গাজীপুর মাটি খোঁড়ার সময় কলসিতে মিলল ১৬টি আরজেএস গ্রেনেড

  • আপডেট: ০৩:০২:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
  • 35

গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমির মাটি খননের সময় ১৬টি আরজেএস গ্রেনেড পাওয়া গেছে। সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে পরিত্যক্ত অবস্থায় গ্রেনেডগুলো উদ্ধার করা হয়। পরে বিকেলে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে।

এ সময় বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী আবুল কাশেম বাড়ি নির্মাণ করার জন্য মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবীথি (জোড়পুকুরপাড়) এলাকায় সাড়ে ৩-৪ বছর আগে তিন কাঠা জমি ক্রয় করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে ফেলে রাখেন। দুই মাস আগে তিনি দেশে ফিরে উক্ত জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সোমবার সকালে এখানে স্থানীয় শ্রমিকরা মাটি খনন কাজ শুরু করে। সকাল ৯টার দিকে মাটি খনন করার পর গর্তের মধ্যে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। এ সময় কলসটি আঘাত লেগে ভেঙে গেলে কলসের ভেতর গ্রেনেড সদৃশ কয়েকটি বস্তু দেখা যায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে পরীক্ষা করে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় এগুলো পরিত্যক্ত গ্রেনেড। পরে নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সীমানা ঘেরা জমির গেটে তালা দিয়ে রাখা হয়।

বাড়ির মালিক আবুল কাশেম বলেন, আমি ৩-৪ বছর আগে জমিটি ক্রয় করি। পরে এখানে মাটি ভরাট করে সীমানা প্রাচীর দেই। দুই মাস আগে দেশে ফিরে ৬ তলা বাড়ি করার কাজ শুরু করি। সোমবার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাটি খোঁড়ার সময় প্রথমে একটি মাটির কলস পাওয়া যায়। পরে কোঁদালের আঘাতে কলসটি ভেঙে গেলে গ্রেনেডের মতো বস্তু দেখা যায়। শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি আমাকে জানায়। পরে আমি প্রথমেই ৯৯৯ ফোন দেই। পরে নিজে গাজীপুর সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ রাফিউল করিম জানান, গ্রেনেড সদৃশ কিছু বস্তু পাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করে এগুলো বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু বলে ধারণা করে। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং জায়গাটির গেটে তালা দেওয়া হয়। পাওয়া যাওয়া বস্তুগুলো পরীক্ষা করার জন্য ঢাকার বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে ঢাকা থেকে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১৯ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা দুটি অত্যাধুনিক রোবট, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির লোকজন ও উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে কলসের ভেতর থেকে ১৬টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে এগুলো নিষ্ক্রিয়করণ শুরু হয়। এ সময় হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ স্থানে গ্রেনেডগুলোর পর পর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। পাশেই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়।

গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান।

 

তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় মাটি খননের সময় বিস্ফোরক জাতীয় কিছু একটা পাওয়া গেছে- এমন খবর পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত আমরা আমাদের টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি। ঘটনাস্থলে আমরা এসে দেখতে পেলাম একটি মটকার (মাটির কলসি) ভেতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড, যাকে আরজেএস গ্রেনেড বলা হয়, এ ধরনের গ্রেনেড রয়েছে। এ কারণে এ জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যে কারণে আমরা আমাদের আরওভি রোবটের (রিমোটলি অপারেটর ভেহিকেল) মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকটি গ্রেনেড দেখার চেষ্টা করি। আমরা দেখার চেষ্টা করি গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত আছে কিনা। কারণ গ্রেনেডের পিন খুলে গেলে এটি খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

মাহমুদুজ্জামান আরও বলেন, পরবর্তীতে আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড আলাদা করতে সক্ষম হই। পরে আমাদের টিমের দুইজন সদস্য বোম্ব শ্যুট পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যেকটি গ্রেনেড আমরা আলাদা আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হই।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, আরজেএস গ্রেনেড এটা আমাদের দেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে। এগুলো আমরা নিয়ে যাব, এটা আমরা ফরেনসিক চেক করব, এটা আমরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠাবো। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাতে পারবেন এটি কবে কার গ্রেনেড।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুজ্জামান বলেন, প্রত্যেকটি গ্রেনেড লাইভ অবস্থায় ছিল। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। গ্রেনেডগুলো একটি মটকার ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। এগুলো সেপারেট করা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অনেক আগের ছিল একটা আরেকটার সাথে লেগেছিল, তবু আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড ডিসপোজ করতে সক্ষম হয়েছি।

Tag :

গাজীপুর মাটি খোঁড়ার সময় কলসিতে মিলল ১৬টি আরজেএস গ্রেনেড

আপডেট: ০৩:০২:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমির মাটি খননের সময় ১৬টি আরজেএস গ্রেনেড পাওয়া গেছে। সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে পরিত্যক্ত অবস্থায় গ্রেনেডগুলো উদ্ধার করা হয়। পরে বিকেলে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে।

এ সময় বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী আবুল কাশেম বাড়ি নির্মাণ করার জন্য মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবীথি (জোড়পুকুরপাড়) এলাকায় সাড়ে ৩-৪ বছর আগে তিন কাঠা জমি ক্রয় করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে ফেলে রাখেন। দুই মাস আগে তিনি দেশে ফিরে উক্ত জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সোমবার সকালে এখানে স্থানীয় শ্রমিকরা মাটি খনন কাজ শুরু করে। সকাল ৯টার দিকে মাটি খনন করার পর গর্তের মধ্যে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। এ সময় কলসটি আঘাত লেগে ভেঙে গেলে কলসের ভেতর গ্রেনেড সদৃশ কয়েকটি বস্তু দেখা যায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে পরীক্ষা করে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় এগুলো পরিত্যক্ত গ্রেনেড। পরে নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সীমানা ঘেরা জমির গেটে তালা দিয়ে রাখা হয়।

বাড়ির মালিক আবুল কাশেম বলেন, আমি ৩-৪ বছর আগে জমিটি ক্রয় করি। পরে এখানে মাটি ভরাট করে সীমানা প্রাচীর দেই। দুই মাস আগে দেশে ফিরে ৬ তলা বাড়ি করার কাজ শুরু করি। সোমবার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাটি খোঁড়ার সময় প্রথমে একটি মাটির কলস পাওয়া যায়। পরে কোঁদালের আঘাতে কলসটি ভেঙে গেলে গ্রেনেডের মতো বস্তু দেখা যায়। শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি আমাকে জানায়। পরে আমি প্রথমেই ৯৯৯ ফোন দেই। পরে নিজে গাজীপুর সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ রাফিউল করিম জানান, গ্রেনেড সদৃশ কিছু বস্তু পাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করে এগুলো বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু বলে ধারণা করে। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং জায়গাটির গেটে তালা দেওয়া হয়। পাওয়া যাওয়া বস্তুগুলো পরীক্ষা করার জন্য ঢাকার বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে ঢাকা থেকে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১৯ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা দুটি অত্যাধুনিক রোবট, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির লোকজন ও উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে কলসের ভেতর থেকে ১৬টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে এগুলো নিষ্ক্রিয়করণ শুরু হয়। এ সময় হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ স্থানে গ্রেনেডগুলোর পর পর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। পাশেই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়।

গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান।

 

তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় মাটি খননের সময় বিস্ফোরক জাতীয় কিছু একটা পাওয়া গেছে- এমন খবর পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত আমরা আমাদের টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি। ঘটনাস্থলে আমরা এসে দেখতে পেলাম একটি মটকার (মাটির কলসি) ভেতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড, যাকে আরজেএস গ্রেনেড বলা হয়, এ ধরনের গ্রেনেড রয়েছে। এ কারণে এ জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যে কারণে আমরা আমাদের আরওভি রোবটের (রিমোটলি অপারেটর ভেহিকেল) মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকটি গ্রেনেড দেখার চেষ্টা করি। আমরা দেখার চেষ্টা করি গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত আছে কিনা। কারণ গ্রেনেডের পিন খুলে গেলে এটি খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

মাহমুদুজ্জামান আরও বলেন, পরবর্তীতে আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড আলাদা করতে সক্ষম হই। পরে আমাদের টিমের দুইজন সদস্য বোম্ব শ্যুট পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যেকটি গ্রেনেড আমরা আলাদা আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হই।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, আরজেএস গ্রেনেড এটা আমাদের দেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে। এগুলো আমরা নিয়ে যাব, এটা আমরা ফরেনসিক চেক করব, এটা আমরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠাবো। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাতে পারবেন এটি কবে কার গ্রেনেড।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুজ্জামান বলেন, প্রত্যেকটি গ্রেনেড লাইভ অবস্থায় ছিল। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। গ্রেনেডগুলো একটি মটকার ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। এগুলো সেপারেট করা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অনেক আগের ছিল একটা আরেকটার সাথে লেগেছিল, তবু আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড ডিসপোজ করতে সক্ষম হয়েছি।