শেখ হাসিনা সোমবার পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিশে তিনি পালিয়ে যান বলে জানা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসিনাকে কেন্দ্র করে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। মূলত, জুনিয়র অফিসার এবং ‘প্রভাবশালী’ বেশ কয়েকজন সাবেক সেনাকর্তা হাসিনার অপসারণের পক্ষে জোর দেন। এমনকি জাতির উদ্দেশে ‘শেষ বার্তা’ দেয়ার অনুমতি পর্যন্ত তাকে দেয়নি সেনাবাহিনী। এমনটাই সূত্রের খবর।
একাধিক সূত্র বলছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ডাকা হয়। কেন পরিস্থিতি সামালানো যাচ্ছে না, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাসিনা। একপর্যায়ে আইজিপিকে দেখিয়ে হাসিনা নাকি বলেন, পুলিশ তো ভালো কাজ করছে। তখন আইজিপি জানান, পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়।
সূত্র জানায় যে হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। তবে তিনি তা মানতে চাইছিলেন না। তখন শেখ রেহানার সাথে অন্য কক্ষে আলোচনা করেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তারা। তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। রেহানা বোঝালেও অবস্থানে অনড় থাকেন হাসিনা। শেষমেশ বিদেশে থেকে হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথেও ফোনে কথা বলেন এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর জয় তার মায়ের সাথে কথা বলেন। অবশেষে পদত্যাগে রাজি হন হাসিনা।
জানা গেছে, হাসিনাকে কেন্দ্র করে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। মূলত, জুনিয়র অফিসার এবং ‘প্রভাবশালী’ বেশ কয়েকজন সাবেক সেনাকর্তা হাসিনার অপসারণের পক্ষে জোর দেন। সেনাবাহিনীর মধ্যেই সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমস্যার সমাধান খুঁজতে সোমবার বেলা ১টা নাগাদ বৈঠকে বসে সেনার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। আলোচনায় রণে ভঙ্গ দিতে হয় হাসিনাপন্থীদের। তারপরই হাসিনাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় যে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়া হাজার হাজার আন্দোলনকারীদের আটকাবে না তারা। শুধু তাই নয়, সেনাবাহিনীর হুকুমে মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিশেই বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা। জাতির উদ্দেশে ‘শেষ বার্তা’ দেয়ার অনুমতি পর্যন্ত তাকে দেয়নি সেনাবাহিনী।
উল্লেখ্য, সোমবার হাসিনার পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। চলতি বছরের জুন মাসে তিন বছরের জন্য তিনি সেনাপ্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি। তার বাবা জেনারেল মোহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন মুস্তাফিজুর।
দীর্ঘ ৩৯ বছরের সামরিক জীবন ওয়াকার-উজ-জামানের। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলান ওয়াকার-উজ-জামান। জেনারেল অফিসার কমান্ডিং এবং সাভার এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার, সেনাসদরে সামরিক সচিব এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ হিসেবেও দায়িত্ব সামলান ওয়াকার। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার অঙ্গুলিহেলনেই হাসিনার পতন বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন