ত্রাণকর্মীর ছদ্মবেশে মার্কিন-ইসরায়েলের গুপ্তচরবৃত্তি

  • আপডেট: ০৪:৫৩:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
  • 23

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। তারা বলছে, আটক ব্যক্তিরা মার্কিন-ইসরায়েলি নেটওয়ার্কের গুপ্তচর। এ ব্যাপারে তাদের কাছে যথার্থ প্রমাণ রয়েছে।

আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়, সোমবার (১০ জুন) গুপ্তচর আটকের ঘোষণা দেয় হুতি। তারা বলে, মার্কিন-ইসরায়েলি গুপ্তচর নেটওয়ার্কের পুরো একটি সেলকে তারা আটক করতে সমর্থ হয়েছে। এ দলটি মানবিক কাজের আড়ালে ইয়েমেনের তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলে পাচার করত।

আটক ব্যক্তিরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর হয়ে কাজের অজুহাতে ইয়েমেনে অবস্থান করছিলেন। তাদের কাছে গুপ্তচরবৃত্তির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। তবে ঠিক কতজন আটক করা হয়েছে বা অভিযুক্তদের জাতীয়তা সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেয়নি গোষ্ঠীটি।

এদিকে জাতিসংঘ আটক ব্যক্তিদের ত্রাণকর্মী হিসেবে অভিহিত করেছে। হুতির ঘোষণার এক দিন আগে রোববার (৯ জুন) জাতিসংঘ জানায়, ১১ জনকে আটক করেছে হুতি। তারা মানবিক কাজে সেখানে অবস্থান করছিলেন। তাই এসব কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

গত বছর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে পশ্চিমা মালিকানাধীন জাহাজে হামলা করে আসছে। এ নিয়ে অঞ্চলটিতে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে গুপ্তচর আটকের ঘটনা ঘটল।

হুতি বলছে, লোহিত সাগরে ইসরায়েলি কোম্পানির মালিকাধীন বা ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বা সমর্থনকারী কোনো জাহাজকে নিরাপদে চলতে দেওয়া হবে না। গাজায় হামলা অব্যাহত থাকলে সেসব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেই যাবে তারা। এর মাধ্যমে মূলত ইসরায়েলের পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার খবর আসে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার শিকার জাহাজটি গ্রিসের মালিকানাধীন। হামলার কারণে জাহাজটিতে পানি ঢুকে যায়। পরে এটিকে উদ্ধার করা হয়। এ হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে হুতিরা।

হুতিরা জানিয়েছে, হামলার শিকার জাহাজটির নাম টিউটর। কয়লাবাহী জাহাজটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। জাহাজটি হামলার কারণে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, ড্রোনের হামলায় জাহাজে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলার ফলে জাহাজের ইঞ্জিন রুমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া জাহাজে পানি উঠতে শুরু করেছে।

মার্কিন সেনা সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ৫০টির বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুতিরা। তাদের হামলার ভয়ে বেশিরভাগ জাহাজ কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নৌপথ এড়িয়ে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে পশ্চিমারা।

হুতিদের হামলার জবাবে বেশ কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে একটি টহল জোট গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র। এই জোট গঠন করেও ইরানপন্থি যোদ্ধাদের থামাতে না পেরে ইয়েমেনে হুতিদের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী। তবে হামলা করেও এখন পর্যন্ত তাদের থামাতে পারেনি পশ্চিমারা।

Tag :

ত্রাণকর্মীর ছদ্মবেশে মার্কিন-ইসরায়েলের গুপ্তচরবৃত্তি

আপডেট: ০৪:৫৩:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। তারা বলছে, আটক ব্যক্তিরা মার্কিন-ইসরায়েলি নেটওয়ার্কের গুপ্তচর। এ ব্যাপারে তাদের কাছে যথার্থ প্রমাণ রয়েছে।

আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়, সোমবার (১০ জুন) গুপ্তচর আটকের ঘোষণা দেয় হুতি। তারা বলে, মার্কিন-ইসরায়েলি গুপ্তচর নেটওয়ার্কের পুরো একটি সেলকে তারা আটক করতে সমর্থ হয়েছে। এ দলটি মানবিক কাজের আড়ালে ইয়েমেনের তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলে পাচার করত।

আটক ব্যক্তিরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর হয়ে কাজের অজুহাতে ইয়েমেনে অবস্থান করছিলেন। তাদের কাছে গুপ্তচরবৃত্তির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। তবে ঠিক কতজন আটক করা হয়েছে বা অভিযুক্তদের জাতীয়তা সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেয়নি গোষ্ঠীটি।

এদিকে জাতিসংঘ আটক ব্যক্তিদের ত্রাণকর্মী হিসেবে অভিহিত করেছে। হুতির ঘোষণার এক দিন আগে রোববার (৯ জুন) জাতিসংঘ জানায়, ১১ জনকে আটক করেছে হুতি। তারা মানবিক কাজে সেখানে অবস্থান করছিলেন। তাই এসব কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

গত বছর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে পশ্চিমা মালিকানাধীন জাহাজে হামলা করে আসছে। এ নিয়ে অঞ্চলটিতে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে গুপ্তচর আটকের ঘটনা ঘটল।

হুতি বলছে, লোহিত সাগরে ইসরায়েলি কোম্পানির মালিকাধীন বা ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বা সমর্থনকারী কোনো জাহাজকে নিরাপদে চলতে দেওয়া হবে না। গাজায় হামলা অব্যাহত থাকলে সেসব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেই যাবে তারা। এর মাধ্যমে মূলত ইসরায়েলের পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার খবর আসে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার শিকার জাহাজটি গ্রিসের মালিকানাধীন। হামলার কারণে জাহাজটিতে পানি ঢুকে যায়। পরে এটিকে উদ্ধার করা হয়। এ হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে হুতিরা।

হুতিরা জানিয়েছে, হামলার শিকার জাহাজটির নাম টিউটর। কয়লাবাহী জাহাজটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। জাহাজটি হামলার কারণে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, ড্রোনের হামলায় জাহাজে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলার ফলে জাহাজের ইঞ্জিন রুমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া জাহাজে পানি উঠতে শুরু করেছে।

মার্কিন সেনা সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ৫০টির বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুতিরা। তাদের হামলার ভয়ে বেশিরভাগ জাহাজ কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নৌপথ এড়িয়ে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে পশ্চিমারা।

হুতিদের হামলার জবাবে বেশ কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে একটি টহল জোট গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র। এই জোট গঠন করেও ইরানপন্থি যোদ্ধাদের থামাতে না পেরে ইয়েমেনে হুতিদের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী। তবে হামলা করেও এখন পর্যন্ত তাদের থামাতে পারেনি পশ্চিমারা।