বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ) তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। যেখানে তিনি ১০ এপ্রিল প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা, জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা ও জাতীয় চার নেতার জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্তির দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (৩ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া স্মারকলিপিতে এই দাবি জানান সোহেল তাজ।
স্মারকলিপিতে সোহেল তাজ বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব, আপনাকে ও আপনার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানোত্তর জনসমর্থিত অন্তর্বতীকালীন বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি তানজিম আহমদ সোহেল তাজ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং উদার গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের সন্তান এবং এদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করতে চাই। সেই মর্মে প্রথমে কিছু কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
তিনি এতে বলেছেন, ১৯৭০ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনৈতিক আলোচনা-অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা শাসক শ্রেণির রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন ও গণবিপ্লবী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন সংগ্রাম, সামরিক বাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের বিদ্রোহ থেকে এক অভূতপূর্ব প্রেক্ষাপট রচিত হয়, যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে ধাবিত করে। আইনানুগভাবে বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য একটি গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন ও দেশপ্রেমে নিবেদিত মহান নেতৃত্বের মাধ্যমে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালনা। মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের জনগণ তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে এক অসম্ভবকে সম্ভব করে। দেশের প্রতিটি স্করের মানুষ এক জীবন-মরণ জনযুদ্ধে সামিল হয় এবং পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন বিপ্লবী রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ কায়েম করে।
সোহেল তাজ আরও বলেন, শোষণ, দুর্নীতি, বৈষম্য ও অত্যাচারী স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ চিরকাল ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করেছে, কখনও পিছুপা হয়নি। এর প্রতিফলন আমরা যেমন দেখেছিলাম ১৯৭১-এ তেমনি ২০২৪-এ। একাত্তরের ন্যায় ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-এ গণমানুষের এক অভিনব স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বৈরাচরী শাসনকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ জয়লাভ করে। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য যে, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস যার ফসল হল বাংলাদেশ, সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরেও অপরাজনীতির কারণে অনালোকিত রয়ে গিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের নতুন ও আগামী প্রজন্মের পথ চলার প্রেরণা ও দিক নির্দেশনার বাতিঘর, তাকে উন্মুক্ত করলে বাংলাদেশেরই প্রভৃত লাভ।
সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মের সুষ্ঠু চিন্তা গঠনে ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এদেশের ইতিহাসকে তাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। এক বিশেষ ব্যক্তি কেন্দ্রিক ইতিহাস ও চেতনা পাঠের অতীতের অন্ধকার যুগকে চিরতরে ছুটি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন কোনো রাজনৈতিক দল ইতিহাসকে মিথ্যা ও খণ্ডিত আকারে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করার একটাই উপায় তা হলো ইতিহাসকে সঠিকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে পাঠ উন্মোচনের উপযোগী করে দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের মূল বিপ্লবী চেতনা সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খাকে ২০২৪-এর গণআন্দোলনের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।