ফাঁস যুবদল ও যুব মহিলা লীগ নেত্রীর ফোনালাপ

  • আপডেট: ০৪:০৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
  • 10

জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানা যুব মহিলা লীগ নেত্রীর সঙ্গে যুবদল নেতার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। বিএনপির এক কর্মীর করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দিতে যুবদল নেতার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই যুব মহিলা লীগ নেত্রী।

রোববার সকাল থেকে ফোনালাপের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফোনালাপটি ভাইরাল হওয়ায় জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

কথোপকথন ভাইরাল হওয়া যুব মহিলা লীগ নেত্রীর নাম জহুরা বেগম। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও একই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। অপরদিকে যুবদলের ওই নেতার নাম মাহবুবুর রহমান লাভলু। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব।

শনিবার (৯ নভেম্বর) দুই নেতার কথোপকথনের ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কথোপকথনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

জহুরা: আসসালামু আলাইকুম ভাই।

লাভলু: ওয়া আলাইকুম সালাম। ভালো আছেন?

জহুরা: কই ভালো ভাই? শেষ পর্যন্ত থাকবার দিলেন কই।

লাভলু: আপনে গড়ে এলাকার গামা উকিলে এগুলো করছে।

জহুরা: হ। গামা আর ইয়ে মানিক ভাই (বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর) বলে এগুলা জানেই।

লাভলু: মানিক ভাই আপনের বিষয়টা জানে না।

জহুরা: মামলার তালিকা বলে না দেখে দেয় না।থানায় দেওয়ার আগে বলে তালিকা দেইখা দে। এখন আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানি ফেরত দিবো? এখন এগুলোর মধ্যে মামলা দিয়া থুইলে কেমনে কী করি!

লাভলু: ঠিকই আছে। মামলার মধ্যে পইরা থাকলে আরেক ঝামেলা।

জহুরা: নাম কি চার্জশিট থেকে কাটা যাবো?

লাভলু: আপনে আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন। চার্জশিট থেকে আমি নাম কেটে দিমুনি।

জহুরা: এখন কোনো কিছু করা যাবো না?

লাভলু: এখন মানিক ভাইয়ের সঙ্গে বসে কথা বলতে হবো।

জহুরা: আমি তো এখন মামলার ভয়ো বের হতে পারছি না। উপজেলা থেকে কাগজপত্র সব আইসা পরতাছে। কোর্টে যাইতে বলতাছে সমন্বয়কারীরা। সবাই রিট করবো। এলাকায় যদি না থাকতে পারি, জনগণের কাজি যদি না করতে পারি, শুধুমাত্র উপজেলার চেয়ারম্যান থাকবো না। আর যে মেম্বাররা পলাতক তারা থাকতে পারবো না।

লাভলু: আপনার বলে রাস্তার ঠিকাদারি কাজ চলতাছে। ওইডা আমাকে দিয়া দেন, আমি করি।

জহুরা: আমারতো নিজস্ব কোনো কাজ নাই। ওইটা আমার না। এইল্লা মানসে বাড়তি কথা কয়। মাইসে ফেসবুকে দিছে কোটি কোটি টাকা কামাইছি। এই করছি, সেই করছি। দয়া করে মানিক সওদাগরের সাথে বইসেন তো দেখি।

লাভলু: ঠিক আছে। আপনে আমি কালকে বসমু।

জহুরা: আমিতো আপনাদের সাথেই কাজ করতে চাই মিলেমিশে।

তবে এ বিষয়ে যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও বকশীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়াম্যান জহুরা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে জহুরা ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবদলের সদস্যসচিব মাহবুবুর রহমান লাভলু।

তিনি বলেন, ‘একটি ছেলে আমাকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে মামা উনিতো (জহুরা বেগম) পলাতক। কোনো কাজ করতে পারছে না, একটু কথা বলেন। পরে আমি কথা বলি। আমি সহজ-সরল মানুষ ভাই। তিনি ফোনে কথা বলার শুরুতেই মামলা নিয়ে কথা বলে। মামলার বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই। কাজের জন্য তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

গত ৪ আগস্ট বকশীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ১ নভেম্বর ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন গোলাম মোস্তফা নামের এক বিএনপি নেতা। ওই মামলার ৩২ নম্বর আসামি যুব মহিলা লীগ নেত্রী জহুরা বেগম।

Tag :

ফাঁস যুবদল ও যুব মহিলা লীগ নেত্রীর ফোনালাপ

আপডেট: ০৪:০৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানা যুব মহিলা লীগ নেত্রীর সঙ্গে যুবদল নেতার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। বিএনপির এক কর্মীর করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দিতে যুবদল নেতার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই যুব মহিলা লীগ নেত্রী।

রোববার সকাল থেকে ফোনালাপের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফোনালাপটি ভাইরাল হওয়ায় জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

কথোপকথন ভাইরাল হওয়া যুব মহিলা লীগ নেত্রীর নাম জহুরা বেগম। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও একই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। অপরদিকে যুবদলের ওই নেতার নাম মাহবুবুর রহমান লাভলু। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব।

শনিবার (৯ নভেম্বর) দুই নেতার কথোপকথনের ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কথোপকথনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

জহুরা: আসসালামু আলাইকুম ভাই।

লাভলু: ওয়া আলাইকুম সালাম। ভালো আছেন?

জহুরা: কই ভালো ভাই? শেষ পর্যন্ত থাকবার দিলেন কই।

লাভলু: আপনে গড়ে এলাকার গামা উকিলে এগুলো করছে।

জহুরা: হ। গামা আর ইয়ে মানিক ভাই (বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর) বলে এগুলা জানেই।

লাভলু: মানিক ভাই আপনের বিষয়টা জানে না।

জহুরা: মামলার তালিকা বলে না দেখে দেয় না।থানায় দেওয়ার আগে বলে তালিকা দেইখা দে। এখন আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানি ফেরত দিবো? এখন এগুলোর মধ্যে মামলা দিয়া থুইলে কেমনে কী করি!

লাভলু: ঠিকই আছে। মামলার মধ্যে পইরা থাকলে আরেক ঝামেলা।

জহুরা: নাম কি চার্জশিট থেকে কাটা যাবো?

লাভলু: আপনে আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন। চার্জশিট থেকে আমি নাম কেটে দিমুনি।

জহুরা: এখন কোনো কিছু করা যাবো না?

লাভলু: এখন মানিক ভাইয়ের সঙ্গে বসে কথা বলতে হবো।

জহুরা: আমি তো এখন মামলার ভয়ো বের হতে পারছি না। উপজেলা থেকে কাগজপত্র সব আইসা পরতাছে। কোর্টে যাইতে বলতাছে সমন্বয়কারীরা। সবাই রিট করবো। এলাকায় যদি না থাকতে পারি, জনগণের কাজি যদি না করতে পারি, শুধুমাত্র উপজেলার চেয়ারম্যান থাকবো না। আর যে মেম্বাররা পলাতক তারা থাকতে পারবো না।

লাভলু: আপনার বলে রাস্তার ঠিকাদারি কাজ চলতাছে। ওইডা আমাকে দিয়া দেন, আমি করি।

জহুরা: আমারতো নিজস্ব কোনো কাজ নাই। ওইটা আমার না। এইল্লা মানসে বাড়তি কথা কয়। মাইসে ফেসবুকে দিছে কোটি কোটি টাকা কামাইছি। এই করছি, সেই করছি। দয়া করে মানিক সওদাগরের সাথে বইসেন তো দেখি।

লাভলু: ঠিক আছে। আপনে আমি কালকে বসমু।

জহুরা: আমিতো আপনাদের সাথেই কাজ করতে চাই মিলেমিশে।

তবে এ বিষয়ে যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও বকশীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়াম্যান জহুরা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে জহুরা ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবদলের সদস্যসচিব মাহবুবুর রহমান লাভলু।

তিনি বলেন, ‘একটি ছেলে আমাকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে মামা উনিতো (জহুরা বেগম) পলাতক। কোনো কাজ করতে পারছে না, একটু কথা বলেন। পরে আমি কথা বলি। আমি সহজ-সরল মানুষ ভাই। তিনি ফোনে কথা বলার শুরুতেই মামলা নিয়ে কথা বলে। মামলার বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই। কাজের জন্য তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

গত ৪ আগস্ট বকশীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ১ নভেম্বর ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন গোলাম মোস্তফা নামের এক বিএনপি নেতা। ওই মামলার ৩২ নম্বর আসামি যুব মহিলা লীগ নেত্রী জহুরা বেগম।