২ মাস আগে তেহরানের গেস্ট হাউসে রাখা বোমায় নিয়াকে হত্যা

  • আপডেট: ০৪:০০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪
  • 45

ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে কোনো ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হত্যা করা হয়নি। বরং ইরানের রাজধানী তেহরানের যে গেস্ট হাউসের যে কক্ষে তিনি নিহত হন, সেখানে একটি অত্যাধুনিক, দূর-নিয়ন্ত্রিত বোমা প্রায় দুই মাস আগে রাখা হয়েছিল। সেটিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েই বুধবার এক দেহরক্ষীসহ হানিয়াকে হত্যা করা হয় বলে বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে এক আমেরিকান এবং সাত মধ্যপ্রাচ্য কর্মকর্তার উদ্ধৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) দুজন সদস্যও রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে আইআরজিসির তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হানিয়া নিহত হয়েছেন। ওই হামলায় ইসরাইল দায়ী বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন ইরানি কর্মকর্তা হানিয়ার হত্যাকে আইআরজিসির জন্য ‌’ভয়াবহ লজ্জা’ হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ ওই গেস্ট হাউসটি পরিচালনা করে আইআরজিসি। সেখানে হানিয়া এবং অন্যান্য অতিথি অবস্থান করছিলেন।

ইরানের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে তেহরান গিয়েছিলেন হানিয়া। ইসরাইল এই হামলার সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। তবে ইরান বলেছে, তারা ইসরাইলের ওপর প্রতিশোধ নেবে।

আইআরজিসির কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমসে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে ভবনটির জানাল এবং কম্পাউন্ডের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খোদ ভবনটির ক্ষতি হয়েছে ন্যূনতম।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি বিশ্লেষণ করে টাইমস বলেছে, ক্ষতির মাত্রা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এমনটি হয়নি। তাছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রের পক্ষে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এড়ানো কঠিন হতো।

বিস্ফোরণে হানিয়ার পাশের কক্ষেও তেমন ক্ষতি হয়নি। সেখানে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ নাখালেহ অবস্থান করছিলেন।

পত্রিকাটি জানায়, ‘নিখুঁত পরিকল্পনায়’ হানিয়াকে হত্যা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তারা বলেন, কয়েক মাসের পরিকল্পনা ও ব্যাপক নজরদারির মাধ্যমেই এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব।

দুই ইরানি কর্মকর্তা বলেন, বোমাটি হানিয়ার কক্ষে কখন স্থাপন করা হয়, কিভাবে করা হয়, তা তারা বুঝতে পারছেন না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অপর পাঁচ কর্মকর্তা বলেন, প্রায় দুই মাস আগে তা করা হয়।

টাইমসের খবরে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তা বলেছেন, অপারেশনের পর পরই ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পাশ্চত্য সরকারকে বিস্তারিত জানান।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা ধারণা করছেন যে ইসরাইলই এই হত্যায় জড়িত।

আইআরজিসি সদস্যরা টাইমসকে বলেছেন যে এই নিখুঁত হামলা মোসাদ দলের দূর-নিয়ন্ত্রিত মেশিন গানের মাধ্যমে ২০২০ সালে ইরানি বিজ্ঞানী মোহসিন ফাখরিজাদেকে হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তা বলেন, যে বিস্ফোরণে হানিয়াকে হত্যা করা হয়, সেটি দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

হানিয়া উত্তর তেহরানের সমৃদ্ধ নেশহাত নামের আইআরজিসি কম্পাউন্ডে অবস্থান করছিলেন। হানিয়ার মতো ‘বিশিষ্ট অতিথিদের’ থাকা এবং গোপন সভা করার জন্য কম্পাউন্ডটি ব্যবহৃত হতো।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, হানিয়ার কক্ষে বিস্ফোরণের পরপরই কম্পাউন্ডের মেডিক্যাল স্টাফ সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন। তখন রাত ২টা। তিনি ঘটনাস্থলেই হানিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তার দেহরক্ষীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

টাইমসের খবরে বলা হয়, দৃশ্যপটে সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা খলিল আল-হায়াও উপস্থিত হন। তিনিও হানিয়ার লাশ দেখেন।

এর আগে গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলি এক বিমান হামলায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ নিহত হন বলে দাবি করা হয়।

এছাড়া লেবাননের বৈরুতে এক হামলায় হিজবুল্লাহর সবচেয়ে সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহত হন।

সূত্র : টাইমস অব ইসরাইল

Tag :

২ মাস আগে তেহরানের গেস্ট হাউসে রাখা বোমায় নিয়াকে হত্যা

আপডেট: ০৪:০০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে কোনো ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হত্যা করা হয়নি। বরং ইরানের রাজধানী তেহরানের যে গেস্ট হাউসের যে কক্ষে তিনি নিহত হন, সেখানে একটি অত্যাধুনিক, দূর-নিয়ন্ত্রিত বোমা প্রায় দুই মাস আগে রাখা হয়েছিল। সেটিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েই বুধবার এক দেহরক্ষীসহ হানিয়াকে হত্যা করা হয় বলে বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে এক আমেরিকান এবং সাত মধ্যপ্রাচ্য কর্মকর্তার উদ্ধৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) দুজন সদস্যও রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে আইআরজিসির তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হানিয়া নিহত হয়েছেন। ওই হামলায় ইসরাইল দায়ী বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন ইরানি কর্মকর্তা হানিয়ার হত্যাকে আইআরজিসির জন্য ‌’ভয়াবহ লজ্জা’ হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ ওই গেস্ট হাউসটি পরিচালনা করে আইআরজিসি। সেখানে হানিয়া এবং অন্যান্য অতিথি অবস্থান করছিলেন।

ইরানের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে তেহরান গিয়েছিলেন হানিয়া। ইসরাইল এই হামলার সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। তবে ইরান বলেছে, তারা ইসরাইলের ওপর প্রতিশোধ নেবে।

আইআরজিসির কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমসে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে ভবনটির জানাল এবং কম্পাউন্ডের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খোদ ভবনটির ক্ষতি হয়েছে ন্যূনতম।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি বিশ্লেষণ করে টাইমস বলেছে, ক্ষতির মাত্রা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এমনটি হয়নি। তাছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রের পক্ষে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এড়ানো কঠিন হতো।

বিস্ফোরণে হানিয়ার পাশের কক্ষেও তেমন ক্ষতি হয়নি। সেখানে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ নাখালেহ অবস্থান করছিলেন।

পত্রিকাটি জানায়, ‘নিখুঁত পরিকল্পনায়’ হানিয়াকে হত্যা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তারা বলেন, কয়েক মাসের পরিকল্পনা ও ব্যাপক নজরদারির মাধ্যমেই এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব।

দুই ইরানি কর্মকর্তা বলেন, বোমাটি হানিয়ার কক্ষে কখন স্থাপন করা হয়, কিভাবে করা হয়, তা তারা বুঝতে পারছেন না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অপর পাঁচ কর্মকর্তা বলেন, প্রায় দুই মাস আগে তা করা হয়।

টাইমসের খবরে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তা বলেছেন, অপারেশনের পর পরই ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পাশ্চত্য সরকারকে বিস্তারিত জানান।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা ধারণা করছেন যে ইসরাইলই এই হত্যায় জড়িত।

আইআরজিসি সদস্যরা টাইমসকে বলেছেন যে এই নিখুঁত হামলা মোসাদ দলের দূর-নিয়ন্ত্রিত মেশিন গানের মাধ্যমে ২০২০ সালে ইরানি বিজ্ঞানী মোহসিন ফাখরিজাদেকে হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তা বলেন, যে বিস্ফোরণে হানিয়াকে হত্যা করা হয়, সেটি দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

হানিয়া উত্তর তেহরানের সমৃদ্ধ নেশহাত নামের আইআরজিসি কম্পাউন্ডে অবস্থান করছিলেন। হানিয়ার মতো ‘বিশিষ্ট অতিথিদের’ থাকা এবং গোপন সভা করার জন্য কম্পাউন্ডটি ব্যবহৃত হতো।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, হানিয়ার কক্ষে বিস্ফোরণের পরপরই কম্পাউন্ডের মেডিক্যাল স্টাফ সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন। তখন রাত ২টা। তিনি ঘটনাস্থলেই হানিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তার দেহরক্ষীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

টাইমসের খবরে বলা হয়, দৃশ্যপটে সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা খলিল আল-হায়াও উপস্থিত হন। তিনিও হানিয়ার লাশ দেখেন।

এর আগে গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলি এক বিমান হামলায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ নিহত হন বলে দাবি করা হয়।

এছাড়া লেবাননের বৈরুতে এক হামলায় হিজবুল্লাহর সবচেয়ে সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহত হন।

সূত্র : টাইমস অব ইসরাইল