বিপৎসীমার নিচে তিস্তা নদীর পানি, গজলডোবার গেট খোলা

  • আপডেট: ০২:২৩:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
  • 29

ফাইল ছবি

যদিও তিস্তার পানি আপাতত বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তিস্তার উজানে ভারত গজলডোবা বাঁধের গেটও খুলে রেখেছে। যদি দক্ষিণাঞ্চলের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে রংপুর অঞ্চলের মানুষকে ভোগাবে নদীর তীররক্ষা বাঁধ। কারণ অধিকাংশ বাঁধের কিছু কিছু এলাকা দুর্বল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। হঠাৎ বন্যা পরিস্তিতি সৃষ্টি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এবং ভাঙন প্রবণ এলাকার মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত বন্যার কোন শঙ্কা নেই। তবে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীররক্ষা বাঁধে পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বন্যার কারণে রংপুর, লালমনিরহাট নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের ক্ষতি হবে।

জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছরই বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সম্মুক্ষিন হতে হয় নদী পাড়ের মানুষ। উত্তরাঞ্চলের জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে ভাঙন প্রবণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ও ফসল হারাতে হয় এসব নদ-নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারে ভাঙন রোধে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমান।
প্রতি বছর বন্যায় প্রথম আক্রান্ত হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী, গঙ্গাচড়া সদর এবং গজঘণ্টা ইউনিয়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গার্নারপাড়, বিনবিনার চর, শঙ্করদহ, পশ্চিম ইচলি, পূর্ব ইচলি, বাঘেরহাট, চর ঈশ্বরপুর, জয়রাম মৌজা, মর্নেয়া, রমাকান্ত এবং সারাই। এ ছাড়া প্রতি বছর তিস্তা নদীর পানিতে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, নিচপাড়া, তালুকশাহবাজ, ঢুসমারা এবং হরিশ্বর গোপিভাংগা; টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই, হযরত খাঁ; হারাগাছ ইউনিয়নে চর নজিরদহ শহীদবাগ এবং চর নজিরদহ এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ বর্ষার আগে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মেরামত করলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কম হবে।

সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষায় স্থায়ীভাবে একটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে চলমান রয়েছে বাম তীর রক্ষাকাজও। ব্রহ্মপুত্রের শুধু ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোয় তীর রক্ষার কাজ করা হলেও পর্যায়ক্রমে নদের দুই তীর রক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া গত বছর থেকে চলমান ধরলা নদীর তীর রক্ষার কাজও। ফলে ধরলা নদীর ভাঙন প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে বলে আশাবাদী পাউবো। দুধকুমারেও চলমান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ। তিস্তা নদীতে ১১৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৫ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ৪০ কিলোমিটার ভাঙন প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। কুড়িগ্রামে ২৫ কিলোামিটারের বেশি ভাঙন প্রবণ এবং ঝুঁকিপূর্ণএলাকা রয়েছে। গাইান্ধায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে বেশ কয়েক কিলোমিটার। হঠাৎ বন্যা হলে পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনটা মনে করছেন স্থানীয়রা।

রংপুর পাউবোর তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, আপাতত তিস্তায় কোনো সতর্ক সংকেত নেই। কিছু বাঁধ ঝঁকিপূর্ণ ও ভাঙন প্রবণ এলাক রয়েছে। সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। গজলডোবা গেট খুলে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে গজলডোবার গেট খোলা থাকে।

Tag :

বিপৎসীমার নিচে তিস্তা নদীর পানি, গজলডোবার গেট খোলা

আপডেট: ০২:২৩:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪

যদিও তিস্তার পানি আপাতত বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তিস্তার উজানে ভারত গজলডোবা বাঁধের গেটও খুলে রেখেছে। যদি দক্ষিণাঞ্চলের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে রংপুর অঞ্চলের মানুষকে ভোগাবে নদীর তীররক্ষা বাঁধ। কারণ অধিকাংশ বাঁধের কিছু কিছু এলাকা দুর্বল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। হঠাৎ বন্যা পরিস্তিতি সৃষ্টি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এবং ভাঙন প্রবণ এলাকার মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত বন্যার কোন শঙ্কা নেই। তবে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীররক্ষা বাঁধে পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বন্যার কারণে রংপুর, লালমনিরহাট নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের ক্ষতি হবে।

জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছরই বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সম্মুক্ষিন হতে হয় নদী পাড়ের মানুষ। উত্তরাঞ্চলের জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে ভাঙন প্রবণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ও ফসল হারাতে হয় এসব নদ-নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারে ভাঙন রোধে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমান।
প্রতি বছর বন্যায় প্রথম আক্রান্ত হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী, গঙ্গাচড়া সদর এবং গজঘণ্টা ইউনিয়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গার্নারপাড়, বিনবিনার চর, শঙ্করদহ, পশ্চিম ইচলি, পূর্ব ইচলি, বাঘেরহাট, চর ঈশ্বরপুর, জয়রাম মৌজা, মর্নেয়া, রমাকান্ত এবং সারাই। এ ছাড়া প্রতি বছর তিস্তা নদীর পানিতে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, নিচপাড়া, তালুকশাহবাজ, ঢুসমারা এবং হরিশ্বর গোপিভাংগা; টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই, হযরত খাঁ; হারাগাছ ইউনিয়নে চর নজিরদহ শহীদবাগ এবং চর নজিরদহ এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ বর্ষার আগে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মেরামত করলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কম হবে।

সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষায় স্থায়ীভাবে একটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে চলমান রয়েছে বাম তীর রক্ষাকাজও। ব্রহ্মপুত্রের শুধু ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোয় তীর রক্ষার কাজ করা হলেও পর্যায়ক্রমে নদের দুই তীর রক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া গত বছর থেকে চলমান ধরলা নদীর তীর রক্ষার কাজও। ফলে ধরলা নদীর ভাঙন প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে বলে আশাবাদী পাউবো। দুধকুমারেও চলমান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ। তিস্তা নদীতে ১১৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৫ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ৪০ কিলোমিটার ভাঙন প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। কুড়িগ্রামে ২৫ কিলোামিটারের বেশি ভাঙন প্রবণ এবং ঝুঁকিপূর্ণএলাকা রয়েছে। গাইান্ধায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে বেশ কয়েক কিলোমিটার। হঠাৎ বন্যা হলে পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনটা মনে করছেন স্থানীয়রা।

রংপুর পাউবোর তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, আপাতত তিস্তায় কোনো সতর্ক সংকেত নেই। কিছু বাঁধ ঝঁকিপূর্ণ ও ভাঙন প্রবণ এলাক রয়েছে। সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। গজলডোবা গেট খুলে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে গজলডোবার গেট খোলা থাকে।