করোনাভাইরাস কি তৈরি করেছিল চীন? কোনও গবেষণা করতে গিয়ে দুর্ঘটনাক্রমে ছড়িয়ে পড়েছিল? নাকি জৈব অস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন চীনা বিজ্ঞানীরা? কোভিড মহামারির দাপট কমে গেলেও, চীনের দিক থেকে সন্দেহ দূর হয়নি। আর এবার আর কোনও লুকোচুরি নয়। একেবারে খোলাখুলি এক মারাত্মক ভাইরাস তৈরি করলেন চীনের বিজ্ঞানীরা। যে ভাইরাস সংক্রমণে মাত্র তিন দিনে মরে যাবে মানুষ!
হেবেই মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে এই গবেষণা হয়েছে। ইবোলা ভাইরাসের অনুকরণে, ইবোলা ভাইরাসের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করেই, এই সিন্থেটিক ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছে। তবে কোনও জৈব অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে নয়, ভাইরাস ও অন্যান্য রোগজীবাণু সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যেই এই সিন্থেটিক ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের। সায়েন্স ডাইরেক্ট পত্রিকায় এই গবেষণার ফল প্রকাশ হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই গবেষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই ধরনের গবেষণা বিশ্বব্যাপী মহামারি ডেকে আনতে পারে।
ইবোলা ভাইরাস নিয়ে গবেষণার জন্য অত্যন্ত নিরাপদ গবেষণাগার প্রয়োজন। বায়োসেফটি লেভেল ৪ ছাড়া, এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা যায় না। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ গবেষণাগারেই বায়োসেফটি লেভেল -২ নিরাপত্তা রয়েছে। এই অবস্থায় যাতে কম নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও ইবোলা নিয়ে গবেষণা করা যায়, সেই লক্ষ্য়েই এই সিন্থেটি ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। এর জন্য, ভেসিকুলার স্টোমাটাইটিস ভাইরাস বা ভিএসভি নামে পরিচিত একটি ভাইরাস ব্যবহার করেছিলেন তারা। ভিএসভি-র গঠনে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে সেটিকে, ইবোলা ভাইরাসের গ্লাইকোপ্রোটিন বহন করার উপয়োগী করে তুলেছিলেন।
এরপর, ওই পরিবর্তিত ভিএসভি দিয়ে কয়েকটি সিরিয় হ্যামস্টারের উপর পরীক্ষা চালিয়েছিলেন হেবেই ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। হ্যামস্টার, ইঁদুরের মতো এক প্রকার প্রাণী। ইনজেকশনের মাধ্যমে ওই পরিবর্তিত ভাইরাসটি পাঁচটি মহিলা এবং পাঁচটি পুরুষ হ্যামস্টারের শরীরে প্রবেশ করান হয়েছিল। মানব ইবোলা রোগীদের মতোই গুরুতর উপসর্গ দেখা যায় হ্যামস্টারগুলির শরীরে। ধীরে ধীরে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হতে শুরু করে। তিনদিনের মধ্যে প্রাণীগুলির মৃত্যু হয়েছিল। কিছু কিছু হ্যামস্টারের চোখেও সমস্যা দেখা দেয়। তাদের দৃষ্টিশক্তিকে ক্রমে দুর্বল হয়ে যায়। প্রসঙ্গত, ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ বা ইভিডি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি হয়।
এই গবেষণার ইবোলার চিকিৎসার সহায়ক হবে ঠিকই। তবে, এই গবেষণাকে কেন্দ্র করে নৈতিক এবং নিরাপত্তাগত উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশেও এই ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাস তৈরি করা উচিত কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে। দুর্ঘটনাক্রমে ভাইরাসটি বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কোনও খারাপ হাতে পড়লে, ভাইরাসটির অপব্যবহারও হতে পারে।