বাংলাদেশ জিএসপি ও অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতায় ইউরোপের নীতির সংশোধন চায়

  • আপডেট: ১২:২০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • 11

ফাইল ছবি

ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতা এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা নীতির সংশোধন চেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ কমিশন সভায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

সভায় এলডিসি উত্তরণের পরও বাংলাদেশ যেন ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধা পায় সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। একই সঙ্গে বহুপাক্ষিক উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সভাকক্ষে সোমবার (৪ নভেম্বর) দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের ১১তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং ইইউয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় আরও দক্ষ শ্রমিক নিতে চায় ইইউ। ইউরোপের দেশগুলো প্রায় ১০টি খাতে বাংলাদেশ থেকে জনবল নিতে আগ্রহী। ইইউভুক্ত ওই দেশগুলোতে বৈধপথে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে সরকার। সব কিছু ঠিক থাকলে দু’পক্ষের সম্মতিতে রোডম্যাপটি প্রকাশ করা হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে জার্মানি, ইতালি, গ্রিস ও রোমানিয়া জনশক্তি নিতে আগ্রহী। যৌথ কমিশন সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে খাতগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-আইসিটি, কেয়ারগিভিং, নির্মাণশিল্প, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত, জাহাজ নির্মাণ ও তৈরি পোশাকশিল্প।

২০২২ সালের এপ্রিলে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম ঘোষণা করে ইইউ। এর মাধ্যমে ইইউভুক্ত দেশগুলোর বাইরে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে বিবেচনায় নিয়েছে, যেখান থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলো দক্ষ শ্রমিক নিতে চায়। সে হিসেবে বৈধপথে ইউরোপে বাংলাদেশি পাঠানোর সুযোগ আরও বাড়বে।

ট্যালেন্ট পার্টনারশিপের অগ্রগতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করে বাংলাদেশ-ইইউ। একদিকে ইউরোপ বৈধপথে আরও দক্ষ শ্রমিক চায়, অন্যদিকে অবৈধপথে নানানভাবে অনেক বাংলাদেশি ইউরোপে বসবাস করছে। তাদের বৈধতা দেওয়ার সুপারিশও করেছে বাংলাদেশ।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, জিএসপি নীতির সংশোধন নিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম ইইউ নতুন (খসড়া) জিএসপি স্কিম, বিশেষ করে সুরক্ষা ধারাগুলো সংশোধন করার কথা বিবেচনা করা। যেন বাংলাদেশের সব পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্যগুলো জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে পারে।

এছাড়া বাংলাদেশের পণ্য যেন শুল্কমুক্তভাবে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য জিএসপির কিছু নীতি সংশোধন করার অনুরোধ করা হয়েছে। নতুন ইইউ জিএসপি ব্যবস্থা এবং এর সুরক্ষা বিধানগুলো স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এলডিসি উত্তরণের কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে যেন ইইউ বাজার শাস্তি না দেয় সেই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইইউ। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধার আওতায় ইবিএ (অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্য) ক্যাটাগরিতে পণ্য রপ্তানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যদি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতও হয়, তারপরও ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে।

জিএসপি সুবিধা হারালে শূন্য শতাংশের বদলে বাংলাদেশকে রাতারাতি ১২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে।

সভায় জিএসপি সুবিধার সময়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ। তবে কারখানার কমপ্লায়েন্স বা উন্নত কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের নানা বিষয়গুলো দেখে জিএসপি সুবিধার সময় বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানায় ইইউ প্রতিনিধি।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ইইউ অতিরিক্ত তিন বছরের ট্রানজিশন পিরিয়ড দিয়েছে। ফলে ২০২৯ সালের নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের একই সুবিধাগুলোর অ্যাক্সেস থাকবে। ২০২৯ সালে তিন বছরের ট্রানজিশন পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরে, বাংলাদেশ কীভাবে এই সুবিধা আরও বাড়াতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিকল্পভাবে বাংলাদেশ জিএসপি স্কিমের জন্য আবেদন করতে পারে, যা টেক্সটাইল এবং পোশাকসহ ইইউ শুল্ক লাইনের ৬৬ শতাংশে শুল্কমুক্ত অ্যাক্সেস থাকবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই দুটি মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। যার একটি দুর্বলতার মানদণ্ড এবং অন্যটি টেকসই উন্নয়নের মানদণ্ড। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যেসব সংকটে পড়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, এসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি হওয়ার ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে বলে দাবি বাংলাদেশের।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের জুলাই ২০২৪ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক আউটলুক প্রকাশ হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ২ এবং ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশকে প্রভাবিত করেছে এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো এখানকার (বাংলাদেশের) উন্নয়নকেও শ্লথ করে দিয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ।

যৌথ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার দেখানো হয় ৭ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং বর্তমান অর্থবছরের জন্য অনুমান করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এসব বিষয় নিয়ে যৌথ কমিশন সভায় আলোচনা হয়। বাংলাদেশে বৈশ্বিক ঋণ, অনুদান ও ঋণ পরিশোধের সাম্প্রতিক চিত্র নিয়েও আলোচনা হয়েছে যৌথ কমিশন সভায়।

ইইউ জানায়, দেশের আর্থিক খাতে সঠিক নীতি এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবিলা করা প্রয়োজন এমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে সুশাসন, ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক ও ঋণ পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার, পুঁজিবাজার ব্যবস্থাপনা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভোগ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়েও আরও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দরকার। এখানে দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বাংলাদেশকে ছাড়ের শর্তে ঋণ ও ক্রেডিট নিতে হবে।

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়পক্ষ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশের মানুষ, সরকার, পাশাপাশি এনজিওসহ আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী সম্প্রদায় যৌথভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সৃষ্ট মানবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সরকার ও জনগণের উদার-মানবিক ভূমিকা এবং কর্মের জন্য ইইউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

সভায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ উভয়ই বাণিজ্য ও বিনিয়োগপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার লক্ষ্যে একমত হয়েছে। এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) নীতিতে দুপক্ষ বাণিজ্য করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

ইইউ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, ইইউ-বাংলাদেশ জলবায়ু সংলাপকে আরও বাড়ানোর জন্য উভয়পক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়। শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকারের সম্মানের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের যে কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক শর্তযুক্ত।

বাংলাদেশ সরকার শ্রম অধিকারের মানসম্পন্ন টেকসই সংস্কার এবং ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনগুলো মেনে চলবে। ইইউ এবং বাংলাদেশ শ্রম ও মানবাধিকারের সঙ্গে সম্মতি জোরদার করার কয়েকটি বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে সম্মত হয়েছে।

Tag :

বাংলাদেশ জিএসপি ও অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতায় ইউরোপের নীতির সংশোধন চায়

আপডেট: ১২:২০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতা এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা নীতির সংশোধন চেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ কমিশন সভায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

সভায় এলডিসি উত্তরণের পরও বাংলাদেশ যেন ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধা পায় সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। একই সঙ্গে বহুপাক্ষিক উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সভাকক্ষে সোমবার (৪ নভেম্বর) দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের ১১তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং ইইউয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় আরও দক্ষ শ্রমিক নিতে চায় ইইউ। ইউরোপের দেশগুলো প্রায় ১০টি খাতে বাংলাদেশ থেকে জনবল নিতে আগ্রহী। ইইউভুক্ত ওই দেশগুলোতে বৈধপথে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে সরকার। সব কিছু ঠিক থাকলে দু’পক্ষের সম্মতিতে রোডম্যাপটি প্রকাশ করা হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে জার্মানি, ইতালি, গ্রিস ও রোমানিয়া জনশক্তি নিতে আগ্রহী। যৌথ কমিশন সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে খাতগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-আইসিটি, কেয়ারগিভিং, নির্মাণশিল্প, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত, জাহাজ নির্মাণ ও তৈরি পোশাকশিল্প।

২০২২ সালের এপ্রিলে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম ঘোষণা করে ইইউ। এর মাধ্যমে ইইউভুক্ত দেশগুলোর বাইরে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে বিবেচনায় নিয়েছে, যেখান থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলো দক্ষ শ্রমিক নিতে চায়। সে হিসেবে বৈধপথে ইউরোপে বাংলাদেশি পাঠানোর সুযোগ আরও বাড়বে।

ট্যালেন্ট পার্টনারশিপের অগ্রগতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করে বাংলাদেশ-ইইউ। একদিকে ইউরোপ বৈধপথে আরও দক্ষ শ্রমিক চায়, অন্যদিকে অবৈধপথে নানানভাবে অনেক বাংলাদেশি ইউরোপে বসবাস করছে। তাদের বৈধতা দেওয়ার সুপারিশও করেছে বাংলাদেশ।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, জিএসপি নীতির সংশোধন নিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম ইইউ নতুন (খসড়া) জিএসপি স্কিম, বিশেষ করে সুরক্ষা ধারাগুলো সংশোধন করার কথা বিবেচনা করা। যেন বাংলাদেশের সব পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্যগুলো জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে পারে।

এছাড়া বাংলাদেশের পণ্য যেন শুল্কমুক্তভাবে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য জিএসপির কিছু নীতি সংশোধন করার অনুরোধ করা হয়েছে। নতুন ইইউ জিএসপি ব্যবস্থা এবং এর সুরক্ষা বিধানগুলো স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এলডিসি উত্তরণের কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে যেন ইইউ বাজার শাস্তি না দেয় সেই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইইউ। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধার আওতায় ইবিএ (অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্য) ক্যাটাগরিতে পণ্য রপ্তানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যদি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতও হয়, তারপরও ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে।

জিএসপি সুবিধা হারালে শূন্য শতাংশের বদলে বাংলাদেশকে রাতারাতি ১২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে।

সভায় জিএসপি সুবিধার সময়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ। তবে কারখানার কমপ্লায়েন্স বা উন্নত কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের নানা বিষয়গুলো দেখে জিএসপি সুবিধার সময় বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানায় ইইউ প্রতিনিধি।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ইইউ অতিরিক্ত তিন বছরের ট্রানজিশন পিরিয়ড দিয়েছে। ফলে ২০২৯ সালের নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের একই সুবিধাগুলোর অ্যাক্সেস থাকবে। ২০২৯ সালে তিন বছরের ট্রানজিশন পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরে, বাংলাদেশ কীভাবে এই সুবিধা আরও বাড়াতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিকল্পভাবে বাংলাদেশ জিএসপি স্কিমের জন্য আবেদন করতে পারে, যা টেক্সটাইল এবং পোশাকসহ ইইউ শুল্ক লাইনের ৬৬ শতাংশে শুল্কমুক্ত অ্যাক্সেস থাকবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই দুটি মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। যার একটি দুর্বলতার মানদণ্ড এবং অন্যটি টেকসই উন্নয়নের মানদণ্ড। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যেসব সংকটে পড়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, এসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি হওয়ার ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে বলে দাবি বাংলাদেশের।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের জুলাই ২০২৪ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক আউটলুক প্রকাশ হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ২ এবং ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশকে প্রভাবিত করেছে এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো এখানকার (বাংলাদেশের) উন্নয়নকেও শ্লথ করে দিয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ।

যৌথ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার দেখানো হয় ৭ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং বর্তমান অর্থবছরের জন্য অনুমান করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এসব বিষয় নিয়ে যৌথ কমিশন সভায় আলোচনা হয়। বাংলাদেশে বৈশ্বিক ঋণ, অনুদান ও ঋণ পরিশোধের সাম্প্রতিক চিত্র নিয়েও আলোচনা হয়েছে যৌথ কমিশন সভায়।

ইইউ জানায়, দেশের আর্থিক খাতে সঠিক নীতি এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবিলা করা প্রয়োজন এমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে সুশাসন, ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক ও ঋণ পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার, পুঁজিবাজার ব্যবস্থাপনা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভোগ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়েও আরও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দরকার। এখানে দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বাংলাদেশকে ছাড়ের শর্তে ঋণ ও ক্রেডিট নিতে হবে।

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়পক্ষ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশের মানুষ, সরকার, পাশাপাশি এনজিওসহ আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী সম্প্রদায় যৌথভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সৃষ্ট মানবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সরকার ও জনগণের উদার-মানবিক ভূমিকা এবং কর্মের জন্য ইইউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

সভায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ উভয়ই বাণিজ্য ও বিনিয়োগপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার লক্ষ্যে একমত হয়েছে। এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) নীতিতে দুপক্ষ বাণিজ্য করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

ইইউ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, ইইউ-বাংলাদেশ জলবায়ু সংলাপকে আরও বাড়ানোর জন্য উভয়পক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়। শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকারের সম্মানের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের যে কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক শর্তযুক্ত।

বাংলাদেশ সরকার শ্রম অধিকারের মানসম্পন্ন টেকসই সংস্কার এবং ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনগুলো মেনে চলবে। ইইউ এবং বাংলাদেশ শ্রম ও মানবাধিকারের সঙ্গে সম্মতি জোরদার করার কয়েকটি বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে সম্মত হয়েছে।