ইসরাইলি গোয়েন্দা তাইওয়ানে তৈরী পেজারে বিস্ফোরক বসিয়েছিল

  • আপডেট: ০৪:২৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 22

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে অন্তত নয়জনের মৃত্যু এবং প্রায় তিন হাজার ব্যক্তির আহত হওয়া ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগে তাইওয়ানে তৈরী এসব পেজারের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ গ্রুপটি। লেবাননি নিরাপত্তা বাহিনীর এক সিনিয়র সূত্র এবং আরেকটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোশাদ তাইওয়ানের তৈরী প্রায় পাঁচ হাজার পেজারের ভেতরে অল্প পরিমাণে বিস্ফোরক বসিয়েছিল।

এই বিস্ফোরণে এমনকি বৈরুতে নিযুক্ত ইরানি দূতও আহত হয়েছে। হিজবুল্লাহর কয়েকজন সদস্যও হতাহত হয়েছেন। এতে হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ নতুন মাত্রাও পেয়েছে এর মাধ্যমে।

ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ অবশ্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের সংকল্প ব্যক্ত করেছে। তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরাইল এই ষড়যন্ত্র কয়েক মাস ধরে করেছে।

লেবাননের এক সিনিয়র নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, তাইওয়ানভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলে কোম্পানিকে হিজবুল্লাহ ৫০০০ বিপারের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল। গত বসন্তে এগুলো লেবাননে প্রবেশ করেছিল।

লেবাননের সিনিয়র এক কূটনৈতিক সূত্র বিস্ফোরিত মডেলের পেজারের (এপি৯২৪) ছবি প্রকাশ করেছে। এটি অন্যান্য পেজারের মতোই তারবিহীন টেক্সট মেসেজ রিসিভ ও ডিসপ্লে যন্ত্র, যার মাধ্যমে টেলিফোন কল করা যায় না।

হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরাইলি লোকেশন-ট্র্যাকিং এড়ানোর চেষ্টায় নিম্ন মানের যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবে পেজার ব্যবহার করে।

তবে সিনিয়র এক লেবাননি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলি গোয়েন্দারা ‘উৎপাদন পর্যায়ে’ পেজারগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলেছিল।

সূত্রটি জানায়, ‘মোশাদ ডিভাইজগুলোর ভেতরে একটি বোর্ড প্রবেশ করিয়েছিল। এতে কোড গ্রহণকারী বিস্ফোরক পদার্থ ছিল। কোনো উপায়েই এটি শনাক্ত করা খুবই কঠিন। এমনকি কোনো ডিভাইস বা স্ক্যানারও এটি শনাক্ত করতে পারে না।’

আরেকটি সূত্র জানায়, প্রায় তিন হাজার ডিভাইসে কোড ম্যাসেজ পাঠানোর পর পরই সেগুলোতে একইসাথে বিস্ফোরণ ঘটে।

আরেকটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, নতুন পেজারগুলোতে তিন গ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক বসানো ছিল। হিজবুল্লাহর কাছে কয়েক মাস ধরে এগুলো ‘শনাক্তহীন’ অবস্থায় ছিল।

এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অনুরোধ করা হলেও নির্মাণকারী তাইওয়ানের গোল্প অ্যাপোলের বা ইসরাইল জবাব দেয়নি।

রয়টার্স বিস্ফোরিত কয়েকটি পেজারের ছবি বিশ্লেষণ করেছে। সবগুলোতেই তাইপেভিত্তিক গোল্প অ্যাপোলের কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলেন, এটি হলো কয়েক দশকের মধ্যে হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা।

সূত্র : আরব নিউজ

Tag :

ইসরাইলি গোয়েন্দা তাইওয়ানে তৈরী পেজারে বিস্ফোরক বসিয়েছিল

আপডেট: ০৪:২৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে অন্তত নয়জনের মৃত্যু এবং প্রায় তিন হাজার ব্যক্তির আহত হওয়া ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগে তাইওয়ানে তৈরী এসব পেজারের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ গ্রুপটি। লেবাননি নিরাপত্তা বাহিনীর এক সিনিয়র সূত্র এবং আরেকটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোশাদ তাইওয়ানের তৈরী প্রায় পাঁচ হাজার পেজারের ভেতরে অল্প পরিমাণে বিস্ফোরক বসিয়েছিল।

এই বিস্ফোরণে এমনকি বৈরুতে নিযুক্ত ইরানি দূতও আহত হয়েছে। হিজবুল্লাহর কয়েকজন সদস্যও হতাহত হয়েছেন। এতে হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ নতুন মাত্রাও পেয়েছে এর মাধ্যমে।

ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ অবশ্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের সংকল্প ব্যক্ত করেছে। তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরাইল এই ষড়যন্ত্র কয়েক মাস ধরে করেছে।

লেবাননের এক সিনিয়র নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, তাইওয়ানভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলে কোম্পানিকে হিজবুল্লাহ ৫০০০ বিপারের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল। গত বসন্তে এগুলো লেবাননে প্রবেশ করেছিল।

লেবাননের সিনিয়র এক কূটনৈতিক সূত্র বিস্ফোরিত মডেলের পেজারের (এপি৯২৪) ছবি প্রকাশ করেছে। এটি অন্যান্য পেজারের মতোই তারবিহীন টেক্সট মেসেজ রিসিভ ও ডিসপ্লে যন্ত্র, যার মাধ্যমে টেলিফোন কল করা যায় না।

হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরাইলি লোকেশন-ট্র্যাকিং এড়ানোর চেষ্টায় নিম্ন মানের যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবে পেজার ব্যবহার করে।

তবে সিনিয়র এক লেবাননি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলি গোয়েন্দারা ‘উৎপাদন পর্যায়ে’ পেজারগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলেছিল।

সূত্রটি জানায়, ‘মোশাদ ডিভাইজগুলোর ভেতরে একটি বোর্ড প্রবেশ করিয়েছিল। এতে কোড গ্রহণকারী বিস্ফোরক পদার্থ ছিল। কোনো উপায়েই এটি শনাক্ত করা খুবই কঠিন। এমনকি কোনো ডিভাইস বা স্ক্যানারও এটি শনাক্ত করতে পারে না।’

আরেকটি সূত্র জানায়, প্রায় তিন হাজার ডিভাইসে কোড ম্যাসেজ পাঠানোর পর পরই সেগুলোতে একইসাথে বিস্ফোরণ ঘটে।

আরেকটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, নতুন পেজারগুলোতে তিন গ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক বসানো ছিল। হিজবুল্লাহর কাছে কয়েক মাস ধরে এগুলো ‘শনাক্তহীন’ অবস্থায় ছিল।

এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অনুরোধ করা হলেও নির্মাণকারী তাইওয়ানের গোল্প অ্যাপোলের বা ইসরাইল জবাব দেয়নি।

রয়টার্স বিস্ফোরিত কয়েকটি পেজারের ছবি বিশ্লেষণ করেছে। সবগুলোতেই তাইপেভিত্তিক গোল্প অ্যাপোলের কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলেন, এটি হলো কয়েক দশকের মধ্যে হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা।

সূত্র : আরব নিউজ