১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই থেকে তিন লাখে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব, সিন্ডিকেট না থাকলে: বায়রা

  • আপডেট: ০৮:১৭:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • 30

সিন্ডিকেট না করলে দুই থেকে তিন লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) সিনিয়র সদস্য বিএনপি নেতা খন্দকার আবু আশফাক।

বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেট চক্রের পুনরায় তৎপরতা বন্ধে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।

বায়রার এই সিনিয়র সদস্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বায়রা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমি ব্যবসায়ী হিসেবে এখানে এসেছি। আমি বলবো বায়রায় কোনও সিন্ডিকেট থাকবে না। যদি কোনও সিন্ডিকেট থাকে আমরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেব। সিন্ডিকেট না থাকলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে খরচ হবে দুই থেকে তিন লাখ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বায়রার যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করা হয়। যার মূল হোতা ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন ও কাজী মফিজুর রহমান। এই হোতাদের সহযোগিতা করতেন তখনকার মন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বায়রাকে একটি দলীয় সংগঠন হিসেবে ব্যবহার করতেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটে রহুল আমীনের সাথে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি নিজাম হাজারী, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ।

ফখরুল ইসলামের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেইসময় ৫০ হাজার শ্রমিক প্রতারণা হয়েছে। তাদের প্রত্যকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ফলে এই সেক্টরের উদ্যোক্তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন এই সিন্ডিকেট কিভাবে করা হয়েছিল এই প্রশ্নে ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি বংশধর দাতুশ্রী আমীনের পাটর্নার বায়রার সাবেক মহাসচিব রহুল আমীন এই সিন্ডিকেট তৈরি করে।

ফখরুল ইসলামের অভিযোগ, দাতুশ্রী আমিনের মালয়েশিয়ান IT কোম্পানি Bestinet এবং এই কোম্পানির Manpower Recruitment Online পদ্ধতি FWCMS (Foreign workers centralized Management system), এই পদ্ধতির মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে শুধু মাত্র বিদেশ থেকে কর্মী আনয়নের অনলাইন সাপোর্ট এর জন্য চুক্তি হয় কিন্তু দাতুশ্রী আমিন নূর দুই দেশের সরকারের অসাধু লোকদের এবং বাংলাদেশে তার পার্টনার রুহুল আমিন স্বপনকে ব্যবহার করে উক্ত পদ্ধতির অপব্যবহার করে কর্মী পাঠানোর সকল প্রক্রিয়া কন্ট্রোল করে অর্থাৎ FWCMS ব্যবহার করে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় লিপ্ত হয়-উক্ত Fwcms online পদ্ধতির মাধ্যমে মালয়েশিয়া আরও ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিলেও বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে কোনও প্রকার সিন্ডিকেট করতে পারেনি। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মাধ্যমে সম্পাদিত এমওইউ (MOU) তে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সিলেকশন করার জন্য মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কিন্তু কোনো প্রকার ক্রাইটেরিয়া ছাড়াই ঘুষের মাধ্যমে রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতুশ্রী আমিন Fwcms system অপব্যবহার করে নিজেদের পছন্দ মতো রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেকশন করেন।

এ সময় বায়রার প্রতিনিধিরা আটটি দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো-

১. সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপনসহ সিন্ডিকেটের পরিকল্পনাকারী, বাস্তবায়নকারী, নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ সরকারে জড়িত মন্ত্রী এমপি ও নেতাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি, অনতিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২. কোনও ক্রমেই সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের পদাংক অনুসরণ করে সিন্ডিকেটে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যদি সিন্ডিকেট করার পুনরায় সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে বর্তমান সরকারের সাথে পূর্বের সরকারের কোনও পার্থক্য থাকবে না।

৩. দুই দেশের MOU সন্নিবেশিত বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকার সিলেকশন করার সুযোগ বাতিল করতে হবে। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি সিলেকশন করবে নিয়োগকর্তা। সিন্ডিকেট মুক্ত ভাবে সকল এজেন্সি কম খরচে বা বিনা খরচে কর্মী পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে সেন্টাল অনলাইন পদ্ধতি সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে যে সকল কর্মী যেতে পারেনি, তাদেরকে কম খরচে সিন্ডিকেট মুক্ত ভাবে পুনরায় মালয়েশিয়া পাঠানোর দাবি করছি।

৫. নেপালসহ অন্যান্য ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া যে প্রক্রিয়ায় কর্মী গ্রহণ করে ঠিক বাংলাদেশ থেকেও একই পক্রিয়ার শ্রমিক প্ররণের দাবি করছি।

৬. বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্থ FWCMS online পদ্ধতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব online পদ্ধতি এবং মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাবিত Epax পদ্ধতি বা manual পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭. FWCMS এর মাধ্যমে Medical পদ্ধতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত যে কোনও মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল চেকআপ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. Manual পদ্ধতিতে চালু হওয়া দূতাবাসের সত্যায়ন অব্যহত রাখা এবং সিন্ডিকেটকে সহায়তাকারী সাবেক ফ্যাসীবাদী আমলে নিয়োগকৃত মন্ত্রনালয় ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করছি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

দুই থেকে তিন লাখে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব, সিন্ডিকেট না থাকলে: বায়রা

আপডেট: ০৮:১৭:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

সিন্ডিকেট না করলে দুই থেকে তিন লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) সিনিয়র সদস্য বিএনপি নেতা খন্দকার আবু আশফাক।

বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেট চক্রের পুনরায় তৎপরতা বন্ধে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।

বায়রার এই সিনিয়র সদস্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বায়রা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমি ব্যবসায়ী হিসেবে এখানে এসেছি। আমি বলবো বায়রায় কোনও সিন্ডিকেট থাকবে না। যদি কোনও সিন্ডিকেট থাকে আমরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেব। সিন্ডিকেট না থাকলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে খরচ হবে দুই থেকে তিন লাখ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বায়রার যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করা হয়। যার মূল হোতা ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন ও কাজী মফিজুর রহমান। এই হোতাদের সহযোগিতা করতেন তখনকার মন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বায়রাকে একটি দলীয় সংগঠন হিসেবে ব্যবহার করতেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটে রহুল আমীনের সাথে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি নিজাম হাজারী, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ।

ফখরুল ইসলামের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেইসময় ৫০ হাজার শ্রমিক প্রতারণা হয়েছে। তাদের প্রত্যকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ফলে এই সেক্টরের উদ্যোক্তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন এই সিন্ডিকেট কিভাবে করা হয়েছিল এই প্রশ্নে ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি বংশধর দাতুশ্রী আমীনের পাটর্নার বায়রার সাবেক মহাসচিব রহুল আমীন এই সিন্ডিকেট তৈরি করে।

ফখরুল ইসলামের অভিযোগ, দাতুশ্রী আমিনের মালয়েশিয়ান IT কোম্পানি Bestinet এবং এই কোম্পানির Manpower Recruitment Online পদ্ধতি FWCMS (Foreign workers centralized Management system), এই পদ্ধতির মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে শুধু মাত্র বিদেশ থেকে কর্মী আনয়নের অনলাইন সাপোর্ট এর জন্য চুক্তি হয় কিন্তু দাতুশ্রী আমিন নূর দুই দেশের সরকারের অসাধু লোকদের এবং বাংলাদেশে তার পার্টনার রুহুল আমিন স্বপনকে ব্যবহার করে উক্ত পদ্ধতির অপব্যবহার করে কর্মী পাঠানোর সকল প্রক্রিয়া কন্ট্রোল করে অর্থাৎ FWCMS ব্যবহার করে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় লিপ্ত হয়-উক্ত Fwcms online পদ্ধতির মাধ্যমে মালয়েশিয়া আরও ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিলেও বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে কোনও প্রকার সিন্ডিকেট করতে পারেনি। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মাধ্যমে সম্পাদিত এমওইউ (MOU) তে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সিলেকশন করার জন্য মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কিন্তু কোনো প্রকার ক্রাইটেরিয়া ছাড়াই ঘুষের মাধ্যমে রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতুশ্রী আমিন Fwcms system অপব্যবহার করে নিজেদের পছন্দ মতো রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেকশন করেন।

এ সময় বায়রার প্রতিনিধিরা আটটি দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো-

১. সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপনসহ সিন্ডিকেটের পরিকল্পনাকারী, বাস্তবায়নকারী, নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ সরকারে জড়িত মন্ত্রী এমপি ও নেতাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি, অনতিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২. কোনও ক্রমেই সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের পদাংক অনুসরণ করে সিন্ডিকেটে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যদি সিন্ডিকেট করার পুনরায় সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে বর্তমান সরকারের সাথে পূর্বের সরকারের কোনও পার্থক্য থাকবে না।

৩. দুই দেশের MOU সন্নিবেশিত বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকার সিলেকশন করার সুযোগ বাতিল করতে হবে। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি সিলেকশন করবে নিয়োগকর্তা। সিন্ডিকেট মুক্ত ভাবে সকল এজেন্সি কম খরচে বা বিনা খরচে কর্মী পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে সেন্টাল অনলাইন পদ্ধতি সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে যে সকল কর্মী যেতে পারেনি, তাদেরকে কম খরচে সিন্ডিকেট মুক্ত ভাবে পুনরায় মালয়েশিয়া পাঠানোর দাবি করছি।

৫. নেপালসহ অন্যান্য ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া যে প্রক্রিয়ায় কর্মী গ্রহণ করে ঠিক বাংলাদেশ থেকেও একই পক্রিয়ার শ্রমিক প্ররণের দাবি করছি।

৬. বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্থ FWCMS online পদ্ধতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব online পদ্ধতি এবং মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাবিত Epax পদ্ধতি বা manual পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭. FWCMS এর মাধ্যমে Medical পদ্ধতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত যে কোনও মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল চেকআপ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. Manual পদ্ধতিতে চালু হওয়া দূতাবাসের সত্যায়ন অব্যহত রাখা এবং সিন্ডিকেটকে সহায়তাকারী সাবেক ফ্যাসীবাদী আমলে নিয়োগকৃত মন্ত্রনালয় ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করছি।