নতুন কালুরঘাট সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায়

  • আপডেট: ০৫:৫২:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
  • 36

চট্টগ্রামে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায় হবে বহুল প্রত্যাশিত নতুন কালুরঘাট সেতু। কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট পয়েন্টে কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অ্যাক্রোশ দ্য রিভার কর্ণফুলী শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর এটি হবে রেল কাম সড়ক সেতু।

শুক্রবার (২৮ জুন) এ তথ্য জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিয়া। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ইডিসিএফ তহবিল থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং ইডিপিএফ তহবিল থেকে ৯ কোটি মার্কিন ডলারের দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ঋণচুক্তি হয়। প্রকল্পে ইডিসিএফ তহবিলের আওতায় ঋণচুক্তির সুদের হার ধরা হয় ০.০১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর ৫ মাস। গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৪০ বছর ৫ মাসে তা পরিশোধ করতে হবে। অপরদিকে, ইডিপিএফ তহবিলের আওতায় ঋণচুক্তির সুদের হার ১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৭ বছর। গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৩০ বছরে তা পরিশোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিও মি. উন শি চুং ঋণচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর এবং সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিবসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সেতুর প্রকল্প পরিচালক সূত্র জানায়, আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর প্রকল্পটি একনেকে উঠবে। একনেকে অনুমোদনের এরপর পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ডিজাইন হবে। তারপর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। টেন্ডার আহ্বান করা হবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে। সেতুর মূল কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

কালুরঘাটে নির্মিতব্য রেলওয়ের নতুন সেতু প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার ভাষ্য, প্রকল্পটি ২০২৪ থেকে ২০৩০ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা হবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ নির্মাণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং আন্তআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে।

প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনে জানা যায়, বর্তমানে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপরে যে পুরনো সেতু রয়েছে তার ঠিক ৭০ মিটার উজানে এই প্রস্তাবিত নতুন সেতু নির্মিত হবে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার আর এতে নেভিগেশন হাইট বা উচ্চতা হবে ১২ দশমিক ২ মিটার আর এ জন্য দুই প্রান্তে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে ২ দশমিক ৫০ মিটার করে। সমীক্ষা অনুযায়ী নতুন সেতু হচ্ছে ৭০ ফুট। এর মধ্যে ৫০ ফুটে হবে ডাবল গেজ ও মিটার গেজ (এমজি ও বিজি) ডাবল ট্র্যাক। ২০ ফুটের মধ্যে দুই লেনের সড়ক পথ তৈরি করা হবে।

নির্মাণের পর এই সেতু দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন ২০ জোড়া ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রেলওয়ে। ফলস্বরূপ, কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) সংসদীয় আসনের সদস্য আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, চান্দগাঁও-বোয়ালখালীসহ চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতুর ঋণচুক্তির মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সদিচ্ছায় অবশেষে কালুরঘাট সেতু নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সাথে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। মোট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হবে রেল কাম সড়ক সেতুটি। ফলে এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে গেল বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতু।

তিনি বলেন, সেতুটি আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে হলেও রেল কাম সড়ক সেতুটি নির্মাণের মধ্যদিয়ে দেশের পর্যটনসহ এই রেলপথ যোগাযোগ ও দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই একটি মাত্র সেতুর জন্য আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ যেমন বছরের পর বছর অধীর আগ্রহে ছিলেন, তেমনি রেল কাম সড়ক সেতুটি দেশের পর্যটন এবং অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তির মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণ হতে যাচ্ছে। এজন্য আমি আমার নির্বাচনী এলাকাসহ চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আজকের এই খুশির খবরে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষসহ চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে আনন্দের ঢেউ বইছে।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।

১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। পরের বছর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা।

২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত এই সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে এটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল।

প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর স্থলে আরেকটি নতুন রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দারা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আলাদা ট্রেন চালুর দাবিও জানিয়ে আসছে চট্টগ্রামের মানুষ।

Tag :

নতুন কালুরঘাট সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায়

আপডেট: ০৫:৫২:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

চট্টগ্রামে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায় হবে বহুল প্রত্যাশিত নতুন কালুরঘাট সেতু। কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট পয়েন্টে কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অ্যাক্রোশ দ্য রিভার কর্ণফুলী শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর এটি হবে রেল কাম সড়ক সেতু।

শুক্রবার (২৮ জুন) এ তথ্য জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিয়া। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ইডিসিএফ তহবিল থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং ইডিপিএফ তহবিল থেকে ৯ কোটি মার্কিন ডলারের দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ঋণচুক্তি হয়। প্রকল্পে ইডিসিএফ তহবিলের আওতায় ঋণচুক্তির সুদের হার ধরা হয় ০.০১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর ৫ মাস। গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৪০ বছর ৫ মাসে তা পরিশোধ করতে হবে। অপরদিকে, ইডিপিএফ তহবিলের আওতায় ঋণচুক্তির সুদের হার ১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৭ বছর। গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৩০ বছরে তা পরিশোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিও মি. উন শি চুং ঋণচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর এবং সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিবসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সেতুর প্রকল্প পরিচালক সূত্র জানায়, আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর প্রকল্পটি একনেকে উঠবে। একনেকে অনুমোদনের এরপর পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ডিজাইন হবে। তারপর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। টেন্ডার আহ্বান করা হবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে। সেতুর মূল কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

কালুরঘাটে নির্মিতব্য রেলওয়ের নতুন সেতু প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার ভাষ্য, প্রকল্পটি ২০২৪ থেকে ২০৩০ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা হবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ নির্মাণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং আন্তআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে।

প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনে জানা যায়, বর্তমানে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপরে যে পুরনো সেতু রয়েছে তার ঠিক ৭০ মিটার উজানে এই প্রস্তাবিত নতুন সেতু নির্মিত হবে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার আর এতে নেভিগেশন হাইট বা উচ্চতা হবে ১২ দশমিক ২ মিটার আর এ জন্য দুই প্রান্তে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে ২ দশমিক ৫০ মিটার করে। সমীক্ষা অনুযায়ী নতুন সেতু হচ্ছে ৭০ ফুট। এর মধ্যে ৫০ ফুটে হবে ডাবল গেজ ও মিটার গেজ (এমজি ও বিজি) ডাবল ট্র্যাক। ২০ ফুটের মধ্যে দুই লেনের সড়ক পথ তৈরি করা হবে।

নির্মাণের পর এই সেতু দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন ২০ জোড়া ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রেলওয়ে। ফলস্বরূপ, কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) সংসদীয় আসনের সদস্য আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, চান্দগাঁও-বোয়ালখালীসহ চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতুর ঋণচুক্তির মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সদিচ্ছায় অবশেষে কালুরঘাট সেতু নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সাথে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। মোট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হবে রেল কাম সড়ক সেতুটি। ফলে এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে গেল বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতু।

তিনি বলেন, সেতুটি আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে হলেও রেল কাম সড়ক সেতুটি নির্মাণের মধ্যদিয়ে দেশের পর্যটনসহ এই রেলপথ যোগাযোগ ও দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই একটি মাত্র সেতুর জন্য আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ যেমন বছরের পর বছর অধীর আগ্রহে ছিলেন, তেমনি রেল কাম সড়ক সেতুটি দেশের পর্যটন এবং অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তির মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণ হতে যাচ্ছে। এজন্য আমি আমার নির্বাচনী এলাকাসহ চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আজকের এই খুশির খবরে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষসহ চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে আনন্দের ঢেউ বইছে।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।

১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। পরের বছর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা।

২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত এই সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে এটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল।

প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর স্থলে আরেকটি নতুন রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দারা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আলাদা ট্রেন চালুর দাবিও জানিয়ে আসছে চট্টগ্রামের মানুষ।