০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিরাপত্তা পরিষদে পাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব : যা বলল হামাস

  • আপডেট: ০২:৫২:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • 18

ফাইল ছবি

জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকার পাস হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রশ্নে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন বলেছে, তারা একে ‌’স্বাগত’ জানাচ্ছে। সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রণীত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাটি নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়।

হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, আন্দোলনটি ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবটি স্বাগত জানায়… (এবং) আবারো দৃঢ়তার সাথে এসব নীতি বাস্তবায়নের জন্য পরোক্ষ আলোচনায় প্রবেশ করার জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম মধ্যস্ততাকারীদের সাথে সহযোগিতার কথা ঘোষণা করছে।

বিবৃতিতে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ভূখণ্ডটি থেকে ইসরাইলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিটি কথা আবারো উল্লেখ করা হয়।

মার্কিন প্রস্তাবটি ১৪-০ ভোটে পাস হয়। রাশিয়া ভোটদানে বিরত থাকে।

প্রস্তাবটিতে ইসরাইল এবং হামাসকে ‘কোনো বিলম্ব এবং পূর্বশর্ত ছাড়া প্রস্তাবের সব পর্ব পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার আহবান জানানো হয়।

জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড ভোটের পরে বলেন, পরিষদ ‘হামাসকে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা মেনে নেয়ার জন্য পরিষ্কার বার্তা পাঠিয়েছে।’ তিনি বলেন, ইসরাইল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যে পরিকল্পানা সারা বিশ্বের দেশগুলো সমর্থন করে।

তিনি পরিষদকে বলেন, ‘যুদ্ধ আজকেই শেষ হতে পারে, যদি হামাস একই কাজ করে, আমি আবার বলছি, লড়াই আজকেই শেষ হতে পারে।’

ইসরাইল এবং হামাস তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে প্রস্তাবের প্রতি জাতিসঙ্ঘে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সংস্থায় ব্যাপক সমর্থন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য দু’পক্ষের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বাইডেন পরিকল্পনার অংশবিশেষ উপস্থাপন করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাসের সামরিক এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলার আগে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করাই যাবে না।

হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ

হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ-এর নেতারা সোমবার প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে সমবেত হন। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে তারা বলেন, যেকোনো চুক্তির লক্ষ্য হতে হবে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার, ইসরাইলের গাজা অবরোধের সমাপ্তি, গাজার পুনর্নির্মাণ এবং গাজায় পণবন্দী এবং ইসরাইলি জেলে ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়।

জাতিসঙ্ঘে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার বেনজামা, যিনি নিরাপত্তা পরিষদে আরব অঞ্চলের প্রতিনিধি, ভোটের পর বলেন, এই রেসোলিউশন ‘তাৎক্ষণিক এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে অগ্রগতি।’ তিনি বলেন, এই প্রস্তাব ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে, কারণ এর বিকল্প হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর চলমান হত্যাযজ্ঞ এবং দুর্ভোগ।’

‘আমরা এই রেসোলিউশনের পক্ষে ভোট দিয়েছি কূটনীতিকে একটি সুযোগ দেয়ার জন্য। যাতে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধের লক্ষ্যে চুক্তিতে পৌঁছানো যায়,’ বেনজামা বলেন।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস অতর্কিতে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা করলে যুদ্ধের শুরু হয়। হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরাইলি নিহত হয় যাদের বেশিভাগ বেসামরিক, এবং ২৫০ জনকে পণবন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। পণবন্দীদের ১২০ জন এখনো হামাসের হাতে রয়েছে, আর ৪৩ জন মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ৩৬,৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের বেশিভাগ নারী ও শিশু, এবং ৮৩,০০০ এর বেশি আহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশ দালান-কোঠা ধ্বংস হয়েছে।

সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা, ভয়েস অব আমেরিকা এবং অন্যান্য

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

নিরাপত্তা পরিষদে পাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব : যা বলল হামাস

আপডেট: ০২:৫২:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকার পাস হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রশ্নে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন বলেছে, তারা একে ‌’স্বাগত’ জানাচ্ছে। সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রণীত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাটি নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়।

হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, আন্দোলনটি ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবটি স্বাগত জানায়… (এবং) আবারো দৃঢ়তার সাথে এসব নীতি বাস্তবায়নের জন্য পরোক্ষ আলোচনায় প্রবেশ করার জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম মধ্যস্ততাকারীদের সাথে সহযোগিতার কথা ঘোষণা করছে।

বিবৃতিতে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ভূখণ্ডটি থেকে ইসরাইলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিটি কথা আবারো উল্লেখ করা হয়।

মার্কিন প্রস্তাবটি ১৪-০ ভোটে পাস হয়। রাশিয়া ভোটদানে বিরত থাকে।

প্রস্তাবটিতে ইসরাইল এবং হামাসকে ‘কোনো বিলম্ব এবং পূর্বশর্ত ছাড়া প্রস্তাবের সব পর্ব পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার আহবান জানানো হয়।

জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড ভোটের পরে বলেন, পরিষদ ‘হামাসকে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা মেনে নেয়ার জন্য পরিষ্কার বার্তা পাঠিয়েছে।’ তিনি বলেন, ইসরাইল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যে পরিকল্পানা সারা বিশ্বের দেশগুলো সমর্থন করে।

তিনি পরিষদকে বলেন, ‘যুদ্ধ আজকেই শেষ হতে পারে, যদি হামাস একই কাজ করে, আমি আবার বলছি, লড়াই আজকেই শেষ হতে পারে।’

ইসরাইল এবং হামাস তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে প্রস্তাবের প্রতি জাতিসঙ্ঘে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সংস্থায় ব্যাপক সমর্থন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য দু’পক্ষের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বাইডেন পরিকল্পনার অংশবিশেষ উপস্থাপন করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাসের সামরিক এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলার আগে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করাই যাবে না।

হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ

হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ-এর নেতারা সোমবার প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে সমবেত হন। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে তারা বলেন, যেকোনো চুক্তির লক্ষ্য হতে হবে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার, ইসরাইলের গাজা অবরোধের সমাপ্তি, গাজার পুনর্নির্মাণ এবং গাজায় পণবন্দী এবং ইসরাইলি জেলে ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়।

জাতিসঙ্ঘে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার বেনজামা, যিনি নিরাপত্তা পরিষদে আরব অঞ্চলের প্রতিনিধি, ভোটের পর বলেন, এই রেসোলিউশন ‘তাৎক্ষণিক এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে অগ্রগতি।’ তিনি বলেন, এই প্রস্তাব ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে, কারণ এর বিকল্প হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর চলমান হত্যাযজ্ঞ এবং দুর্ভোগ।’

‘আমরা এই রেসোলিউশনের পক্ষে ভোট দিয়েছি কূটনীতিকে একটি সুযোগ দেয়ার জন্য। যাতে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধের লক্ষ্যে চুক্তিতে পৌঁছানো যায়,’ বেনজামা বলেন।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস অতর্কিতে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা করলে যুদ্ধের শুরু হয়। হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরাইলি নিহত হয় যাদের বেশিভাগ বেসামরিক, এবং ২৫০ জনকে পণবন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। পণবন্দীদের ১২০ জন এখনো হামাসের হাতে রয়েছে, আর ৪৩ জন মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ৩৬,৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের বেশিভাগ নারী ও শিশু, এবং ৮৩,০০০ এর বেশি আহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশ দালান-কোঠা ধ্বংস হয়েছে।

সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা, ভয়েস অব আমেরিকা এবং অন্যান্য