সাতক্ষীরার মৎস্য চাষীরা পাবদা মাছ চাষে লাভবান

  • আপডেট: ০৯:১৫:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • 50

সুত্র বাসস

পাবদা মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছে সাতক্ষীরার মৎস্য চাষীরা। মাত্র ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে বিক্রির উপযুক্ত হওয়ায় বছরে দুই বার চাষ করা যায় এ মাছ।

বিদেশেও চাহিদা রয়েছে এ মাছের। এছাড়া খরচের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় অন্য মাছ চাষের তুলনায় লাভও বেশি এ মাছ চাষে। ফলে এ মাছ চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার মৎস্য চাষীদের।

মৎস্য চাষীরা জানান, অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন হওয়ায় পাবদা মাছ চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তাদের। একটি নির্দিষ্ট জমিতে সাদা মাছ চাষ করে যে উৎপাদন পাওয়া যায় সেই একই পরিমান জমিতে পাবদা মাছ চাষ করলে সাদা মাছের তিনগুনেরও বেশি মাছ উৎপাদন পাওয়া যায়। তবে ভালো উৎপাদন পেতে হলে সাদা মাছের তুলনায় পাবদা মাছের একটু বাড়তি পরিচর্যা করতে হয়। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাবদার সাথে সাদা মাছের মিশ্র চাষের ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান এখানকার মৎস্য চাষীরা। অন্য মাছের তুলনায় পাবদা মাছের উৎপাদন বেশি আবার একই জমিতে বছরে দুই বার চাষ করা যায় বলে এ মাছ চাষ করে কৃষকরা লাভবানও হচ্ছেন। শুধু দেশের বাজারেই নয় বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে ফলে চিংড়ির পাশাপাশি পাবদা মাছ রপ্তানী করে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধিতেও এটি গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের নাজমুল হুদা জানান, তিনি ২০১৮ সালে লেখাপড়া ছেড়ে মৎস্য ব্যবসা শুরু করেন। ৬ বিঘা জমিতে পাবদা মাছ চাষ শুরু করে এখন ৪টি খামারের মালিক তিনি। এ তরুণ উদ্যোক্তা পাবদা মাছ চাষ করে এখন সাড়া ফেলেছেন। তার সফলতা দেখে অনেকেই মৎস্য উদ্যোক্তা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। সারা দেশে সরবরাহের পাশাপাশি ভারতের বাজারও দখল করেছে তার খামারের পাবদা মাছ। খেতে সুস্বাধু হওয়ায় দেশসহ বিদেশেও চাহিদা রয়েছে এ মাছের। আকার ভেদে পাবদা মাছ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি আরো জানান। আর তাই চাকুরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি।

একই গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী মাও. রেজাউল ইসলাম জানান, ১০ বিঘা জমিতে পাবদা চাষে তার মোট খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২২ লক্ষ টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস পর এখান থেকে তার পাবদা মাছ বিক্রি হবে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা উপকূলীয় জেলা হিসেবে মৎস্য সম্পদে একটি উদ্বৃত্ত জেলা। এ জেলায় ১ লক্ষ ৪৯ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি ও সাদা মাছ উৎপাদন হয়। এখানে চিংড়ি মাছের পাশাপাশি সাদা মাছের উৎপাদনও লক্ষনীয়। প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিকটন কার্প জাতীয় মাছ সাতক্ষীরা জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এখানে পাবদা ও তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, ইদানিং সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলায় পাবদা মাছ বেশী উৎপাদন হচ্ছে কারণ এটা বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এটি বেশী যাচ্ছে। রপ্তানী হওয়ার কারনে চাষীরা ও ভালো দাম পাচ্ছেন। প্রতি কেজি ৩’শ থেকে সাড়ে ৩ ’শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চাষীরা খুব স্বল্প সময়ে ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে লাভ তারা তাদের ঘরে তুলতে পারছেন। আর তাই লাভজনক হওয়ায় পাবদা মাছের চাষ সাতক্ষীরায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশে রপ্তানী যোগ্য হওয়ায় মৎস্য অফিস থেকে চাষীদের পাবদা চাষে উদ্বুদ্ধসহ তাদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে আরো জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।

Tag :

হাসিনাসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যয় ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

সাতক্ষীরার মৎস্য চাষীরা পাবদা মাছ চাষে লাভবান

আপডেট: ০৯:১৫:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

পাবদা মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছে সাতক্ষীরার মৎস্য চাষীরা। মাত্র ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে বিক্রির উপযুক্ত হওয়ায় বছরে দুই বার চাষ করা যায় এ মাছ।

বিদেশেও চাহিদা রয়েছে এ মাছের। এছাড়া খরচের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় অন্য মাছ চাষের তুলনায় লাভও বেশি এ মাছ চাষে। ফলে এ মাছ চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার মৎস্য চাষীদের।

মৎস্য চাষীরা জানান, অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন হওয়ায় পাবদা মাছ চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তাদের। একটি নির্দিষ্ট জমিতে সাদা মাছ চাষ করে যে উৎপাদন পাওয়া যায় সেই একই পরিমান জমিতে পাবদা মাছ চাষ করলে সাদা মাছের তিনগুনেরও বেশি মাছ উৎপাদন পাওয়া যায়। তবে ভালো উৎপাদন পেতে হলে সাদা মাছের তুলনায় পাবদা মাছের একটু বাড়তি পরিচর্যা করতে হয়। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাবদার সাথে সাদা মাছের মিশ্র চাষের ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান এখানকার মৎস্য চাষীরা। অন্য মাছের তুলনায় পাবদা মাছের উৎপাদন বেশি আবার একই জমিতে বছরে দুই বার চাষ করা যায় বলে এ মাছ চাষ করে কৃষকরা লাভবানও হচ্ছেন। শুধু দেশের বাজারেই নয় বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে ফলে চিংড়ির পাশাপাশি পাবদা মাছ রপ্তানী করে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধিতেও এটি গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের নাজমুল হুদা জানান, তিনি ২০১৮ সালে লেখাপড়া ছেড়ে মৎস্য ব্যবসা শুরু করেন। ৬ বিঘা জমিতে পাবদা মাছ চাষ শুরু করে এখন ৪টি খামারের মালিক তিনি। এ তরুণ উদ্যোক্তা পাবদা মাছ চাষ করে এখন সাড়া ফেলেছেন। তার সফলতা দেখে অনেকেই মৎস্য উদ্যোক্তা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। সারা দেশে সরবরাহের পাশাপাশি ভারতের বাজারও দখল করেছে তার খামারের পাবদা মাছ। খেতে সুস্বাধু হওয়ায় দেশসহ বিদেশেও চাহিদা রয়েছে এ মাছের। আকার ভেদে পাবদা মাছ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি আরো জানান। আর তাই চাকুরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি।

একই গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী মাও. রেজাউল ইসলাম জানান, ১০ বিঘা জমিতে পাবদা চাষে তার মোট খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২২ লক্ষ টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস পর এখান থেকে তার পাবদা মাছ বিক্রি হবে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা উপকূলীয় জেলা হিসেবে মৎস্য সম্পদে একটি উদ্বৃত্ত জেলা। এ জেলায় ১ লক্ষ ৪৯ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি ও সাদা মাছ উৎপাদন হয়। এখানে চিংড়ি মাছের পাশাপাশি সাদা মাছের উৎপাদনও লক্ষনীয়। প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিকটন কার্প জাতীয় মাছ সাতক্ষীরা জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এখানে পাবদা ও তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, ইদানিং সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলায় পাবদা মাছ বেশী উৎপাদন হচ্ছে কারণ এটা বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এটি বেশী যাচ্ছে। রপ্তানী হওয়ার কারনে চাষীরা ও ভালো দাম পাচ্ছেন। প্রতি কেজি ৩’শ থেকে সাড়ে ৩ ’শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চাষীরা খুব স্বল্প সময়ে ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে লাভ তারা তাদের ঘরে তুলতে পারছেন। আর তাই লাভজনক হওয়ায় পাবদা মাছের চাষ সাতক্ষীরায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশে রপ্তানী যোগ্য হওয়ায় মৎস্য অফিস থেকে চাষীদের পাবদা চাষে উদ্বুদ্ধসহ তাদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে আরো জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।