ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

  • আপডেট: ০৫:৫৮:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  • 0

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও চার প্ল্যাটফর্মের সম্মিলিত একটি পক্ষ। এই চার প্ল্যাটফর্মে আছে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ এবং শহিদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর অনুমতি এখনি দিতে হবে এই দাবিতে সেখানে অবস্থান করছিল। খবর পেয়ে এর প্রতিবাদে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ সেখানে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়৷ এ সময় চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷পরবর্তীতে একই দাবিতে রাত সাড়ে ১১টায় শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে সেখানে যোগ দেয়।

এ সময় তারা ‘ভারতীয় আগ্রাসন, মানি না মানব না’, ‘দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ চলবে না’, ‘মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া, ভবন নির্মাণ হবে না’, ‘আবাসিক হলের সামনে, ভবন নির্মাণ হবে না’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকে।

এ সময় আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চের নেতারা জানান, আমরা সবসময় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। যখন প্রতিবেশী দেশ ভারত নানাভাবে আমাদের ওপর আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করছে, সেখানে এরকম একটি দেশের অর্থায়নে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভবন নির্মাণ হতে পারে না। আমরা ভবন চাই, তবে সেটা আমাদের নিজেদের অর্থায়নেই ভবন নির্মাণ করতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের নেতারা বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আপত্তি থাকলেও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদেরকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে এই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন প্রকল্প পরিচালক ময়েজ উদ্দিন।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইমন বলেন, যারা মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নির্বিচারে এত গুলো গাছ কেটে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার পেছনে জড়িত, আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা চারুকলা ভবন বা কোনো বিভাগের বিরুদ্ধে না, আমরা আমাদের আবাসিক হলের পাশে কোনো ধরনের একাডেমিক ভবন চাই না। সালাম-বরকত হলের পাশে একটি মাঠ হচ্ছে, মাঠ হলে এমনিতেই কোলাহল বাড়বে। আবার যখন একটি ছয়তলা একডেমিক ভবন নির্মাণ হবে, তখন সামগ্রিকভাবে হলের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই আমরা কোনোভাবেই এখানে একাডেমিক ভবন হতে দেবো না।

এর আগে দুপুর বারোটা থেকে দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ এ সময় আটকা পড়েন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে রাত নয়টা পেরিয়ে গেলেও তারা অবরোধ তুলে না নিলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সেখানে আসেন।

এ সময় উপাচার্য চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সমাধান ও আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান৷

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী ২৮ নভেম্বর সব পক্ষকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আমরা একটি সভার আয়োজন করব। সেখানে সকলের যৌক্তিক মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই।

Tag :

ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আপডেট: ০৫:৫৮:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও চার প্ল্যাটফর্মের সম্মিলিত একটি পক্ষ। এই চার প্ল্যাটফর্মে আছে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ এবং শহিদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর অনুমতি এখনি দিতে হবে এই দাবিতে সেখানে অবস্থান করছিল। খবর পেয়ে এর প্রতিবাদে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ সেখানে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়৷ এ সময় চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷পরবর্তীতে একই দাবিতে রাত সাড়ে ১১টায় শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে সেখানে যোগ দেয়।

এ সময় তারা ‘ভারতীয় আগ্রাসন, মানি না মানব না’, ‘দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ চলবে না’, ‘মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া, ভবন নির্মাণ হবে না’, ‘আবাসিক হলের সামনে, ভবন নির্মাণ হবে না’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকে।

এ সময় আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চের নেতারা জানান, আমরা সবসময় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। যখন প্রতিবেশী দেশ ভারত নানাভাবে আমাদের ওপর আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করছে, সেখানে এরকম একটি দেশের অর্থায়নে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভবন নির্মাণ হতে পারে না। আমরা ভবন চাই, তবে সেটা আমাদের নিজেদের অর্থায়নেই ভবন নির্মাণ করতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের নেতারা বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আপত্তি থাকলেও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদেরকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে এই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন প্রকল্প পরিচালক ময়েজ উদ্দিন।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইমন বলেন, যারা মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নির্বিচারে এত গুলো গাছ কেটে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার পেছনে জড়িত, আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা চারুকলা ভবন বা কোনো বিভাগের বিরুদ্ধে না, আমরা আমাদের আবাসিক হলের পাশে কোনো ধরনের একাডেমিক ভবন চাই না। সালাম-বরকত হলের পাশে একটি মাঠ হচ্ছে, মাঠ হলে এমনিতেই কোলাহল বাড়বে। আবার যখন একটি ছয়তলা একডেমিক ভবন নির্মাণ হবে, তখন সামগ্রিকভাবে হলের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই আমরা কোনোভাবেই এখানে একাডেমিক ভবন হতে দেবো না।

এর আগে দুপুর বারোটা থেকে দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ এ সময় আটকা পড়েন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে রাত নয়টা পেরিয়ে গেলেও তারা অবরোধ তুলে না নিলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সেখানে আসেন।

এ সময় উপাচার্য চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সমাধান ও আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান৷

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী ২৮ নভেম্বর সব পক্ষকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আমরা একটি সভার আয়োজন করব। সেখানে সকলের যৌক্তিক মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই।