় বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক স্থান থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় খালের ওপর থাকা কিছু স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি প্রবাহ সচল করতে খাল পরিষ্কারের কাজও করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খাল দখল করে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে সেগুলো ভেঙে দেওয়া’সহ খাল পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রয়েছে।

Tag :

এখনও নোয়াখালীতে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি

আপডেট: ০১:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

নোয়াখালীতে এখনও প্রায় ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এবারের বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা গত ৫০-৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। সরকারি হিসেব বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। বন্যা পরবর্তীতে দীর্ঘ হয়েছে জেলার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি। আর এর জন্য খাল দখল, খালের ওপর বহুতল ভবন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কালভার্ট, বাঁধ নির্মাণকে দায়ী করে দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জলাবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নামলেও এখনও রয়েছে প্রতিটি বাড়ির উঠানে। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও এর চেয়ে বেশি।

জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ফেনী থেকে নেমে আসা উজানের পানি প্রবেশ করায় নোয়াখালীর আটটি উপজেলা প্লাবিত হয়। এরই মধ্যে টানা ভারী বৃষ্টিতে প্রতিটি বাড়ির উঠান ও সড়ক ৮-৯ ফুট পানির নিচে প্লাবিত হয়। নিজেদের বসতঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বহুতল ভবনে ও পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন বন্যাকবলিত মানুষ। এখনও অনেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে রয়েছেন। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল জেলার সদর, কবিরহাট, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলা। কিন্তু বন্যার দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পানিবন্দি চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ ওয়ার্ড। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও বেশির ভাগ বাড়ির উঠানে হাঁটু পরিমাণ পানি রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ জানান, প্রায় ২ মাস আগে তিনি বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যান। কয়েক দিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে যাওয়ার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে তাদের চলে আসতে হয়। এরপর থেকে চৌমুহনী বাজারের ছোট একটি বাসায় তারা ভাড়া নিয়েছেন। এখনও পরিবারের সবাই ওই বাসায় আছে। কবে নাগাদ পানি নামবে, আর কবে বাড়ি আসতে পারবেন তা নিশ্চিত নয় তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন শুধু চৌমুহনী পৌরসভা নয়, একই চিত্র জেলার সদর উপজেলার নেয়াজপুর, চরমটুয়া, কাদির হানিফ ইউনিয়ন, কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর, সুন্দলপুর ইউনিয়ন, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড়, ডমুরুয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের। এ ছাড়াও বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। আর এই জলাবদ্ধতা দীর্ঘ হওয়ায় বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ।

স্থানীয়রা আরও বলছেন, নোয়াখালীর ভাটি এলাকা লক্ষ্মীপুর জেলা। নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুর হয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে। তাই নোয়াখালীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে লক্ষ্মীপুর জেলার খালের ওপর সকল বাঁধ, অবৈধ স্থাপনা, ভেসাল জালসহ পানি নামার জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো সরানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করা দরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী খালের সদর উপজেলার বিভিন্ন অংশ, শহরের ওপর ছাগলমারা খাল, চাটখিলের খিলপাড়া, রামনারায়ণপুর, বদলকোট, নোয়খলা, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড়, সোনাইমুড়ী উপজেলার বগাদিয়া উত্তর পোল থেকে কালিকাপুর পর্যন্ত, কলেজ গেইট থেকে নান্দিয়া পাড়া পর্যন্ত, বজরা থেকে চাঁদুপুর পর্যন্ত খাল দখল হয়ে আছে। বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্থাপনা রয়েছে। চৌমুহনী বাজারে খালের সিংহভাগ অংশ ব্যবসায়ীরা ময়লা আর্বজনা ফেলে ভরাট করেছে। এছাড়া কবিরহাট উপজেলার রিকশা ওয়ালার দোকান এলাকায় খালের মাঝখানে দেওয়া হয়েছে একাধিক বাঁধ। দখল করা হয়েছে ওয়াপদা খালের বেশির ভাগ অংশ। আর এ খাল দখল ও বাঁধই হয়েছে জেলার মানুষের গলারকাঁটা।

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী সোহান বলেন, বাজারের প্রধান সড়ক ছাড়া বাকি সবকয়টি এলাকা অনেক নিচু। বন্যার পর কয়েক বার পানি নেমেছিলো, আবার বৃষ্টিতে পানি জমতে থাকে। একদিন বৃষ্টি হলে ৩-৪ দিন পানি জমে থাকে। চৌমুহনী বাজারের বড় খালগুলোতে ময়লা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। আশপাশের সবগুলো ছোট খাল দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট ও বাড়ির সামনে বাঁধ দিয়ে সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে প্রতিটি জায়গায় পানি আটকে আছে। এ বাঁধগুলো না থাকলে হয়তো পানি সরাসরি বড় খালে চলো আসতো। বড় খাল সংস্কার করার পাশাপাশি ছোট খালগুলোর দখলকৃত স্থানগুলো উদ্ধার করা না হলে এ পানি সহজে নামবে না।

জেলা শহর মাইজদীর আরিফুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, শহরে জলাবদ্ধতার কারণ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। তার মতে শহরে যেভাবে ড্রেন করার কথা ছিল সেটি সেভাবে না করে ড্রেনের জায়গায় কোনোভাবে নালা করা হয়েছে। ফলে এ টুকু জায়গা দিয়ে পানি নামছে না, তারপর ড্রেনে ময়লা ফেলে পানির গতিপথ বন্ধ করা হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আজ প্রায় ৩ মাসের বেশি সময় ধরে শহরে জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। কবে এটি থেকে মানুষ মুক্তি পাবে এটি কারও জানা নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগের কাগজে-কলমে অনেক খালের হিসাব থাকলেও বাস্তবে তা নেই। কয়েক বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালীরা খালগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন, নিজেরাও দখলে নিয়েছেন অনেকাংশ। অথচ; একসময় জেলার বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী থেকে এসব খাল হয়ে পণ্যবাহী নৌকা জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং পাশের লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চাঁদপুরে যেতো। বর্তমানে নৌকা তো দূরের কথা এসব খাল দিয়ে পানি নামতে পারছে না।

জেলা প্রশাসকের সবশেষ তথ্যমতে, জেলায় বন্যায় এখনও পানিবন্দি ১১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। খোলা রয়েছে ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্র, যেখানে এখনও রয়েছেন প্রায় ৭ শতাধিক মানুষ।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বন্যা পরবর্তী সময় বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক স্থান থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় খালের ওপর থাকা কিছু স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি প্রবাহ সচল করতে খাল পরিষ্কারের কাজও করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খাল দখল করে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে সেগুলো ভেঙে দেওয়া’সহ খাল পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রয়েছে।