বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি : প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট: ০৪:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
  • 24

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে সেøাগান দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার সেই বক্তব্য ‘বিকৃত করা হয়েছিল’। তিনি বলেছেন, ‘ধৈর্য ধরে তাদের (আন্দোলকারীদের) বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, বারবার বলেছি, মন্ত্রীরা পর্যন্ত দিনের পর দিন বৈঠক করেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দিকেই যেন তাদের বেশি ক্ষোভ। আমার একটা কথা নিয়ে কত দিন প্রতিবাদ করল, কী কথা বলেছিলাম আমি? আমার কথাটাকে বিকৃত করা হয়েছিল। তাদের সেøাগানটা কী? ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার। তোমার বাবা, আমার বাবা- রাজাকার রাজাকার’। তিনি আরো বলেছেন, ‘তার মানে তারা নিজেদেরকেই রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিল। আমি তো তাদের রাজাকার বলিনি, তারা নিজেরাই সেøাগান দিয়ে নিজেদেরকে রাজাকার হিসেবে পরিচিত করল সকলের কাছে’। গতকাল সকালে চলতি মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলন হওয়া সহিংসতায় রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে (বিটিভি) চালানো ধ্বংসকাণ্ড পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত ও শিবির দেশের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিদেশে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্যই দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি এ ধ্বংসকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (চাকরি) পাবে? শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে তারা সেøাগান ধরেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার/ কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার সরকার।’

গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারিদিকে যখন আগুন, এই টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে যখন আগুন লাগানো হলো, দমকল কর্মীরা এসেছে তাদের ঢুকতে দেবে না। তাদের গাড়িতেও আগুন দেওয়া হলো। পুলিশ, র‌্যাব কাউকে ঢুকতে দেবে না, আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। শেখ হাসিনা বলেন, তখন তিনি হেলিকপ্টারে করে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিলেন। অনেক ভবনে আগুন দেওয়ায় অনেকে ছাদে গিয়ে হাহাকার করায় হেলিকপ্টার দিয়েই তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আজ টেলিভিশন ভবনে এসে যে ধ্বংসকাণ্ড আমি দেখলাম এটা কারো পক্ষেই সহ্য করার নয়। আজ বিশে^ বাংলাদেশের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হলো। যদিও যারা আগুন দিয়েছে তাদের কিছু আসে যায় না। কারণ, লন্ডন থেকে নির্দেশ দেয় যেখানে যেখানে বাঙালি আছে তাদের আন্দোলন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করা হলো। সেখানে পুলিশ এসে বিএনপি’র তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বিক্ষোভ করাতে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১৬ জন ১০ বছরের কারাদণ্ড আর বাকীদের সেখানে রাখা হবে না। দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা যে রুটি-রুজির পথ হারাল শুধু তাই নয়, যেসব বাঙালি সেখানে থাকে তাদের মুখটা আজ কোথায় গেল। কারণ, ঐ দেশে আইন আছে, কেউ মিছিল করতে পারে না, কিন্তু তাদের উস্কে দেওয়া হয়েছিল লন্ডন থেকেই। তিনি বলেন, সেখানে আর বাংলাদেশিদের নেওয়া হবে না জানতে পেরে তিনি তাৎক্ষণিক সেখানকার দূতাবাস এবং সে দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। সউদী আরবও কঠিন আইন প্রয়োগকারী দেশ। সেখানেও ২০ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

তাহলে এ গ্রেফতার হওয়া লোকজন ও আমাদের লাখ লাখ কর্মীর ভবিষ্যত কী। সে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানেও তিনি ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাদের আইন তো তাদের নিজস্ব গতিতেই চলবে। এখনও বিভিন্ন দেশে ফোন করে আন্দোলনের জন্য উস্কে দেওয়া হচ্ছে, এতে সেখানকার বাংলাদেশিদের রুটি-রোজগারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামী মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে এখন দেশ ধ্বংসে নেমেছে, সঙ্গে জামায়াত-শিবির যারা সবসময়ই স্বাধীনতাবিরোধী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে তাঁর সরকার কারফিউ দিতে এবং সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আজকে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’
মেট্রোরেল, বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গতকাল প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘যারা এ সবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে যেখানে আছে তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে এ আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে তাঁর সরকার বিটিভির প্রভূত উন্নয়ন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে এত বছর পর এসে দেখা গেল সেই ’৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যে নারকীয় তাণ্ডব তারই যেন একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে।’

প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবলীলা ও ধ্বংসকাণ্ডে ৩৮শ’ যানবাহন, ২৮টি ট্রেন ও ট্রেনের বগি, লঞ্চ ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসকাণ্ড চালানো হলো। তিনি বলেন, ‘তবে, এবারের আগুন লাগানোর ধরন আগেরগুলোর তুলনায় আলাদা। তারা এবার আগুন লাগাতে গান পাউডার ব্যবহার করেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এইভাবে পোড়ালো, একটা কিছু নেই যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এদেশেরই মানুষ? এদের কি এই দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেল যেটা ছিল সারা বিশে^র প্রতিটি বাঙালির কাছে একটা সম্পদ, সেটাকে ধ্বংস করল। যার মাধ্যমে মানুষ অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারতো। আজ সেটা বন্ধ। আবার সেই ট্রাফিক জ্যাম, আবার সেই পূর্বের অবস্থায় মানুষকে ফেলে দিল। আর এই টেলিভিশন সেন্টারে তারা যেভাবে ধ্বংসকাণ্ড চালিয়েছে যেসব জিনিস মানুষের সেবা করে মানুষের জন্য কাজ করে সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত।
তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও আগুন দিয়ে পোড়ালো। গাড়িগুলো, এমনকি জাপান থেকে আনা অত্যাধুনিক সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো পুড়িয়েছে, পানি শোধনাগারে হামলা করতে গেছে, পয়ঃশোধনাগারে হামলা-এটা কী হচ্ছে? কী তাদের মানসিকতা?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাই দেশবাসীকে বলবো, এই ঢাকাবাসীকেই বলবো, আজ আপনাদের এই দুর্ভোগ, আমিতো লাঘব করে দিয়েছিলাম। কিন্তু যারা এটা ধ্বংস করলো আর যাদের জন্য এই দুর্ভোগ আর যাদের জন্য আজ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে আমি তাদের বিচারের ভার এদেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘যারা এদেশের মানুষের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ, এদেশের জনগণই একমাত্র শক্তি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে। আসল সত্যটা জানুন। যারা এসবের সাথে জড়িত সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে যেখানে আছে তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। দেশবাসীর কাছে আমি সেই আহ্বানই জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আমরা অনেক কষ্ট করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীন করেছি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেই মর্যাদাকে ধ্বংস করার জন্যই এই ধ্বংসকাণ্ড।

শেখ হাসিনা বিটিভির ধ্বংসকাণ্ড আর আগুনে পোড়া অবস্থা দেখে স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আজ অতীতের কথা মনে পড়ে আমি কতবার এখানে এসেছি। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে এসেছি। আজ যে ধ্বংসকাণ্ড দেখলাম এরপর এটা আবার কবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে, জানি না।
প্রধানমন্ত্রী এই সময় অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘এইগুলো দেখে আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না, এক একটা জিনিস যখন গড়ে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়।’ তিনি বলেন, দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি, সেটা আমার দেশের মানুষেরই জন্য। একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি যাতে এইগুলো শুধু দেশে নয়, বিদেশিদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়। আমরা দেশের যে উন্নতি করছি তার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই জায়গাগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে। এত দিনের কষ্টের ফসল সব শেষ করে দিতে চাচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কষ্টের। দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই, আমি তাদের সহযোগিতা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশ থেকে বিএনপি-জামায়াত বিশেষকরে শিবির কোটাবিরোধী আন্দোলকারীদের ওপর নির্ভর করে এই ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তিনি সারাদেশের তাণ্ডবলীলার খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, সেখানে পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে হাসপাতাল থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। র‌্যাবের গাড়ির ভেতরে র‌্যাব সদস্যকে হত্যা, সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গাজীপুরে এক কর্মীকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখে। বাড়ি বাড়ি খুঁজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা, যাত্রাবাড়িতে তাঁর মটর শোভাযাত্রার এক চালকও বাদ যায়নি। এভাবে একদিকে হত্যাকাণ্ড একদিকে জ্বালাও পোড়াও। এরা কি বাংলাদেশের নাগরিক? দেশের স্বাধীনতা বা উন্নয়নে বিশ^াসী, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের কোটা বাতিলের জারি করা পরিপত্র বাতিলে হাইকোর্টের রায় যেখানে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এবং সরকারের আপিলের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল, সেখানে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কী ছিল সে প্রশ্ন তিনি শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের উদ্দেশে ছুঁড়ে দেন।

এদিকে গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত কয়েক দিনে হওয়া সহিংসতায় আহতদের দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে আহতদের খোঁজখবর নেন। তিনি চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলেন। আহতদের সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় দলমত নির্বিশেষে আহত সবার চিকিৎসা ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার সবই করবে সরকার। আহতরা যেই দলেরই হোক চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোটা নিয়ে সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন আন্দোলন শেষ হচ্ছে না? বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা-বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

Tag :

বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: ০৪:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে সেøাগান দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার সেই বক্তব্য ‘বিকৃত করা হয়েছিল’। তিনি বলেছেন, ‘ধৈর্য ধরে তাদের (আন্দোলকারীদের) বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, বারবার বলেছি, মন্ত্রীরা পর্যন্ত দিনের পর দিন বৈঠক করেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দিকেই যেন তাদের বেশি ক্ষোভ। আমার একটা কথা নিয়ে কত দিন প্রতিবাদ করল, কী কথা বলেছিলাম আমি? আমার কথাটাকে বিকৃত করা হয়েছিল। তাদের সেøাগানটা কী? ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার। তোমার বাবা, আমার বাবা- রাজাকার রাজাকার’। তিনি আরো বলেছেন, ‘তার মানে তারা নিজেদেরকেই রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিল। আমি তো তাদের রাজাকার বলিনি, তারা নিজেরাই সেøাগান দিয়ে নিজেদেরকে রাজাকার হিসেবে পরিচিত করল সকলের কাছে’। গতকাল সকালে চলতি মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলন হওয়া সহিংসতায় রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে (বিটিভি) চালানো ধ্বংসকাণ্ড পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত ও শিবির দেশের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিদেশে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্যই দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি এ ধ্বংসকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (চাকরি) পাবে? শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে তারা সেøাগান ধরেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার/ কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার সরকার।’

গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারিদিকে যখন আগুন, এই টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে যখন আগুন লাগানো হলো, দমকল কর্মীরা এসেছে তাদের ঢুকতে দেবে না। তাদের গাড়িতেও আগুন দেওয়া হলো। পুলিশ, র‌্যাব কাউকে ঢুকতে দেবে না, আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। শেখ হাসিনা বলেন, তখন তিনি হেলিকপ্টারে করে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিলেন। অনেক ভবনে আগুন দেওয়ায় অনেকে ছাদে গিয়ে হাহাকার করায় হেলিকপ্টার দিয়েই তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আজ টেলিভিশন ভবনে এসে যে ধ্বংসকাণ্ড আমি দেখলাম এটা কারো পক্ষেই সহ্য করার নয়। আজ বিশে^ বাংলাদেশের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হলো। যদিও যারা আগুন দিয়েছে তাদের কিছু আসে যায় না। কারণ, লন্ডন থেকে নির্দেশ দেয় যেখানে যেখানে বাঙালি আছে তাদের আন্দোলন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করা হলো। সেখানে পুলিশ এসে বিএনপি’র তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বিক্ষোভ করাতে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১৬ জন ১০ বছরের কারাদণ্ড আর বাকীদের সেখানে রাখা হবে না। দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা যে রুটি-রুজির পথ হারাল শুধু তাই নয়, যেসব বাঙালি সেখানে থাকে তাদের মুখটা আজ কোথায় গেল। কারণ, ঐ দেশে আইন আছে, কেউ মিছিল করতে পারে না, কিন্তু তাদের উস্কে দেওয়া হয়েছিল লন্ডন থেকেই। তিনি বলেন, সেখানে আর বাংলাদেশিদের নেওয়া হবে না জানতে পেরে তিনি তাৎক্ষণিক সেখানকার দূতাবাস এবং সে দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। সউদী আরবও কঠিন আইন প্রয়োগকারী দেশ। সেখানেও ২০ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

তাহলে এ গ্রেফতার হওয়া লোকজন ও আমাদের লাখ লাখ কর্মীর ভবিষ্যত কী। সে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানেও তিনি ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাদের আইন তো তাদের নিজস্ব গতিতেই চলবে। এখনও বিভিন্ন দেশে ফোন করে আন্দোলনের জন্য উস্কে দেওয়া হচ্ছে, এতে সেখানকার বাংলাদেশিদের রুটি-রোজগারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামী মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে এখন দেশ ধ্বংসে নেমেছে, সঙ্গে জামায়াত-শিবির যারা সবসময়ই স্বাধীনতাবিরোধী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে তাঁর সরকার কারফিউ দিতে এবং সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আজকে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’
মেট্রোরেল, বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গতকাল প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘যারা এ সবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে যেখানে আছে তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে এ আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে তাঁর সরকার বিটিভির প্রভূত উন্নয়ন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে এত বছর পর এসে দেখা গেল সেই ’৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যে নারকীয় তাণ্ডব তারই যেন একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে।’

প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবলীলা ও ধ্বংসকাণ্ডে ৩৮শ’ যানবাহন, ২৮টি ট্রেন ও ট্রেনের বগি, লঞ্চ ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসকাণ্ড চালানো হলো। তিনি বলেন, ‘তবে, এবারের আগুন লাগানোর ধরন আগেরগুলোর তুলনায় আলাদা। তারা এবার আগুন লাগাতে গান পাউডার ব্যবহার করেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এইভাবে পোড়ালো, একটা কিছু নেই যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এদেশেরই মানুষ? এদের কি এই দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেল যেটা ছিল সারা বিশে^র প্রতিটি বাঙালির কাছে একটা সম্পদ, সেটাকে ধ্বংস করল। যার মাধ্যমে মানুষ অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারতো। আজ সেটা বন্ধ। আবার সেই ট্রাফিক জ্যাম, আবার সেই পূর্বের অবস্থায় মানুষকে ফেলে দিল। আর এই টেলিভিশন সেন্টারে তারা যেভাবে ধ্বংসকাণ্ড চালিয়েছে যেসব জিনিস মানুষের সেবা করে মানুষের জন্য কাজ করে সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত।
তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও আগুন দিয়ে পোড়ালো। গাড়িগুলো, এমনকি জাপান থেকে আনা অত্যাধুনিক সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো পুড়িয়েছে, পানি শোধনাগারে হামলা করতে গেছে, পয়ঃশোধনাগারে হামলা-এটা কী হচ্ছে? কী তাদের মানসিকতা?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাই দেশবাসীকে বলবো, এই ঢাকাবাসীকেই বলবো, আজ আপনাদের এই দুর্ভোগ, আমিতো লাঘব করে দিয়েছিলাম। কিন্তু যারা এটা ধ্বংস করলো আর যাদের জন্য এই দুর্ভোগ আর যাদের জন্য আজ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে আমি তাদের বিচারের ভার এদেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘যারা এদেশের মানুষের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ, এদেশের জনগণই একমাত্র শক্তি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে। আসল সত্যটা জানুন। যারা এসবের সাথে জড়িত সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে যেখানে আছে তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। দেশবাসীর কাছে আমি সেই আহ্বানই জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আমরা অনেক কষ্ট করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীন করেছি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেই মর্যাদাকে ধ্বংস করার জন্যই এই ধ্বংসকাণ্ড।

শেখ হাসিনা বিটিভির ধ্বংসকাণ্ড আর আগুনে পোড়া অবস্থা দেখে স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আজ অতীতের কথা মনে পড়ে আমি কতবার এখানে এসেছি। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে এসেছি। আজ যে ধ্বংসকাণ্ড দেখলাম এরপর এটা আবার কবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে, জানি না।
প্রধানমন্ত্রী এই সময় অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘এইগুলো দেখে আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না, এক একটা জিনিস যখন গড়ে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়।’ তিনি বলেন, দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি, সেটা আমার দেশের মানুষেরই জন্য। একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি যাতে এইগুলো শুধু দেশে নয়, বিদেশিদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়। আমরা দেশের যে উন্নতি করছি তার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই জায়গাগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে। এত দিনের কষ্টের ফসল সব শেষ করে দিতে চাচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কষ্টের। দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই, আমি তাদের সহযোগিতা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশ থেকে বিএনপি-জামায়াত বিশেষকরে শিবির কোটাবিরোধী আন্দোলকারীদের ওপর নির্ভর করে এই ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তিনি সারাদেশের তাণ্ডবলীলার খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, সেখানে পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে হাসপাতাল থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। র‌্যাবের গাড়ির ভেতরে র‌্যাব সদস্যকে হত্যা, সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গাজীপুরে এক কর্মীকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখে। বাড়ি বাড়ি খুঁজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা, যাত্রাবাড়িতে তাঁর মটর শোভাযাত্রার এক চালকও বাদ যায়নি। এভাবে একদিকে হত্যাকাণ্ড একদিকে জ্বালাও পোড়াও। এরা কি বাংলাদেশের নাগরিক? দেশের স্বাধীনতা বা উন্নয়নে বিশ^াসী, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের কোটা বাতিলের জারি করা পরিপত্র বাতিলে হাইকোর্টের রায় যেখানে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এবং সরকারের আপিলের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল, সেখানে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কী ছিল সে প্রশ্ন তিনি শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের উদ্দেশে ছুঁড়ে দেন।

এদিকে গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত কয়েক দিনে হওয়া সহিংসতায় আহতদের দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে আহতদের খোঁজখবর নেন। তিনি চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলেন। আহতদের সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় দলমত নির্বিশেষে আহত সবার চিকিৎসা ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার সবই করবে সরকার। আহতরা যেই দলেরই হোক চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোটা নিয়ে সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন আন্দোলন শেষ হচ্ছে না? বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা-বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।