১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মঙ্গলের লাল মাটিতে সালফারের সন্ধান চাঞ্চল্য বিজ্ঞান মহলে

  • আপডেট: ০৬:৫১:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
  • 22

এ বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে অপার রহস্যের সমুদ্র। সেই মহাসমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে হয়ত কণামাত্রই অনুসন্ধান করতে পেরেছে মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার। তবে সমুদ্রে পাড়ি জমানোর অদম্য সাহসে কোথাও খামতি নেই। মহাশূন্যের গভীর রহস্যের সিঁড়িতে পা রেখেই এবার মিলল হলদে গুপ্তধনের সন্ধান। পৃথিবীর প্রতিবেশী মঙ্গলে আবিষ্কৃত এই অদ্ভুত ‘ক্রিস্টাল’ দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত নাসার বৈজ্ঞানিক-মহল। এই হলুদ ক্রিস্টাল আসলে সালফার।

মঙ্গলের মাটিতে সুপ্ত রহস্যের সন্ধান পেতে সেখানে কিউরিয়োসিটি রোভার পাঠিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। লাল মাটিতে তল্লাশি চালিয়ে হলদে রংয়ের বিশুদ্ধ সালফারের খোঁজ পেল সেই যান। এই সালফারের খোঁজ পাওয়া বড়সড় চমক এই কারণেই যে জল ব্যতীত এই ধরনের ক্রিস্টাল তৈরি হওয়া কার্যত অসম্ভব। কিউরিয়োসিটি প্রোজেক্টের বিজ্ঞানী অশ্বিনী বাসওয়াড়া বলেন, এমন কিছু যে পাওয়া যাতে পারে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না আমাদের। আমার মনে হয়, মঙ্গলের মাটিতে এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আবিষ্কার এই সালফার।

নাসার তরফে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিনের মতো গত ৩০ মে মঙ্গলের মাটি থেকে একাধিক ছবি পাঠায় কিউরিয়োসিটি। যেখানে দেখা যায় রোভারের যাওয়ার পর একটি পাথরের টুকরো ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। ছবিটি জুম করার পর রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে যান বিজ্ঞানীরা। দেখা যায় হলুদ রংয়ের ক্রিস্টাল ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায়, ওগুলি আসলে খাঁটি সালফার। বাসওয়াড়া বলেন, সালফারের যেখানে থাকে সেই অংশের পাথর সাধারণত ভীষণ সুন্দর দেখতে হয়। তা হয় চকচকে ও স্বচ্ছ। বিজ্ঞানীদের দাবি, মঙ্গলের মাটিতে সালফেট পাওয়া অতি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু সেখানে যে সালফার পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে আমাদের কোনও ধারণা ছিল না। হতে পারে ওই অঞ্চলে আরও প্রচুর পরিমাণ সালফার রয়েছে।

তবে শুধু মঙ্গল নয়, পৃথিবীতেও অত্যন্ত দুর্লভ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় এই সালফার। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখীর বিস্ফোরণ-স্থলে এই জিনিসের সন্ধান মেলে। মঙ্গলের মাটিতে সালফার আবিষ্কার কতখানি দুর্লভ বিষয় তা বোঝাতে বাসওয়াড়া বলেন, ওখানে সালফার আবিষ্কার অনেকটা মরুভূমির মধ্যে জলের সন্ধান পাওয়ার মতো। উল্লেখ্য, মঙ্গলের মাটিতে কখনও কি প্রাণের সন্ধান ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দীর্ঘ দিন ধরে তৎপর বিশ্বের বিজ্ঞান মহল। সেই সময়ে এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে কোনওকালে এই লালমাটির বুকে প্রাণ থাকা একেবারেই অসম্ভব বিষয় ছিল না। কারণ, সালফারের সন্ধান মানে সেখানে কোনও সময় জলেরও অস্তিত্ব ছিল। জলের অর্থ জীবন।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, সালফেটস তখনই তৈরি হয় যখন সালফার জলে অন্যান্য খনিজের সঙ্গে মেশে এবং তা বাষ্পীভূত হয়। এর পর সেখানে পড়ে থাকে সালফেট। বৈজ্ঞানিকদের দাবি এই অনুসন্ধান মঙ্গলের মাটিতে প্রাণের অস্তিত্বের রহস্যের জট খুলে দিতে পারে। জীবনের জন্য সালফার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ফলে লালগ্রহে তার সন্ধান সেখানে প্রাণ থাকারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

মঙ্গলের লাল মাটিতে সালফারের সন্ধান চাঞ্চল্য বিজ্ঞান মহলে

আপডেট: ০৬:৫১:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

এ বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে অপার রহস্যের সমুদ্র। সেই মহাসমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে হয়ত কণামাত্রই অনুসন্ধান করতে পেরেছে মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার। তবে সমুদ্রে পাড়ি জমানোর অদম্য সাহসে কোথাও খামতি নেই। মহাশূন্যের গভীর রহস্যের সিঁড়িতে পা রেখেই এবার মিলল হলদে গুপ্তধনের সন্ধান। পৃথিবীর প্রতিবেশী মঙ্গলে আবিষ্কৃত এই অদ্ভুত ‘ক্রিস্টাল’ দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত নাসার বৈজ্ঞানিক-মহল। এই হলুদ ক্রিস্টাল আসলে সালফার।

মঙ্গলের মাটিতে সুপ্ত রহস্যের সন্ধান পেতে সেখানে কিউরিয়োসিটি রোভার পাঠিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। লাল মাটিতে তল্লাশি চালিয়ে হলদে রংয়ের বিশুদ্ধ সালফারের খোঁজ পেল সেই যান। এই সালফারের খোঁজ পাওয়া বড়সড় চমক এই কারণেই যে জল ব্যতীত এই ধরনের ক্রিস্টাল তৈরি হওয়া কার্যত অসম্ভব। কিউরিয়োসিটি প্রোজেক্টের বিজ্ঞানী অশ্বিনী বাসওয়াড়া বলেন, এমন কিছু যে পাওয়া যাতে পারে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না আমাদের। আমার মনে হয়, মঙ্গলের মাটিতে এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আবিষ্কার এই সালফার।

নাসার তরফে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিনের মতো গত ৩০ মে মঙ্গলের মাটি থেকে একাধিক ছবি পাঠায় কিউরিয়োসিটি। যেখানে দেখা যায় রোভারের যাওয়ার পর একটি পাথরের টুকরো ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। ছবিটি জুম করার পর রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে যান বিজ্ঞানীরা। দেখা যায় হলুদ রংয়ের ক্রিস্টাল ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায়, ওগুলি আসলে খাঁটি সালফার। বাসওয়াড়া বলেন, সালফারের যেখানে থাকে সেই অংশের পাথর সাধারণত ভীষণ সুন্দর দেখতে হয়। তা হয় চকচকে ও স্বচ্ছ। বিজ্ঞানীদের দাবি, মঙ্গলের মাটিতে সালফেট পাওয়া অতি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু সেখানে যে সালফার পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে আমাদের কোনও ধারণা ছিল না। হতে পারে ওই অঞ্চলে আরও প্রচুর পরিমাণ সালফার রয়েছে।

তবে শুধু মঙ্গল নয়, পৃথিবীতেও অত্যন্ত দুর্লভ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় এই সালফার। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখীর বিস্ফোরণ-স্থলে এই জিনিসের সন্ধান মেলে। মঙ্গলের মাটিতে সালফার আবিষ্কার কতখানি দুর্লভ বিষয় তা বোঝাতে বাসওয়াড়া বলেন, ওখানে সালফার আবিষ্কার অনেকটা মরুভূমির মধ্যে জলের সন্ধান পাওয়ার মতো। উল্লেখ্য, মঙ্গলের মাটিতে কখনও কি প্রাণের সন্ধান ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দীর্ঘ দিন ধরে তৎপর বিশ্বের বিজ্ঞান মহল। সেই সময়ে এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে কোনওকালে এই লালমাটির বুকে প্রাণ থাকা একেবারেই অসম্ভব বিষয় ছিল না। কারণ, সালফারের সন্ধান মানে সেখানে কোনও সময় জলেরও অস্তিত্ব ছিল। জলের অর্থ জীবন।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, সালফেটস তখনই তৈরি হয় যখন সালফার জলে অন্যান্য খনিজের সঙ্গে মেশে এবং তা বাষ্পীভূত হয়। এর পর সেখানে পড়ে থাকে সালফেট। বৈজ্ঞানিকদের দাবি এই অনুসন্ধান মঙ্গলের মাটিতে প্রাণের অস্তিত্বের রহস্যের জট খুলে দিতে পারে। জীবনের জন্য সালফার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ফলে লালগ্রহে তার সন্ধান সেখানে প্রাণ থাকারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।