সরকারের মধ্যে রাসেলস ভাইপার সাপ চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন হবিগঞ্জ-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সাম্প্রতিক আলোচিত বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের প্রসঙ্গ টেনে সোস্যাল মিডিয়ার আলোচিত চরিত্র সায়েদুল হক সুমন বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপ এই সরকারে চলে আসছে। যখন সাপ আসে প্রকৃতিতে বেজি থাকে। এই বেজি সাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই সরকারে বিভিন্ন জায়গায় রাসেলস ভাইপার আছে, কিন্তু ওই পরিমাণ বেজি নেই যে সাপ ধরবে।
সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করলেও প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সি প্রশংসা করেন এই স্বতন্ত্র এমপি। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র এমপি হলেও সংসদ নেতার প্রতি আমার বিশ্বাস। আমার বিশ্বাস সব দুর্যোগের মধ্যে উনি আমাদের পার করাবেন। প্রধানমন্ত্রী এমন এক পাখি যিনি ডালের ওপর বসেন ঠিকই, কিন্তু তার ভরসা ডালের ওপর নয়। তার ভরসা পাখার ওপর। কারণ বিশ্বব্যাংকও ভেবেছিল ডাল ভেঙে উনি পড়ে যাবেন। পদ্মা সেতু বানাতে পারবেন না। কিন্তু ঠিকই নিজের পাখা দিয়ে বিশ্বব্যাংককে…।
তিনি বলেন, বাজেটের আকার ও প্রকার নিয়ে আমার বিশ্বাসের ঘাটতি আছে। কিন্তু এই বাজেট বাস্তবায়নে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি বিশ্বাসের ঘাটতি নেই। যে ধরনের বাজেট হোক না কেন তিনি কোনও না কোনও ভাবে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এই বিশ্বাস আছে।
সুমন বলেন, শ্রীলঙ্কা যখন দেউলিয়া হয় তখন অনেকে বলেছে বাংলাদেশের সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। পাকিস্তানের সময় এবং ভারত যখন চাপে পড়েছে তখনও এটা বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সময়েই আমাদের চাপিয়ে রাখা যায়নি। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সম্পদ কোনও অংশেই আমাদের থেকে কম নয়। তবে একটা জায়গায় তাদের ঘাটতি ছিল। তাদের হাতে শেখ হাসিনা ছিল না।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সরকারকে কয়েকটি প্রেশার নেওয়া লাগবে। এই প্রেসারের বিষয়ে আমি সাজেশন দিতে চাই। এই বাজেটে ঋণ দিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মেটানো হবে। আড়াই লাখ কোটি টাকার লোন নেওয়া হবে। দেড় লাখ কোটি নেওয়া হবে ব্যাংক থেকে।
বাজেটের ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এমপি হওয়ার পর একটা গাড়ি কিনেছি এক কোটি টাকা দিয়ে। ৫০ কোটি টাকা লোন নিয়েছি সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে। এই লোনের সুদের কারণে রাতে ঘুম আসে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কীভাবে ঘুমাবেন এটা একমাত্র তিনিই জানেন। আড়াই লাখ কোটি টাকার ঋণের বোঝা উনার মাথায় থাকবে সবসময়।
তিনি বলেন, আমাদের বড় চাপ ফরেন রিজার্ভ। রিজার্ভ কমে যাওয়াটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যে বাজেট এই সংসদে দেওয়া হয়েছে, এই সরকারকে ও বাজেটকে ব্যর্থ করার জন্যও আরেকটা বাজেট আছে। এই বাজেট যাতে ব্যর্থ হয় তার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. মুহস্মদ ইউনুস। তিনি চাচ্ছেন তার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবে। আছে ডলার, সেই ডলার চাচ্ছে প্রধনমন্ত্রীর বাজেট যেন ফেল হয়। ডলারের সঙ্গে বিনিময় হার ৭ টাকা সম্প্রতি ডিপ্রিসিয়েশন করা হয়েছে। এতে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট মেটানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। এটা একটা বড় প্রেশার।
স্বতন্ত্র এই এমপি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে গত ১০ মাস ধরে। এটা আমাদের কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। কিন্তু নির্ধারিত আয়ের মানুষ জানে এটা দিয়ে সংসার চালানো কতটা কঠিন। টাকা পাচার এই সরকারের সব থেকে বড় সমস্যা। টাকা পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। টাকা পাচার হলে যে দেশে যায় সেই দেশের বাজেট হয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিরে আনতে পারি না। পাচারের টাকা ফেরত আনবো কীভাবে? টাকা পাচারে বাজেট সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
সংসদ সদস্যদের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কর বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে সুমন বলেন, সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এটা প্রশংসার যোগ্য। মুদ্রা সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছেন এটাও ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সংকোচন করতে গিয়ে আমাদের এমপিদের ওপরও সংকোচন শুরু হয়ে গেছে। আমাদের গাড়ির ওপর ২০ শতাংশ কর চলে আসলো। আমাদের ট্যাক্স মওকুফ করার কথা, কিন্তু এখন ২০ শতাংশ কর দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি পরশুদিন গাড়ি পেয়ে গেছি। আমার থেকে তো কোনও ট্যাক্স নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আমি যেহেতু ট্যাক্সবিহিন গাড়ি পেয়ে গেছি আমার অন্যান্য কলিগদের জন্য এটা ডিসক্রিমিনেশন হয়। তারপরও বলবো দেশের স্বার্থে যদি নিতে চান তাহলে বজেটে এটা পাশ হলে আমার ২০ শতাংশ ট্যাক্সের অংশ নিজেই এনবিআরে গিয়ে জমা দিয়ে আসবো। আমি যেটা পাইছি এটা আমার কলিগরা পাবে না এটা হতে পারে না।
সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে গেছে মন্তব্য করে সায়েদুল হক বলেন, একজন ভদ্রলোককে দুদক ধরতে পারেনি। এনবিআর ধরতে পারেনি। বাংলাদেশ ফাইন্যানসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট ধরতে পারেনি। আর এনবিআরের মতিউর রহমানকে ধরলো একটা ছাগল। ছাগল না এলে এই লোককে আর জানতে পারতেন না। ছাগলকাণ্ড হওয়ার কারণে আর ফেসবুক ভাইরাল হওয়ার জন্য…। বেনজীরকাণ্ড! সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। তিনি কত বড় হয়ে গেলেন মন্ত্রণালয় জানলো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানলেন না। এই বাচ্চাটা এত বড় হয়ে গেলো, আর কিছুদিন সুযোগ পেলে পুরো গোপালগঞ্জ কিনে ফেলতেন। তারপরও বলবো এর দায় এই মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করবেন অসুবিধা নেই। কিন্তু এই সাদা করার মধ্য দিয়ে বেনজীর আর মতিউরের টাকা সাদা হয়ে যায়, আর এদের ভবিষ্যত প্রজন্ন ও আদর্শের উত্তারাধিকারদের টাকা সাদা হয়ে যায় তাহলে এই দেশে..।
সিলেটে এখন লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি উল্লেখ করে ওই এলাকার এই সংসদ সদস্য বলেন, আমাদের এখানে আগে কখনও বন্যা হতো না। এখন ২২ এ বন্যা, ২৪ এ বন্যা, আমরা বন্যায় দেবে গেছি। এটা জানা দরকার ভারত থেকে আসা পানি কোথায় কোথায় বাধা পড়ে, সেটা দেখতে হবে। অনেকে মিঠামইনের রাস্তাকে সন্দেহ করে। ওই রাস্তা এই দুর্ভোগের কারণ। এটা যদি সত্য হয় তাহলে সেটাও মডিফাই করতে হবে। একটা জেলাকে সৌন্দর্য দিতে গিয়ে আরেকটা জেলাকে ডুবায় দিতে পারেন না। একটা হাইড্রোলজিক্যাল গবেষণা করেন।
গত অধিবেশনে দেওয়া জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর বক্তব্যের জবাবে সুমন বলেন, এই সংসদে আমার বিরুদ্ধে একজন মাননীয় সংসদ সদস্য অভিযোগ দিয়েছেন। আমি বরাদ্দের তথ্য ফেসবুক দিয়ে দিয়েছি। ২৫ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। আমি যত বরাদ্দ পেয়েছি এমপি হিসেবে তার ট্রাস্টি আমি। এই টাকা জনগণের। জনগণের এটার বিষয়ে জানার অধিকার আছে। আপনি যে বরাদ্দ পাবেন নতুন প্রজন্ম তা জানতে চায়। সেটা জানার অধিকার জনগণের আছে। এই স্বচ্চতা আমার মধ্যে থাকতে হবে।