সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম চুক্তি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দারের আদালতে রাজধানীর বাড্ডা থানায় করা সুমন সিকদার হত্যা মামলার রিমান্ড শুনানিতে এ অভিযোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে।
বুধবার আদালতে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল আলম। রাষ্ট্রপক্ষ তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করে। বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকীও রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। পরে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
শুনানিকালে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছেন। বিদ্যুৎ খাত নিয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন যেন চাইনিজ খেল না। চাইনিজ খেলনা দেখতে সুন্দর, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী না। দেখতে লোভনীয়, কিন্তু টেকসই না। এভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছেন। ১৫ বছরে কুইক রেন্টালের নামে শত শত মানুষকে হাজার হাজার কোটি টাকারর মালিক বানিয়েছেন। মিটারে ১ হাজার টাকা রিচার্জ করলে ৫০০ টাকা কেটে নেয়। এই ৫০০ টাকার জন্য কোনো সেবা কিন্তু দিচ্ছে না। গরিব কৃষকের কাছ থেকে ট্যাক্সের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
তিনি বলেন, অটবির কি যোগ্যতা আছে, তাদেরকে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ দিতে হবে। তারা তো কাঠমিস্ত্রী। তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই, ইঞ্জিনিয়ার নেই; তাদের এ কাজ দিয়েছে। বিনিময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে অসম চুক্তি করেছে। বিদ্যুতের পার্মানেন্ট সলিউশন না করে কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চমক দেখিয়ে এ খাতকে পঙ্গু করেছে।
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তিনি (তৌফিক-ই-ইলাহী) হাসিনার ডান হাত ছিলেন। হাসিনাকে স্বৈরাচার করতে যে কয়েকজন ভূমিকা রেখেছেন, সেই কারিগরদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি, মুশফিকুর রহমান, গওহর রিজভীসহ ৯ জন গণভবনকে বালাখানা বানিয়েছেন। মানুষ হত্যা, ভোট চুরি, অধিকারবঞ্চিত করার জন্য তারা দায়ী। হাসিনাকে কুপরামর্শ দিতেন। সামিট গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। সেই সামিট গ্রুপ লাখ কোটি টাকা নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেছে। বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংস করেছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় একটা বারও হাসিনাকে বলেনি, হত্যা বন্ধ করেন। আমরা টেলিভিশনে নায়ক-নায়িকার অভিনয় দেখি। তাদের পিছনে থাকেন একজন পরিচালক। সেই পরিচালক হচ্ছেন এরা। তার কঠিন শাস্তি হোক। আর কেউ যেন স্বৈরাচার না হয়। এমন অবস্থা যেন না হয় যে ৩০০ জন এমপি-মন্ত্রীকে পালিয়ে যেতে হয়।
আসামিপক্ষে মোরশেদ হোসেন শাহীন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, তিনি (তৌফিক-ই-ইলাহী) হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি করেছেন। এজাহারে তার নাম নেই। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি খুবই অসুস্থ।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক বলেন, বিবেক যখন মরে যায়, তখন শিক্ষার কোনো মূল্য থাকে না, যে কোনো কিছু করতে পারে। সরকারি দায়িত্ব পালনে আমাদের অবস্থান ঠিক রাখতে হবে। উনি (তৌফিক-ই-ইলাহী) যেন নিরাপদে এখান থেকে বের হতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করে দেবেন।