এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন নোয়াখালী সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া মো. রায়হান। এ খবরে পরিবারে আনন্দের বদলে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
অঝোরে কাঁদছেন তার মা আমেনা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া রায়হান। তিনি জিপিএ ২ দশমিক ৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। তিনি রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফল জানতে পারে তার পরিবার। ওই ফল পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সোমবার রাজধানীর ঢাকার বাড্ডা এলাকায় ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিলে যোগদান করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রায়হান। এরপর ৬ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডার একটি বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটা মেসে থাকতেন।
রায়হানের বোন উর্মি আক্তার বলেন, আমার ভাই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার আচার-আচরণও ভালো ছিল। তার জন্য আমার বাবা-মা সব সময় কান্না করেন। আজ পরীক্ষার ফলাফলের খবর শুনে বাবা-মা আরও বেশি কান্না করছেন। আমার ভাই বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতেন।
রায়হানের মা আমেনা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে বেঁচে নেই, তার এই ফল দিয়ে কী হবে? সে পাস করেছে তা দিয়ে এখন কী করবো। তার আরও ভালো রেজাল্ট করার কথা। সে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা এখনো কান্না করে। নিজেরা না খেয়ে সন্তানকে খাইয়েছি। তাকে ঢাকায় পড়ালেখা করাইছি। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সব স্বপ্ন বুলেটে শেষ হয়ে গেছে।
গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এমএ কালাম বলেন, আমাদের কলেজ থেকে এ বছর শহীদ রায়হানসহ ৩৯৪ জন বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার মধ্যে ৩৮১ জন পাস করেছে। রায়হান জিপিএ ২.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ফলাফল আরও ভালো হওয়ার কথা। কীভাবে এত খারাপ হলো তা আমাদের জানা নেই। তবে তার মৃত্যু আমাদের এখনও কাঁদায়। সরকার যেন তার পরিবারের পাশে থাকে সে আশা করছি।