০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গায়েব ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের ফাইল, হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার

  • আপডেট: ০৯:২১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
  • 25

ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। আত্মসাৎ করেছে দূতাবাসের ১ লাখ ৭৬ হাজার ডলারের ইমার্জেন্সি ফান্ড। দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশলে সরানো হয়েছে আরও প্রায় সোয়া ৩ লাখ ডলার।

সেই চুরির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, শুধু সিডর ইমার্জেন্সি ফান্ড বা দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট নয়, রাষ্ট্রদূতের বাসভবন মেরামতেও ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

রাষ্ট্রদূতের রিপোর্ট, পররাষ্ট্র দপ্তরে জমা পড়া অভিযোগ, সরেজমিনে ওয়াশিংটনে অনুসন্ধান, হাতে আসা নথি এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে অভিযোগগুলোর সত্যতা মিলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। জানা গেছে, সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি লাগয়ো মেরিল্যান্ডে বেথেসডা হাইবরো এলাকায় থাকা বাংলাদেশ হাউস নির্মাণে।

বাড়ির জমিসহ বাজারমূল্য ৪.২৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫.১ মিলিয়ন ডলার। অথচ বাড়িটি মেরামতেই বিল দেখানো হয়েছে ৬ মিলিয়ন ডলার। ৬০ কোটি টাকায় সংস্কার করা বাড়িতে এতটাই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে যে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়িটি উদ্বোধনের কয়েক মাস পর ছাদে ফাটল ধরেছে।

সামান্য বরফ জমলে বা ঝড়বৃষ্টিতে ঘরের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবেশ করে। ওই বাড়িতে রাষ্ট্রদূত, তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীরা বসবাস করলেও মান-সম্মান হারানোর ভয়ে কূটনৈতিক পার্টির আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি সরজমিন দেখে দ্রুত পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা নিতে ঢাকায় দফায় দফায় আর্জি জানাচ্ছেন বর্তমান রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ।

ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি, ওয়াশিংটনের পুকুর চুরির বিস্তৃত তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন অবধি ফাইলটি উঠেছিল। মন্ত্রী বদল হয়েছে, কিন্তু আজও নামেনি ফাইলটি। এটি রহস্যজনক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের তথ্য, দূতাবাসের অর্থ গেছে ক্যাসিনোতে: ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বেহাত হওয়া কয়েক লাখ ডলারের (ইমার্জেন্সি তহবিল) একটি বড় অংশ ক্যাসিনোতে গেছে বলে দূতাবাসকে জানিয়েছে আমেরিকান সিটি ব্যাংক। তারা এর প্রমাণ হিসাবে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার এটিএম কার্ডের বিস্তারিত শেয়ার করেছে। আচমকা দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন এবং কয়েক মাসের ব্যবধানে অ্যাকাউন্টটি খালি করার বিষয়টি সন্দেহজনক ঠেকে আমেরিকান সিটি ব্যাংকের ম্যানেজার (ভাইস প্রেসিডেন্ট) সাচা খানের কাছে। তিনি চিঠি দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করেন।

প্রতিবেদনে জানা যায়, ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিনের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্তে (ট্রানজিশন পিরিয়ডে) অ্যাকাউটটি খালি করার ঘটনা ঘটে। তখন দূতাবাসের তৎকালীন হেড অব চ্যান্সারি (ডিডিও’র বাড়তি দায়িত্ব) ছিলেন ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। তার স্বাক্ষরে ব্যাংকের হিসাবটি ক্লোজ করা হয়। ২০২১ সালের মার্চে অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ হলেও তা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ দূর না হওয়ায় পরবর্তীতেও দূতাবাসের সঙ্গে চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। ওয়াশিংটন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানাজানির পর রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

গায়েব ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের ফাইল, হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার

আপডেট: ০৯:২১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। আত্মসাৎ করেছে দূতাবাসের ১ লাখ ৭৬ হাজার ডলারের ইমার্জেন্সি ফান্ড। দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশলে সরানো হয়েছে আরও প্রায় সোয়া ৩ লাখ ডলার।

সেই চুরির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, শুধু সিডর ইমার্জেন্সি ফান্ড বা দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট নয়, রাষ্ট্রদূতের বাসভবন মেরামতেও ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

রাষ্ট্রদূতের রিপোর্ট, পররাষ্ট্র দপ্তরে জমা পড়া অভিযোগ, সরেজমিনে ওয়াশিংটনে অনুসন্ধান, হাতে আসা নথি এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে অভিযোগগুলোর সত্যতা মিলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। জানা গেছে, সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি লাগয়ো মেরিল্যান্ডে বেথেসডা হাইবরো এলাকায় থাকা বাংলাদেশ হাউস নির্মাণে।

বাড়ির জমিসহ বাজারমূল্য ৪.২৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫.১ মিলিয়ন ডলার। অথচ বাড়িটি মেরামতেই বিল দেখানো হয়েছে ৬ মিলিয়ন ডলার। ৬০ কোটি টাকায় সংস্কার করা বাড়িতে এতটাই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে যে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়িটি উদ্বোধনের কয়েক মাস পর ছাদে ফাটল ধরেছে।

সামান্য বরফ জমলে বা ঝড়বৃষ্টিতে ঘরের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবেশ করে। ওই বাড়িতে রাষ্ট্রদূত, তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীরা বসবাস করলেও মান-সম্মান হারানোর ভয়ে কূটনৈতিক পার্টির আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি সরজমিন দেখে দ্রুত পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা নিতে ঢাকায় দফায় দফায় আর্জি জানাচ্ছেন বর্তমান রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ।

ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি, ওয়াশিংটনের পুকুর চুরির বিস্তৃত তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন অবধি ফাইলটি উঠেছিল। মন্ত্রী বদল হয়েছে, কিন্তু আজও নামেনি ফাইলটি। এটি রহস্যজনক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের তথ্য, দূতাবাসের অর্থ গেছে ক্যাসিনোতে: ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বেহাত হওয়া কয়েক লাখ ডলারের (ইমার্জেন্সি তহবিল) একটি বড় অংশ ক্যাসিনোতে গেছে বলে দূতাবাসকে জানিয়েছে আমেরিকান সিটি ব্যাংক। তারা এর প্রমাণ হিসাবে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার এটিএম কার্ডের বিস্তারিত শেয়ার করেছে। আচমকা দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন এবং কয়েক মাসের ব্যবধানে অ্যাকাউন্টটি খালি করার বিষয়টি সন্দেহজনক ঠেকে আমেরিকান সিটি ব্যাংকের ম্যানেজার (ভাইস প্রেসিডেন্ট) সাচা খানের কাছে। তিনি চিঠি দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করেন।

প্রতিবেদনে জানা যায়, ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিনের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্তে (ট্রানজিশন পিরিয়ডে) অ্যাকাউটটি খালি করার ঘটনা ঘটে। তখন দূতাবাসের তৎকালীন হেড অব চ্যান্সারি (ডিডিও’র বাড়তি দায়িত্ব) ছিলেন ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। তার স্বাক্ষরে ব্যাংকের হিসাবটি ক্লোজ করা হয়। ২০২১ সালের মার্চে অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ হলেও তা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ দূর না হওয়ায় পরবর্তীতেও দূতাবাসের সঙ্গে চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। ওয়াশিংটন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানাজানির পর রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়।