জাপান, দঃকোরিয়াকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে দেবে যুক্তরাষ্ট্র?

  • আপডেট: ০৫:০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪
  • 31

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমেরিকা উত্তর কোরিয়াকে এমন একটি বিপদজ্জনক দৈত্য হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়া। এই আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আমেরিকা মূলত এই দুটি দেশের নিরাপত্তা এবং সামরিক ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের নেতারা সম্প্রতি চীনের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুন: প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। বলা যায় বহু বছর ধরে শীত সম্পর্ক কাটিয়ে ওঠার পর চীনই হতে যাচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য শরীক দেশ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমেরিকার অনুমতির ওপর চীনের সাথে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের বিষয়টি নির্ভর করছে।

গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে এই প্রথম চীনের সাথে ওই দুই দেশের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী নেতা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং উপস্থিত ছিলেন।

এই তিন দেশের নেতার আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত পণ্য সরবরাহ চেইন রক্ষা করা, বাণিজ্যের প্রসার, বার্ধক্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় এবং সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকানোর বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করা। এ ছাড়া, তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়া সমস্যার মতো আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।

জাপান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা কার্যকর সহযোগিতা সম্প্রসারণে একমত হয়েছে যাতে তাদের জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু এর জন্যও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আমেরিকার কাছ থেকে মতামত নেয়া বা অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

এদিকে, আমেরিকার কিছু মিডিয়া চীন এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকির বিষয়টি বেশি বেশি করে তুলে ধরে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে যাতে তারা চীনের সাথে গাটছাট না বাধে।

উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা এক নিবন্ধে উত্তর কোরিয়ার হুমকি, চীনে গণতন্ত্রের সমস্যা, মাওয়ের পুন:উত্থান, চীনে পুঁজির সংকট এবং এর ফলে নানা সমস্যার মতো শিরোনাম তুলে ধরে খবর প্রকাশ করছে। এমনভাবে তারা প্রচার চালাচ্ছে যাতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া চীনের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকে ক্ষতিকর বলে মনে করে।

অবশ্য, এটা স্পষ্ট যে চীন শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে আমেরিকার সামরিক বাহিনীর হুমকি মোকাবেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে দেখে এবং এটাও মনে করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া হস্তক্ষেপ করবে না। কারণ মূলত উত্তর কোরিয়ার সেরকম সক্ষমতা নেই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমেরিকা উত্তর কোরিয়াকে এমন একটি বিপজ্জনক দৈত্য হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে যার উদ্দেশ্য জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়া এবং এই প্রচারের মাধ্যমে তারা এই দুটি দেশের নিরাপত্তা এবং সামরিক ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, চীন বিশ্বাস করে যে সমস্যাটি একটি রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক পন্থায় এর সমাধান করা উচিত।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে উস্কানি দিয়ে আমেরিকাও এ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া ও চীনের কথিত হুমকির কথা বলে মহড়া শুরু করেছে এবং মার্কিন অস্ত্র নির্মাণ কোম্পানিগুলোর পকেট ভারি করার ব্যবস্থা করেছে।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮০ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। চীন ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলার কথা বলে আমেরিকা এসব সেনা মোতায়েন রেখেছে।

আমেরিকার মতো এই দুটি দেশের গত কয়েক শতাব্দীতে অন্য কোনো দেশে আগ্রাসন চালানোর কোনো ইতিহাস নেই। কিন্তু জাপানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিবিদদের একাংশের মতে, তারা আমেরিকা ও পশ্চিমাদের ব্যাপারে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং এ কারণে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। সূত্র: পার্সটুডে।

Tag :

জাপান, দঃকোরিয়াকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে দেবে যুক্তরাষ্ট্র?

আপডেট: ০৫:০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমেরিকা উত্তর কোরিয়াকে এমন একটি বিপদজ্জনক দৈত্য হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়া। এই আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আমেরিকা মূলত এই দুটি দেশের নিরাপত্তা এবং সামরিক ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের নেতারা সম্প্রতি চীনের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুন: প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। বলা যায় বহু বছর ধরে শীত সম্পর্ক কাটিয়ে ওঠার পর চীনই হতে যাচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য শরীক দেশ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমেরিকার অনুমতির ওপর চীনের সাথে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের বিষয়টি নির্ভর করছে।

গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে এই প্রথম চীনের সাথে ওই দুই দেশের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী নেতা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং উপস্থিত ছিলেন।

এই তিন দেশের নেতার আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত পণ্য সরবরাহ চেইন রক্ষা করা, বাণিজ্যের প্রসার, বার্ধক্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় এবং সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকানোর বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করা। এ ছাড়া, তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়া সমস্যার মতো আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।

জাপান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা কার্যকর সহযোগিতা সম্প্রসারণে একমত হয়েছে যাতে তাদের জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু এর জন্যও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আমেরিকার কাছ থেকে মতামত নেয়া বা অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

এদিকে, আমেরিকার কিছু মিডিয়া চীন এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকির বিষয়টি বেশি বেশি করে তুলে ধরে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে যাতে তারা চীনের সাথে গাটছাট না বাধে।

উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা এক নিবন্ধে উত্তর কোরিয়ার হুমকি, চীনে গণতন্ত্রের সমস্যা, মাওয়ের পুন:উত্থান, চীনে পুঁজির সংকট এবং এর ফলে নানা সমস্যার মতো শিরোনাম তুলে ধরে খবর প্রকাশ করছে। এমনভাবে তারা প্রচার চালাচ্ছে যাতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া চীনের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকে ক্ষতিকর বলে মনে করে।

অবশ্য, এটা স্পষ্ট যে চীন শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে আমেরিকার সামরিক বাহিনীর হুমকি মোকাবেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে দেখে এবং এটাও মনে করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া হস্তক্ষেপ করবে না। কারণ মূলত উত্তর কোরিয়ার সেরকম সক্ষমতা নেই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমেরিকা উত্তর কোরিয়াকে এমন একটি বিপজ্জনক দৈত্য হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে যার উদ্দেশ্য জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়া এবং এই প্রচারের মাধ্যমে তারা এই দুটি দেশের নিরাপত্তা এবং সামরিক ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, চীন বিশ্বাস করে যে সমস্যাটি একটি রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক পন্থায় এর সমাধান করা উচিত।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে উস্কানি দিয়ে আমেরিকাও এ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া ও চীনের কথিত হুমকির কথা বলে মহড়া শুরু করেছে এবং মার্কিন অস্ত্র নির্মাণ কোম্পানিগুলোর পকেট ভারি করার ব্যবস্থা করেছে।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮০ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। চীন ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলার কথা বলে আমেরিকা এসব সেনা মোতায়েন রেখেছে।

আমেরিকার মতো এই দুটি দেশের গত কয়েক শতাব্দীতে অন্য কোনো দেশে আগ্রাসন চালানোর কোনো ইতিহাস নেই। কিন্তু জাপানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিবিদদের একাংশের মতে, তারা আমেরিকা ও পশ্চিমাদের ব্যাপারে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং এ কারণে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। সূত্র: পার্সটুডে।