০৮:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পদের পাহাড় সাবেক ধর্মমন্ত্রীর পরিবারের

  • আপডেট: ১১:১৯:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • 1

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আত্মগোপনে আছেন তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন সাত ভাই সিন্ডিকেটের প্রধান সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের এমপি ও ধর্মমন্ত্রী ছিলেন। ছিলেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর সরকারি অর্থ লুটপাট করে পরিবারের সদস্যরা সম্পদের পাহাড় গড়েন। পাশাপাশি তারা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত দলীয় অফিসের নামে গড়ে তুলেছিল বহুতল ভবন।

সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের রয়েছে সাত সাতটি ভাই। নিজে মন্ত্রী আর ছয় ভাইকে বিভিন্ন সেক্টরে বসিয়ে সাড়ে ১৫ বছরে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আর এই আসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা ফরিদুল হক খান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক বিনা ভোটের নির্বাচনে এমপি বনে যান চারবার। অজ্ঞাত টানে শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন এই ফরিদ। মাত্র এইচএসসি পাস হয়েও দায়িত্ব পান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর। কথিত আছে হজ্জের টাকা কামানো মেশিন হিসেবেই ফরিদুল হক খান দুলাল হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর ফরিদুল হক খান ধর্মমন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়ে যান।

ধর্মমন্ত্রী ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তোলেন সাত ভাইয়ের পারিবারিক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুর্শেদুল হক খান মাসুদ। স্থানীয়ভাবে তিনি দরবেশ নামে পরিচিত। আর এই দরবেশই কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, নদী শাসন, বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ছিল মন্ত্রীর ভাই দরবেশের মুঠোয়। কোটি কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে তার মাধ্যমে।

ছোট্ট পাট ব্যবসা থেকেই সাত ভাই ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সংসার। এমপি-মন্ত্রী হয়ে হাতে পেয়েছেন আলাদিনের চেরাগ। টিনের ছাপরার কলার দোকান রাতারাতি হয়েছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ভবনে আনা হয় ইসলামী ব্যাংকসহ সরকারি বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ।

জানা যায়, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক জিয়ার হাত ধরে ফরিদুল হক খান যোগদান করেন আওয়ামী লীগে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী রাশেদ মোশারফকে টেক্কা দিয়ে বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। পরিত্র হজ দুর্নীতি এবং মডেল মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করেছেন কোটি কোটি টাকা। সাত ভাই, শ্যালক, স্ত্রী, দুই মেয়ে, মেয়ের জামাই, আত্মীয়স্বজন এবং নিজ নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে করেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। ইসলামপুরে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের ছোট মাসুম খান ও ঢাকায় সোহেল খানের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আর বিদেশে মেয়ে ও জামাই অস্ট্রেলিয়ায় করেছেন বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে ইসলামপুরে সরকারি জমিতে সরকারি প্রায় ১০ কোটি টাকায় নির্মাণ করেছেন ফরিদুল হক খান অডিটোরিয়াম। বাবা হাবিবুর রহমান খান মুক্তিযোদ্ধা না হলেও নিজ এলাকা পলবান্দা ইউনিয়নের সিরাজাবাদ গ্রামে ক্ষমতার দাপটে অন্যের জমি দখল করে সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাবার নামের আদ্যক্ষর (এইচআরখান) নামে করেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথিত জাদুঘর। যেটির ঠিকাদারি কাজ করেছেন মাসুম খান। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের কোনো কিছুই সংরক্ষিত নেই বলে জানান এলাকাবাসী। ঠিকাদারি ব্যবসা মানেই ছিল মাসুম খানের রাজত্ব।

ইসলামপুর একটি নদীভাঙন ও বন্যাকবলিত উপজেলা। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী এই উপজেলার বুকচিড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাড়ে ১৫ বছরে নদীভাঙন রোধ ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের লুটপাট করা হয়েছে হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রায় ৮০০ কোটি এবং ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁশ পাইলিং ও বালুর বস্তা ডাম্পিং নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আসা প্রকল্প থেকে মাসুম খান লুটপাট করেছেন কোটি কোটি টাকা।
উপজেলার সব পাট ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে পাট ব্যবসা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একক ভাবে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন মন্ত্রীর ইমিডিয়েট ছোট ভাই শাজাহান খান। স্থানীয় সরকার ও জনস্বাস্থ্য বিভাগে সাড়ে ১৫ বছরে যত প্রকল্প হয়েছে চেয়ারম্যান মেম্বার ও ঠিকাদারদের সব মালামাল নিতে হয়েছে আরেক ছোট ভাই তপন খানের ‘খান মেশিনারিজ’ থেকে ।

রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় ছোট ভাই সোহেল খানের রয়েছে সোলার ভিশন নামে একটি টেলিভিশন ও ফ্রিজ কোম্পানি, যার চেয়ারম্যান ফরিদুল হক খান। রাজার বাগে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট, প্লট, অস্ট্রেলিয়ায় ছোট মেয়ের রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি বাড়ি এবং সম্পদ। ইসলামপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে চার তলাবিশিষ্ট বিশাল আকারের বাণিজ্যিক ভবন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইসলামপুর কাঁসাশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের জমি নামমাত্র দামে কিনে নিয়ে করা হয়েছে মার্কেট। এ এখানেই মন্ত্রীর ভাইয়ের খান মেশিনারিজ। এর সাথে দখল করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সরকারি জমি।

সরকার পতনের পর বন্ধ হয়ে গেছে খান মেশিনারি। পৌরশহরের কিসামুজ্জাল্লা এলাকায় কয়েক বিঘা জমির উপর রয়েছে বিশাল বাড়ি। কিসামুজ্জাল্লা ও নিজ এলাকা সিরাজাবাদ গ্রামে রয়েছে কয়েক শ’ বিঘা কৃষি জমি । ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রয়েছে ছোট ভাই মাসুম খানের মালিকানাধীন যমুনা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে ওই হাসপাতালের জন্য করে নেয়া হয়েছে পৃথক গেট।
ইসলামপুরের সবচেয়ে বড় ওষুধের দোকান এইচআর খান মেডিক্যাল হল। যেখানে রয়েছে কোটি কোটি টাকার মালামাল। যেটি পরিচালনা করেন সাবেক ধর্মমন্ত্রীর ছোট ভাই স্বপন খান।

মাত্র ১৫ বছর আগে যে পরিবারটির একমাত্র ভরসা ছিল পাটের ব্যবসা। বর্তমানে ওই পরিবারের এক ডজনেরও বেশি সদস্য শত শত কোটি টাকার মালিক। কিভাবে এত সম্পদ হলো প্রশ্ন সচেতন মহলের ।

জানা যায়, গত হজ মৌসুমে হজে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা হারিয়ে যেতেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
কথিত আছে অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের নিকট টাকা পাচারের জন্যই তিনি কিছু সময়ের জন্য আত্মগোপন করেছিলেন।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পলানোর পর দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন এই ধর্মমন্ত্রী। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন সরকার।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

সম্পদের পাহাড় সাবেক ধর্মমন্ত্রীর পরিবারের

আপডেট: ১১:১৯:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আত্মগোপনে আছেন তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন সাত ভাই সিন্ডিকেটের প্রধান সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের এমপি ও ধর্মমন্ত্রী ছিলেন। ছিলেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর সরকারি অর্থ লুটপাট করে পরিবারের সদস্যরা সম্পদের পাহাড় গড়েন। পাশাপাশি তারা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত দলীয় অফিসের নামে গড়ে তুলেছিল বহুতল ভবন।

সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের রয়েছে সাত সাতটি ভাই। নিজে মন্ত্রী আর ছয় ভাইকে বিভিন্ন সেক্টরে বসিয়ে সাড়ে ১৫ বছরে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আর এই আসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা ফরিদুল হক খান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক বিনা ভোটের নির্বাচনে এমপি বনে যান চারবার। অজ্ঞাত টানে শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন এই ফরিদ। মাত্র এইচএসসি পাস হয়েও দায়িত্ব পান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর। কথিত আছে হজ্জের টাকা কামানো মেশিন হিসেবেই ফরিদুল হক খান দুলাল হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর ফরিদুল হক খান ধর্মমন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়ে যান।

ধর্মমন্ত্রী ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তোলেন সাত ভাইয়ের পারিবারিক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুর্শেদুল হক খান মাসুদ। স্থানীয়ভাবে তিনি দরবেশ নামে পরিচিত। আর এই দরবেশই কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, নদী শাসন, বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ছিল মন্ত্রীর ভাই দরবেশের মুঠোয়। কোটি কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে তার মাধ্যমে।

ছোট্ট পাট ব্যবসা থেকেই সাত ভাই ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সংসার। এমপি-মন্ত্রী হয়ে হাতে পেয়েছেন আলাদিনের চেরাগ। টিনের ছাপরার কলার দোকান রাতারাতি হয়েছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ভবনে আনা হয় ইসলামী ব্যাংকসহ সরকারি বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ।

জানা যায়, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক জিয়ার হাত ধরে ফরিদুল হক খান যোগদান করেন আওয়ামী লীগে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী রাশেদ মোশারফকে টেক্কা দিয়ে বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। পরিত্র হজ দুর্নীতি এবং মডেল মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করেছেন কোটি কোটি টাকা। সাত ভাই, শ্যালক, স্ত্রী, দুই মেয়ে, মেয়ের জামাই, আত্মীয়স্বজন এবং নিজ নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে করেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। ইসলামপুরে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের ছোট মাসুম খান ও ঢাকায় সোহেল খানের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আর বিদেশে মেয়ে ও জামাই অস্ট্রেলিয়ায় করেছেন বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে ইসলামপুরে সরকারি জমিতে সরকারি প্রায় ১০ কোটি টাকায় নির্মাণ করেছেন ফরিদুল হক খান অডিটোরিয়াম। বাবা হাবিবুর রহমান খান মুক্তিযোদ্ধা না হলেও নিজ এলাকা পলবান্দা ইউনিয়নের সিরাজাবাদ গ্রামে ক্ষমতার দাপটে অন্যের জমি দখল করে সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাবার নামের আদ্যক্ষর (এইচআরখান) নামে করেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথিত জাদুঘর। যেটির ঠিকাদারি কাজ করেছেন মাসুম খান। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের কোনো কিছুই সংরক্ষিত নেই বলে জানান এলাকাবাসী। ঠিকাদারি ব্যবসা মানেই ছিল মাসুম খানের রাজত্ব।

ইসলামপুর একটি নদীভাঙন ও বন্যাকবলিত উপজেলা। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী এই উপজেলার বুকচিড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাড়ে ১৫ বছরে নদীভাঙন রোধ ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের লুটপাট করা হয়েছে হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রায় ৮০০ কোটি এবং ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁশ পাইলিং ও বালুর বস্তা ডাম্পিং নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আসা প্রকল্প থেকে মাসুম খান লুটপাট করেছেন কোটি কোটি টাকা।
উপজেলার সব পাট ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে পাট ব্যবসা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একক ভাবে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন মন্ত্রীর ইমিডিয়েট ছোট ভাই শাজাহান খান। স্থানীয় সরকার ও জনস্বাস্থ্য বিভাগে সাড়ে ১৫ বছরে যত প্রকল্প হয়েছে চেয়ারম্যান মেম্বার ও ঠিকাদারদের সব মালামাল নিতে হয়েছে আরেক ছোট ভাই তপন খানের ‘খান মেশিনারিজ’ থেকে ।

রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় ছোট ভাই সোহেল খানের রয়েছে সোলার ভিশন নামে একটি টেলিভিশন ও ফ্রিজ কোম্পানি, যার চেয়ারম্যান ফরিদুল হক খান। রাজার বাগে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট, প্লট, অস্ট্রেলিয়ায় ছোট মেয়ের রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি বাড়ি এবং সম্পদ। ইসলামপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে চার তলাবিশিষ্ট বিশাল আকারের বাণিজ্যিক ভবন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইসলামপুর কাঁসাশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের জমি নামমাত্র দামে কিনে নিয়ে করা হয়েছে মার্কেট। এ এখানেই মন্ত্রীর ভাইয়ের খান মেশিনারিজ। এর সাথে দখল করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সরকারি জমি।

সরকার পতনের পর বন্ধ হয়ে গেছে খান মেশিনারি। পৌরশহরের কিসামুজ্জাল্লা এলাকায় কয়েক বিঘা জমির উপর রয়েছে বিশাল বাড়ি। কিসামুজ্জাল্লা ও নিজ এলাকা সিরাজাবাদ গ্রামে রয়েছে কয়েক শ’ বিঘা কৃষি জমি । ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রয়েছে ছোট ভাই মাসুম খানের মালিকানাধীন যমুনা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে ওই হাসপাতালের জন্য করে নেয়া হয়েছে পৃথক গেট।
ইসলামপুরের সবচেয়ে বড় ওষুধের দোকান এইচআর খান মেডিক্যাল হল। যেখানে রয়েছে কোটি কোটি টাকার মালামাল। যেটি পরিচালনা করেন সাবেক ধর্মমন্ত্রীর ছোট ভাই স্বপন খান।

মাত্র ১৫ বছর আগে যে পরিবারটির একমাত্র ভরসা ছিল পাটের ব্যবসা। বর্তমানে ওই পরিবারের এক ডজনেরও বেশি সদস্য শত শত কোটি টাকার মালিক। কিভাবে এত সম্পদ হলো প্রশ্ন সচেতন মহলের ।

জানা যায়, গত হজ মৌসুমে হজে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা হারিয়ে যেতেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
কথিত আছে অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের নিকট টাকা পাচারের জন্যই তিনি কিছু সময়ের জন্য আত্মগোপন করেছিলেন।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পলানোর পর দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন এই ধর্মমন্ত্রী। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন সরকার।