প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েই চলেছে। গত চার-পাঁচদিনে পানি বাড়ার হার ছিল আশঙ্কাজনক।
এদিকে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অরক্ষিত তীরবর্তী অঞ্চল শাহজাদপুরে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাঙনকবলিতরা।
ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে রয়েছে শতশত স্থাপনা ও ফসলি জমি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২ জুন থেকে ব্যাপকহারে যমুনায় পানি বাড়ছে। শুক্রবার (৭ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ২ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা: ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। এর আগে সোমবার ৩০, মঙ্গলবার ৩৭, বুধবার ৫০ ও বৃহস্পতিবার ২৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
অপরদিকে কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে শুক্রবার পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৮ মিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)। এ পয়েন্টে সোমবার ৩১, মঙ্গলবার ৪৪, বুধবার ৪৪ ও বৃহস্পতিবার ২৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
এদিকে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নে যমুনার অরক্ষিত তীরবর্তী অঞ্চলে কয়েক বছর ধরেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের আট-১০টি গ্রামের হাজার হাজার বাড়িঘর কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাঁতশিল্প, রাস্তাঘাটসহ বহু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত হাজার হাজার মানুষ।
চলতি মৌসুমে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকহারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে জালালপুরের গুচ্ছগ্রাম এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন নদীতীরবর্তী মানুষগুলো। তাদের চোখে ঘুম নেই।
স্থানীয়রা জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধ করা না হলে আরও শতশত বাড়িঘর ও স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যাবে। নিঃস্ব হয়ে পড়বেন হাজারও মানুষ।
ভাঙনকবলিতরা জানান, শাহজাদপুরের জালালপুর ও কৈজুরী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা ভয়াবহ ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি-জমি হারিয়েছেন। অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতীক্ষার পর সরকার এ অঞ্চলে ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতিতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। ফলে আবার ভাঙনের কবলেই পড়েছে এসব অঞ্চল। গত তিনদিনের ব্যবধানে জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার ডানতীর সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। সিসি ব্লক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মানুফ্যাকচারিং শেষ হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে। এ কাজের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হবে।