বিলীনের পথে সাধুহাটির ‘জমিদার বাড়ি

  • আপডেট: ০২:৩৬:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 22

মৌলভীবাজারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। এখনো বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের নানা পর্বের বিভিন্ন নিদর্শন, যেসব জায়গা প্রাচীন ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে টিকে আছে এখনো। তেমনি একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক জায়গা মৌলভীবাজার সদরের সাধুহাটি এলাকায় অবস্থিত জমিদার রাজচন্দ্রের পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি।

জানা যায়, দেয়ালের প্রাচীর ক্ষয়ে যাওয়া পুরোনো এ জমিদার বাড়িটি ব্রিটিশ আমলের এক জমিদারের। তার নাম জমিদার রাজচন্দ্র। সম্ভবত ঢাকাবাসী এই জমিদার ইংরেজদের কাছ থেকে জমিদারি কিনে এ অঞ্চলে আসেন। মৌলভীবাজারের সাধুহাটি এলাকাসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে ছিল তার জমিদারি। প্রায় দেড় ফুট পুরু দেয়াল দিয়ে ঘেরা পরিত্যক্ত এই জমিদার বাড়িটি এখনও যেন সেই সময়েরই কথা বলে।

জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে সুবিশাল দিঘি। এখনো দিঘিটি পানিতে পরিপূর্ণ থাকে সবসময়। এলাকার মানুষের নানা কাজে আসে এই দিঘির পানি। দিঘির পাশেই আবার জমিদার বাড়িতে প্রবেশের মুখে সিঁড়িঘরে হাওয়াখানা। মনোরম পরিবেশে এখানেই বসে না কি জমিদার অভিযুক্ত লোকজনের বিচার-আচার করতেন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে চাকর-চাকরানী, বাবুর্চিদের থাকার ঘর। রয়েছে ‘হাওয়াখানা’। যদিও এগুলো এখন সাপ-সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের আবাসস্থল। জমিদার বাড়িটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। জমিদার রাজচন্দ্রের কোনো উত্তরসুরী এখানে না থাকায় অবহেলা, অযত্নে নষ্ট হয়ে গেছে একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ এই জমিদার বাড়ি।

জনশ্রুতি আছে, জমিদার রাজচন্দ্র তার ভাই সূর্যনারায়ণ চন্দ্রসহ তার অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১৮৮৫ সালে সাধুহাটির জমিদারি ছেড়ে চলে যান। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন তারা পালিয়ে গিয়েছিলেন। মূলত, জমিদার রাজচন্দ্র ছিলেন একজন অত্যাচারী জমিদার। জমিদার বাড়িতে সেসময় একটি টর্চার সেলও ছিল। যেখানে এনে মানুষদের নির্যাতন করা হতো। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ জমিদারকে পছন্দ করতো না। তার ওপর এই জমিদার স্থানীয় ছিলেন না। এসেছিলেন ঢাকা থেকে। ফলে সাধুহাটিতে যখন জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাই ক্ষেপে উঠল তখন তারা পালিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দেবনাথ বলেন, সাধুহাটির এই জমিদার বাড়ির বয়স দেড়শ’ বছরেরও বেশি। জমিদার বাড়িটি এখনো কোনোমতে টিকে আছে। অনেক জায়গায় খসে পড়েছে দেয়ালের পলেস্তারা। জমিদার বাড়ির অনেক জায়গাতেই আগাছা, শেকড়বাকড় জন্ম নিয়েছে। ভয়ে এখন আর তেমন কেউ এদিকে আসেন না। তবে মাঝে মাঝে ইতিহাস সন্ধানী মানুষজন আসেন পুরোনো এই জমিদার বাড়ি দেখতে।

Tag :

বিলীনের পথে সাধুহাটির ‘জমিদার বাড়ি

আপডেট: ০২:৩৬:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মৌলভীবাজারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। এখনো বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের নানা পর্বের বিভিন্ন নিদর্শন, যেসব জায়গা প্রাচীন ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে টিকে আছে এখনো। তেমনি একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক জায়গা মৌলভীবাজার সদরের সাধুহাটি এলাকায় অবস্থিত জমিদার রাজচন্দ্রের পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি।

জানা যায়, দেয়ালের প্রাচীর ক্ষয়ে যাওয়া পুরোনো এ জমিদার বাড়িটি ব্রিটিশ আমলের এক জমিদারের। তার নাম জমিদার রাজচন্দ্র। সম্ভবত ঢাকাবাসী এই জমিদার ইংরেজদের কাছ থেকে জমিদারি কিনে এ অঞ্চলে আসেন। মৌলভীবাজারের সাধুহাটি এলাকাসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে ছিল তার জমিদারি। প্রায় দেড় ফুট পুরু দেয়াল দিয়ে ঘেরা পরিত্যক্ত এই জমিদার বাড়িটি এখনও যেন সেই সময়েরই কথা বলে।

জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে সুবিশাল দিঘি। এখনো দিঘিটি পানিতে পরিপূর্ণ থাকে সবসময়। এলাকার মানুষের নানা কাজে আসে এই দিঘির পানি। দিঘির পাশেই আবার জমিদার বাড়িতে প্রবেশের মুখে সিঁড়িঘরে হাওয়াখানা। মনোরম পরিবেশে এখানেই বসে না কি জমিদার অভিযুক্ত লোকজনের বিচার-আচার করতেন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে চাকর-চাকরানী, বাবুর্চিদের থাকার ঘর। রয়েছে ‘হাওয়াখানা’। যদিও এগুলো এখন সাপ-সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের আবাসস্থল। জমিদার বাড়িটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। জমিদার রাজচন্দ্রের কোনো উত্তরসুরী এখানে না থাকায় অবহেলা, অযত্নে নষ্ট হয়ে গেছে একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ এই জমিদার বাড়ি।

জনশ্রুতি আছে, জমিদার রাজচন্দ্র তার ভাই সূর্যনারায়ণ চন্দ্রসহ তার অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১৮৮৫ সালে সাধুহাটির জমিদারি ছেড়ে চলে যান। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন তারা পালিয়ে গিয়েছিলেন। মূলত, জমিদার রাজচন্দ্র ছিলেন একজন অত্যাচারী জমিদার। জমিদার বাড়িতে সেসময় একটি টর্চার সেলও ছিল। যেখানে এনে মানুষদের নির্যাতন করা হতো। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ জমিদারকে পছন্দ করতো না। তার ওপর এই জমিদার স্থানীয় ছিলেন না। এসেছিলেন ঢাকা থেকে। ফলে সাধুহাটিতে যখন জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাই ক্ষেপে উঠল তখন তারা পালিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দেবনাথ বলেন, সাধুহাটির এই জমিদার বাড়ির বয়স দেড়শ’ বছরেরও বেশি। জমিদার বাড়িটি এখনো কোনোমতে টিকে আছে। অনেক জায়গায় খসে পড়েছে দেয়ালের পলেস্তারা। জমিদার বাড়ির অনেক জায়গাতেই আগাছা, শেকড়বাকড় জন্ম নিয়েছে। ভয়ে এখন আর তেমন কেউ এদিকে আসেন না। তবে মাঝে মাঝে ইতিহাস সন্ধানী মানুষজন আসেন পুরোনো এই জমিদার বাড়ি দেখতে।