নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সাভার থানার এসআই ক্লোজড

  • আপডেট: ০১:২৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • 15

নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সাভার মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) রাজিব শিকদারকে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আহম্মদ মুঈদ।

এসআই রাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের আমলে একের পর এক গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করেছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের। এবার পুরোনো স্টাইলেই ঢালাও মামলায় গণআসামি করে কোটি টাকার বাণিজ্যে নামেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সাভার মডেল থানা। পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমনকি সাব-ইন্সপেক্টরদের বদলি করা হলেও রহস্যজনক কারণে সাভার থানাতেই থেকে যান রাজিব সিকদার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা জানান, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব দমনে ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ করে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এসআই রাজিব সিকদার।

আন্দোলনে শহিদ এবং আহত পরিবারের পক্ষে হত্যা এবং হত্যা প্রচেষ্টার মামলায় ইচ্ছামতো এবং ঢালাও আসামি সাজিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা বাণিজ্য মিশনে নামেন এসআই রাজিব শিকদার।

গত ২০ জুলাই ছাত্র-জনতার অহিংস আন্দোলন চলাকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে গুলিবিদ্ধ হন মুদি দোকানদার ইসরাফিল হোসেন। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হলে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেও ডান হাতটি অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ইতোমধ্যে চড়া সুদ ও ধারদেনা করে ব্যয় করেছেন ১০ লক্ষাধিক টাকা।

গুলিবিদ্ধ ইসরাফিল হোসেনের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন এসআই রাজিব। বলেন, মামলা দায়ের করা হলে সরকারের খাতায় একটি রেকর্ড থাকবে। আপনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণও পাবেন।

এসআই রাজিব সিকদার তাকে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নিয়ে যান।

সেখানে দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মনগড়া মামলা সাজিয়ে তাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। রাজিব শিকদারের মনোভাব বুঝতে পেরে কৌশলে তিনি আদালত থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর একের পর এক টেলিফোনে মামলার বাদী হলে মোটা অংকের অর্থের লোভ দেখান এসআই রাজিব।

সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেনের সঙ্গে সাভার মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর রাজিব শিকদারের একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

সেখানে মামলা করতে অনিচ্ছুক মুদি দোকানদার ইসরাফিলকে বলেন, আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। মামলা করলেই আপনি টাকা পাবেন।

ইসরাফিল বলেন, যাদেরকে আসামি করা হয়েছে আমি তো তাদের কাউকে চিনি না। আর আমাকে গুলি করেছে পুলিশ। আমি কেন নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব?

এসআই বলেন, আরে কোনো সমস্যা নাই। কোর্টে যাবেন। আসামি ধরে ধরে এফিডেভিট করে আপনি বলবেন ভুল করে আসামি দেওয়া হয়েছে প্রতিটা আসামির কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে পাবেন।

ইসরাফিল বলেন, আমি মিথ্যা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন এতদিন আদালতে ঘুরে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে, সেই টাকাটা দেবেন নইলে বিপদ আছে।

যোগাযোগ করা হলে এসআই রাজিব সিকদার এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি প্রকৃতপক্ষে গুলিবিদ্ধ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু বিষয়টি এতদূর গড়াবে এটা ভাবতে পারেননি।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা জানান, বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণ আইনের পরিপন্থি।

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা ফৌজদারি অপরাধ জানিয়ে এ ধরনের মামলা না করতে গত ১৪ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তা সত্ত্বেও একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণ আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। বিষয়টি পুলিশ সুপার স্যারকে জানানোর পর তাকে শনিবার রাতে সাভার মডেল থানা থেকে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

Tag :

নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সাভার থানার এসআই ক্লোজড

আপডেট: ০১:২৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সাভার মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) রাজিব শিকদারকে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আহম্মদ মুঈদ।

এসআই রাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের আমলে একের পর এক গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করেছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের। এবার পুরোনো স্টাইলেই ঢালাও মামলায় গণআসামি করে কোটি টাকার বাণিজ্যে নামেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সাভার মডেল থানা। পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমনকি সাব-ইন্সপেক্টরদের বদলি করা হলেও রহস্যজনক কারণে সাভার থানাতেই থেকে যান রাজিব সিকদার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা জানান, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব দমনে ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ করে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এসআই রাজিব সিকদার।

আন্দোলনে শহিদ এবং আহত পরিবারের পক্ষে হত্যা এবং হত্যা প্রচেষ্টার মামলায় ইচ্ছামতো এবং ঢালাও আসামি সাজিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা বাণিজ্য মিশনে নামেন এসআই রাজিব শিকদার।

গত ২০ জুলাই ছাত্র-জনতার অহিংস আন্দোলন চলাকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে গুলিবিদ্ধ হন মুদি দোকানদার ইসরাফিল হোসেন। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হলে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেও ডান হাতটি অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ইতোমধ্যে চড়া সুদ ও ধারদেনা করে ব্যয় করেছেন ১০ লক্ষাধিক টাকা।

গুলিবিদ্ধ ইসরাফিল হোসেনের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন এসআই রাজিব। বলেন, মামলা দায়ের করা হলে সরকারের খাতায় একটি রেকর্ড থাকবে। আপনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণও পাবেন।

এসআই রাজিব সিকদার তাকে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নিয়ে যান।

সেখানে দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মনগড়া মামলা সাজিয়ে তাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। রাজিব শিকদারের মনোভাব বুঝতে পেরে কৌশলে তিনি আদালত থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর একের পর এক টেলিফোনে মামলার বাদী হলে মোটা অংকের অর্থের লোভ দেখান এসআই রাজিব।

সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেনের সঙ্গে সাভার মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর রাজিব শিকদারের একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

সেখানে মামলা করতে অনিচ্ছুক মুদি দোকানদার ইসরাফিলকে বলেন, আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। মামলা করলেই আপনি টাকা পাবেন।

ইসরাফিল বলেন, যাদেরকে আসামি করা হয়েছে আমি তো তাদের কাউকে চিনি না। আর আমাকে গুলি করেছে পুলিশ। আমি কেন নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব?

এসআই বলেন, আরে কোনো সমস্যা নাই। কোর্টে যাবেন। আসামি ধরে ধরে এফিডেভিট করে আপনি বলবেন ভুল করে আসামি দেওয়া হয়েছে প্রতিটা আসামির কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে পাবেন।

ইসরাফিল বলেন, আমি মিথ্যা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন এতদিন আদালতে ঘুরে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে, সেই টাকাটা দেবেন নইলে বিপদ আছে।

যোগাযোগ করা হলে এসআই রাজিব সিকদার এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি প্রকৃতপক্ষে গুলিবিদ্ধ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু বিষয়টি এতদূর গড়াবে এটা ভাবতে পারেননি।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা জানান, বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণ আইনের পরিপন্থি।

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা ফৌজদারি অপরাধ জানিয়ে এ ধরনের মামলা না করতে গত ১৪ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তা সত্ত্বেও একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণ আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। বিষয়টি পুলিশ সুপার স্যারকে জানানোর পর তাকে শনিবার রাতে সাভার মডেল থানা থেকে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।