যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দেশটিতে নির্বাচন হবে। ভোট নিয়ে সর্বশেষ দেশটির জাতীয় গণমাধ্যম এনবিসি নিউজ জরিপ প্রকাশ করেছে।
এতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়েই ৪৯ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন এবং শুধুমাত্র ২ শতাংশ ভোটার কোনো মতামত জানাননি। খবর তাসের।
এনবিসি উল্লেখ করেছে যে, কমলা হ্যারিসের সমর্থকরা গণতন্ত্র সুসংহত করা, গর্ভপাত ইস্যুতে ট্রাম্পের ওপর বিরক্ত এবং কমলা হ্যারিসের জন্য সমর্থকরা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের।
টিভি চ্যানেলটির মতে, ট্রাম্পের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থক বিশ্বাস করেন যে জাতি ভুল পথে চলেছে, এ জন্য তারা এবার ট্রাম্পকে ভোট দিতে চান। তারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড বিরক্ত। জরিপটি ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ১০০০ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে চালানো হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। ডেমোক্র্যাট নেতা বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জুনের বিতর্কে খারাপ পারফরম্যান্সের পর নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেন। পরে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে কমলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র প্রতিযোগিতায় সরব হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনের আগেই ইতোমধ্যে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন নাগরিক, যা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশন ল্যাব ট্র্যাকারের তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৭৫,০৯৩,৮৭২ জন ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। যা করোনা ভাইরাস মহামারির পর প্রথমবারের মতো ভোট প্রদান প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ। এবারের নির্বাচনটি ২০২০ সালের মতো নয়, যখন মহামারির কারণে অধিকাংশ ভোটার মেইলে ভোট দিয়েছিলেন। এবার অধিকাংশ ভোটারই সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে তাদের আগাম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
এদিকে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত দক্ষিণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। কমলা হ্যারিস জর্জিয়ার আটলান্টাতে একটি জনসভা করেন এবং পরে নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটেও এক র্যালিতে অংশ নেন।
জর্জিয়ায় অনুষ্ঠিত জনসভায় কমলা হ্যারিস বলেন, ট্রাম্প কেবল তার ‘শত্রুদের তালিকা’ নিয়েই ব্যস্ত। তবে আমি আমার ‘কাজের তালিকা’ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই। কমলা এ সময় ট্রাম্পকে ‘প্রতিশোধে মত্ত’ এবং ‘অস্থির মনোভাবাপন্ন’ ব্যক্তি হিসেবেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি আসলে এমন একজন মানুষ, যিনি আপনার জীবনকে আরো উন্নত করার চিন্তা করছেন না, বরং তিনি অস্থিরতা, ক্ষোভ এবং ক্ষমতার লোভে মত্ত’।
অপরদিকে ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলিনার গ্যাস্টোনিয়ার পর ভার্জিনিয়ার সেলেমে এবং গ্রিনসবার্গে তার প্রচারণা চালিয়েছেন। ট্রাম্প তার গ্যাস্টোনিয়ার জনসভায় বলেছেন, ‘কমলা সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমি তার সবই পুনর্গঠন করব এবং আমেরিকা আবার সমৃদ্ধ হবে’।
তবে বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, কমলা এবং ট্রাম্প বর্তমানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটে সমান তালে এগিয়ে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে মূলত সরাসরি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় না, হয় ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে। ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি প্রতিনিধির ভোটেই নির্ধারিত হয় কে হবেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। আর নির্বাচনে জয় পেতে প্রার্থীদের মোট ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট বা ব্যাটলগ্রাউন্ড খ্যাত অঙ্গরাজ্যগুলোতেই এই ভোটগুলো কেন্দ্রীভূত থাকে। এসব রাজ্যে জয়লাভ করাই প্রার্থীদের বিজয়ের পথকে প্রশস্ত করতে পারে। কারণ অধিকাংশ অঙ্গরাজ্য জয়ী প্রার্থীকেই তাদের ইলেকটোরাল ভোটগুলো সরাসরি প্রদান করে।
বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনের ফলাফল কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নেতার ওপরও প্রভাব ফেলবে। হ্যারিস বা ট্রাম্পের বিজয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে আমেরিকার নীতিগত অবস্থান বদলে যেতে পারে। যা ভবিষ্যতে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।