আন্দোলন ও সহিংসতায় বিরক্ত হয়ে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে চীন সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা (মুক্তিযোদ্ধারা) দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবনপণ লড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় কীভাবে? মুক্তিযুদ্ধ তাদের এখন ভালো লাগে না।
কোটা সংস্কার প্রশ্নে আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা নেই, সহিংসতা করলে ছাড় নয় বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
চীন-ভারত সফর নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনাকে মানসিক অসুস্থতা বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন আমাদেরকে কিছুই দেয় নাই, ভারতের সঙ্গে আমরা গোলামি চুক্তি স্বাক্ষর করে এসেছি; কিছু মানুষের মুখ থেকে এগুলো আমাদেরকে নিয়মিত শুনতে হচ্ছে। এগুলো হলো সম্পূর্ণ মানসিক অসুস্থতা, এ ছাড়া কেউ সফর নিয়ে অন্য কোনো প্রশ্ন করতে পারেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন সফরে ২১টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়েছে। আমি জানি না এরপরও যারা সমালোচনা করছেন, তারা জেনে বুঝে করছেন কি-না। কিছুদিন আগেও ভারত সফরে আমরা দেশ বিক্রির চুক্তি করে আসছি, এমনটা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন আমি এসবকে খুব বেশি একটা গুরুত্ব দিই না। কারণ, আমি বাংলাদেশে আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রেই নেগেটিভ কথা শুনে আসছি। এতসব গুজব আমাকে নিয়ে হয়েছে, যেগুলো আমি শুনে আসছি, এসব নিয়ে আর কিছুই বলার নেই। যারা বলছে বলুক তাদেরকে বলতে দিন।
সরকারি চাকরিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নিয়মের যেসব ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে সেগুলোর সূচনা বিএনপির আমলে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জিয়াউর রহমান এসব অনিয়মের শুরু করেন এবং খালেদা জিয়ার আমলে তা গতি পায় বলে দাবি করেন সরকারপ্রধান।
বিএনপির আমলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের শুরু দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ বিসিএস হয় ২০০২ সালে। তখন পরীক্ষা-টরিক্ষা হতো না। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা যেতো। ঢাকা কলেজে একটা বিশেষ কামরা ছিল। সেখানে বসে পরীক্ষা দিয়ে তাদের লোকজন চাকরি পেত। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনিয়ম তখন থেকেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় বলা হয়, এসব ধরতে গেলে ইমেজ নষ্ট হবে। আমি এটা মানি না। অন্যায় অবিচার ধরবই। তাদের ধরতেই হবে। ছেড়ে দিলে তো চলতেই থাকবে।
সরকার আন্তরিক বলেই সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দিন ধরে লেগে থেকে থেকে ধরতে পেরেছি।
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে কেউ ভেনিফিশিয়ারি হলে তাদেরও ধরা হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে দেবে কে। অমুকের কাছে বিক্রি করেছি বললে এবং প্রমাণ করতে পারলে ধরা যাবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে উভয়ই অপরাধী। যারা ফাঁস করে আর যারা কিনে উভয়ই সমান অপরাধী। সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।