ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছিল বিদেশি একটি সংস্থা। তার প্রধান কাজ ছিল তাপপ্রবাহ কমাতে বিভিন্ন গবেষণার আলোকে ডিএনসিসিকে পরামর্শ দেওয়া। সে অনুযায়ী নগর বনায়ন তৈরি, ফুটপাত ও খাল-লেক পাড়ে বৃক্ষ রোপণসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল ডিএনসিসি।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে দেখা মিলছে না চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের। তিনি ডিএনসিসির নগর ভবনে যাচ্ছেন না। পরামর্শও দিচ্ছেন না। ফলে তিনি শহরের তাপপ্রবাহ কমাতে এখনো কাজ করবেন কি না, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
বুশরা আফরিন ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে। তাকে এ পদে নিয়োগ দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)
গত ৫ আগস্টের পর তিনি (হিট অফিসার) আর নগর ভবনে যাননি। আগে যেভাবে নগরের তাপপ্রবাহ কমাতে পরামর্শ দিতেন, তাও তিনি দিচ্ছেন না।- ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গাঢাকা দেন ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরপর গত ১৯ আগস্ট আতিককে সরিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। এছাড়া গত ১৯ আগস্ট আতিকুল ইসলামের অভিপ্রায় অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া সবার চাকরি বাতিল করে ডিএনসিসি।
এরপর থেকে আলোচনা চলছে উত্তর সিটি করপোরেশনে নিযুক্ত চিফ হিট অফিসার পদে থেকে কাজ চালিয়ে যাবেন কি না। তাকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, তিনি এখনো উত্তর সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসার পদে আছেন। তবে ঢাকায় তার নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই। ডিএনসিসিতেও তার জন্য আলাদা কোনো চেয়ার নেই।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর তিনি (হিট অফিসার) আর নগর ভবনে যাননি। আগে যেভাবে নগরের তাপপ্রবাহ কমাতে পরামর্শ দিতেন, তাও তিনি দিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, ‘শহরের তাপপ্রবাহ কমাতে আগে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিতেন চিফ হিট অফিসার। তার মধ্য থেকে যেসব পরামর্শ ভালো সেগুলো আমরা গ্রহণ করতাম। সে অনুযায়ী তাকে সঙ্গে নিয়েই কাজগুলো করতাম। এখন তিনি যদি আবার পরামর্শ দেন তার মধ্য থেকে যুক্তিসঙ্গত পরামর্শগুলো অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।
২০২৩ সালের ৩ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরশট-রকের সহযোগিতায় ঢাবির ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ ও ডিএনসিসি যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে আতিকুল ইসলাম নিজেই মেয়ের এ পদে কাজ করার বিষয়টি জানান। এরপর থেকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোর মধ্যে তাপপ্রবাহ নিয়ে কাজ করার জন্য আরশট-রকের গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সিএইচও হিসেবে বুশরা আফরিন ঢাকা উত্তর সিটিকে নিরাপদ করার জন্য নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাপমাত্রা কমাতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছাড়াও ঢাকা উত্তরের জনগণের মধ্যে তাপ সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতকরণে কাজ করার কথা তার।
চিফ হিট অফিসারকে নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনা
চিফ হিট অফিসার হিসেবে বুশরা আফরিন নিয়োগ পাওয়ার পর তার পদের নাম এবং কর্মস্থল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকই না বুঝে নেতিবাচক আলোচনা করেন।
পরে গত বছরের ৮ মে এক অনুষ্ঠানে তার বাবা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কানাডায় গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে লেখাপড়া করা বুশরা বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনে একজন নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন। এটা আমাদের বাংলাদেশের জন্য গর্ব যে আমাদের একজনকে এশিয়ার মধ্যে চিফ হিট অফিসার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে আমাদের সিটি করপোরেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। ডিএনসিসিতে এরকম চিফ হিট অফিসারের কোনো পদও নেই। তার বেতন-ভাতা সিটি করপোরেশন দেবে না। তার জন্য সিটি করপোরেশনে অফিসও নেই।
এর মধ্যে সব সমালোচনা আমলে না নিয়ে চলতি বছর প্রচণ্ড হিটওয়েভ চলাকালীন হিট অফিসারের পরামর্শে ব্রাউজার মেশিন দিয়ে সড়কে পানি ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এছাড়া উত্তর সিটিতে গাছ লাগানো, বনানী ও আগারগাঁও এলাকায় গ্রিন জোন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন হিট অফিসার। এজন্য উত্তর সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্পও নিয়েছিল।
ডিএনসিসির সচিব দপ্তর সূত্র জানায়, বুশরা আফরিন মূলত তার বনানীর নিজস্ব অফিসে বসেই কাজ করতেন। মিটিং ছাড়া তিনি নগর ভবনে যেতেন না। ৫ আগস্টের পর তিনি নগর ভবনে যাচ্ছেন না। তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া তার মিডিয়া কর্মকর্তা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
ডিএসসিসির কর্মকর্তা জানান, বুশরা আফরিনের বাবা সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম নগর ভবন ছাড়ার পর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
গত ২৩ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘তাপপ্রবাহের ঝুঁকি, এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে’ ব্র্যাক আয়োজিত এক সেমিনারে অংশ নেন বুশরা আফরিন, এক প্রশ্নের জবাবে বুশরা আফরিন বলেন, ‘ঢাকা শহরে তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে আমি তাপপ্রবাহ কমাতে আশাবাদী। আমরা ঢাকা উত্তরের তাপপ্রবাহের সমস্যাগুলো পয়েন্ট আউট করেছি। এ সমস্যা সমাধানে আমাদের স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা আছে। সেগুলো দিয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার তাপমাত্রা কমবে তখন, যখন আমাদের গ্লোবাল তাপমাত্রা বা গ্লোবাল কার্বন কমবে। এক মুহূর্তে শহরের তাপপ্রবাহ কমানো সম্ভব নয়। আমরা সবাই চাইলে এটি অসম্ভব কিছু নয়। সূত্র জাগোনিউজ