অসহযোগ আন্দোলনে সারাদেশে প্রথম দিনে পুলিশ-সাংবাদিকসহ নিহত ৭২

  • আপডেট: ০৫:১৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
  • 22

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফার কর্মসূচি- অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে সারাদেশে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। তবে অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা হু হু বাড়ছে।

রোববার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সূত্রে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৪ জন, বগুড়ায় ৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৪ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৭২ জন নিহত হয়েছেন।

সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন / সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহ্বান
ফেনীতে নিহত ৫

ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৫ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ৩ গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রংপুরে নিহত ৩

রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবু বকর সিদ্দিক।

ভোলায় নিহত ৩

ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৪ আগষ্ট) ৩ জন সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

মাগুরায় নিহত ৩

মাগুরায় দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহতরা হলেন- জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৮), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে মো. সুমন শেখ (২৮), শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের মস্তোফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মো. ফরাহাদ হোসেন (২৫) ও মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ইউনুস আলীর ছেলে আহাদ হোসেন (১৮)। এছাড়াও পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত রাব্বি মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে।

মুন্সিগঞ্জে নিহত ২

মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময়, একইস্থানে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেখা দেয় উত্তেজনা। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পাবনায় নিহত ৩

পাবনা শহরের চাতিকমোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এ সময় বিরোধী পক্ষের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় অন্তত ৩০ জন। আর মারা যায় তিনজন। তারা হলেন সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের দুলালউদ্দিনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৯), দুগাছি গ্রামের মাহবুবুল হোসেন (১৬), শিক্ষার্থী ফাহিম (১৭)। তার বাবার নাম ও গ্রামের ঠিকানা পাওয়া যায়নি । প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম রুমি।

বগুড়ায় নিহত ৩

বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। এছাড়া আরও একজন দুপচাঁচিয়ায় মারা যান। নিহতের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন শফিউল আজম। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরের বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তার বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন।

সিরাজগঞ্জে সাংবাদিকসহ নিহত ২১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে সংঘর্ষে আরও আটজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় ২১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে থানায় হামলার এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সংঘর্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। রায়গঞ্জে নিহতরা হলেন-রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার লিটন ও তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন টিটো, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, ইউপি মেম্বার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলম এবং সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক, যুবদল নেতা রঞ্জু (৪০), যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ ও ছাত্রদল কর্মী সুমন।

জানা যায়, রায়গঞ্জের ধানগড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটে পাশের রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবে ঢুকে পড়েন। এ সময় সেখানে হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম তৌহিদ।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল নেতা রঞ্জু (৪০), যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ ও ছাত্রদল কর্মী সুমন নিহত হয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।

লক্ষ্মীপুরে নিহত ৪ লক্ষ্মীপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- মিরাজ, সাব্বির, কাউছার ও আফনান। এছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক। এ সময় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

এছাড়া ভাংচুর করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব, পৌর ভবন, রোজ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, বঙ্গবন্ধুর চত্বরসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কোথায়ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।

নরসিংদীতে নিহত ৬

নরসিংদীতে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে দাবি করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

Tag :

অসহযোগ আন্দোলনে সারাদেশে প্রথম দিনে পুলিশ-সাংবাদিকসহ নিহত ৭২

আপডেট: ০৫:১৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফার কর্মসূচি- অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে সারাদেশে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। তবে অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা হু হু বাড়ছে।

রোববার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সূত্রে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৪ জন, বগুড়ায় ৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৪ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৭২ জন নিহত হয়েছেন।

সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন / সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহ্বান
ফেনীতে নিহত ৫

ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৫ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ৩ গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রংপুরে নিহত ৩

রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবু বকর সিদ্দিক।

ভোলায় নিহত ৩

ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৪ আগষ্ট) ৩ জন সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

মাগুরায় নিহত ৩

মাগুরায় দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহতরা হলেন- জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৮), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে মো. সুমন শেখ (২৮), শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের মস্তোফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মো. ফরাহাদ হোসেন (২৫) ও মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ইউনুস আলীর ছেলে আহাদ হোসেন (১৮)। এছাড়াও পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত রাব্বি মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে।

মুন্সিগঞ্জে নিহত ২

মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময়, একইস্থানে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেখা দেয় উত্তেজনা। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পাবনায় নিহত ৩

পাবনা শহরের চাতিকমোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এ সময় বিরোধী পক্ষের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় অন্তত ৩০ জন। আর মারা যায় তিনজন। তারা হলেন সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের দুলালউদ্দিনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৯), দুগাছি গ্রামের মাহবুবুল হোসেন (১৬), শিক্ষার্থী ফাহিম (১৭)। তার বাবার নাম ও গ্রামের ঠিকানা পাওয়া যায়নি । প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম রুমি।

বগুড়ায় নিহত ৩

বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। এছাড়া আরও একজন দুপচাঁচিয়ায় মারা যান। নিহতের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন শফিউল আজম। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরের বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তার বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন।

সিরাজগঞ্জে সাংবাদিকসহ নিহত ২১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে সংঘর্ষে আরও আটজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় ২১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে থানায় হামলার এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সংঘর্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। রায়গঞ্জে নিহতরা হলেন-রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার লিটন ও তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন টিটো, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, ইউপি মেম্বার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলম এবং সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক, যুবদল নেতা রঞ্জু (৪০), যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ ও ছাত্রদল কর্মী সুমন।

জানা যায়, রায়গঞ্জের ধানগড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটে পাশের রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবে ঢুকে পড়েন। এ সময় সেখানে হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম তৌহিদ।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল নেতা রঞ্জু (৪০), যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ ও ছাত্রদল কর্মী সুমন নিহত হয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।

লক্ষ্মীপুরে নিহত ৪ লক্ষ্মীপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- মিরাজ, সাব্বির, কাউছার ও আফনান। এছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক। এ সময় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

এছাড়া ভাংচুর করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব, পৌর ভবন, রোজ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, বঙ্গবন্ধুর চত্বরসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কোথায়ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।

নরসিংদীতে নিহত ৬

নরসিংদীতে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে দাবি করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।