স্বপ্ন নিয়েই দিনটা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। হাতে পাঁচ উইকেট।লিড দুইশোর উপরে। ক্রিজে আছেন সেট জাকের আলী।মমিনুলের উইকেটে নামা বাকি।তিনশোর রানের বেশি চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাড় করানোর স্বপ্ন নিশ্চয়ই দেখসিল টাইগার সমর্থকরা। তবে দ্রুত একের পর এক উইকেট হারিয়ে সাত সকালেই জেগেছিল ছন্দপতনের শঙ্কা।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে জাকের আলীর কাব্যিক এক ইনিংসে লড়াকু পুঁজি পায় সফরকারীরা।এরপর ব্যাট হাতে তাকে যোগ্য সঙ্গ তাইজুল বোল হাতে জ্বলে উঠলেন।৫ দ্বিতীয় ইনিংসে অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনারই গুঁড়িয়ে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপ।আর তাতে বাংলাদেশ পেল স্মরণীয় এক জয়।
২৮৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ১৮৫ রানে গুটিয়ে যায়।কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে জয় ১০১ রানের। সিরিজ শেষ করেছে ১-১ সমতায়।
আর তাতে ফুরোল দীর্ঘ অপেক্ষা। ২০০৯ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথমবারের মতো টেস্ট জিতল বাংলাদেশ।তবে নানা কারণে মূল দল না খেলায় মাঠে নামা ক্যারিবিয়ান ‘এ’ টিমের বিপক্ষে সেই সিরিজ জয়ের চেয়ে এই জয় বেশি আনন্দ দিবে টাইগারদের।
চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নেমেকোনো ব্যাটারের কাছ থেকে সঙ্গ পাননি জাকের। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে তাই বড় শট খেলে দ্রুত দলের সংগ্রহ বাড়িয়েছেন। দলকে সবচেয়ে বেশি হতাশা উপহার দেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মমিনুল হক। জাকেরের সঙ্গে তার ব্যাটে যখন আরো কিছু রান আশা করছিল বাংলাদেশ, তখনই প্রথম ইনিংসের মতো শূন্য রানে আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটার। কেমার রোচের বলে উইকেটকিপার কেভাম হজের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটার হাসান মাহমুদ-তাসকিন আহমেদও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন জাকের। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আলজারি জোসেফের বলে ডিপ মিড উইকেটে অলিক অ্যাথানেজের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
তার ১০৬ বলের ইনিংসটি ৮ চার এবং ৫ ছক্কায় সাজানো। জাকেরকে যোগ্য সঙ্গ দেন তাইজুল ইসলাম। আগের দিন ৯ রান করা তাইজুল কালও মাটি কামড়ে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আলজারি জোসেফের বাউন্সারের জবাব দিতে না পেরে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ধরা পড়ে ফেরেন ১৪ রান করে।
২৮৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫৭ রানের মধ্যে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখান তাইজুল ও তাসকিন আহমেদ। মিকাইল লুইস ৬ ও কাসি কার্টি ১৪ রান করে আউট হন। তবে কেভাম হজ ও ক্রেইগ ব্রাফেটের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এই দুই ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তাইজুল। ব্রাফেট ৪৩ ও হজ ৫৫ রান করে আউট হন।
তাদের বিদায়ের পর আর কেউ থিতু হতে পারেনি। বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ১৮৫ রানে অলআউট হয় ক্যারিবিয়ানরা। তাইজুল নেন ৫টি উইকেট। এছাড়া তাসকিন ও হাসান মাহমুদ নেন ২টি করে উইকেট।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের সাফল্যকে ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজেই দুটি টেস্ট জিতেছিল টাইগার বাহিনী। এত দিন কোনো পঞ্জিকা বর্ষে এটাই ছিল সেরা সাফল্য। এবার জিতল তিনটি ম্যাচ। পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে এই বছর দেশের জয় হল তিনটি টেস্ট ম্যাচ। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কোনো আসরে এটাই বাংলাদেশের সেরা সাফল্য।