স্বামী ঝুলছিলেন ফ্যানে, স্ত্রী সহ দুই সন্তানের রক্তাক্ত লাশ পরে ছিলো বিছানায়

  • আপডেট: ০২:২১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  • 0

ছবি সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্বামী-স্ত্রীসহ দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে পৌর শহরের রানীর বাজার শাহী মসজিদ সংলগ্ন শাহজাহান মিয়ার ৭ তলা ভবনের ৭ম তলায় একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ওই বাসার বিছানায় স্ত্রী-দুই সন্তানের রক্তাক্ত লাশ, আর ফ্যানে ঝুলছিল স্বামীর মরদেহ।

মৃতরা হলেন- জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), তার স্ত্রী নিপা মল্লিক (৩০), তাদের ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৮) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৬)। জনির পৈতৃক বাড়ি রায়পুরার আনারবাদ হলেও তিনি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ভৈরবের রানীর বাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। পরিবারটি গত তিন মাস যাবত শাহজাহান মিয়ার বাসায় ভাড়া ওঠেন।

 

জনি চন্দ্র বিশ্বাস নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আনারবাদ এলাকার গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন জনি। তার স্ত্রী নিপা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

পুলিশ ও প্রতিবেশীরা ধারণা করছেন, সোমবার রাতের কোনো এক সময়ে স্বামী জনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করার পর নিজে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। পুলিশ তার বাসা থেকে লাশ উদ্ধারের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায় এবং স্বামী জনির লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত তিন মাস আগে জনি এ বাসায় উঠেন। এ ঘটনায় ভৈরবে শোকের ছায়া নেমে আসে। লাশ দেখতে শত শত মানুষ বাসায় ভিড় করেন। পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রতিবেশী সৃষ্টি বর্মণ জানান, ভবনটি ৭ তলা। এই ভবনে দুই ইউনিটে ১৪টি বাসা। তিন মাস আগে জনি বাসাটি ভাড়া নিয়ে বাসায় ওঠেন। পরিবারটি দরিদ্র। সোমবার জনি তার পরিবারসহ বাবার বাড়ি গিয়ে সারা দিন থেকে রাত ৯টায় ভৈরবের বাসায় ফিরেন। রাত ১১টার পর বাসার দরজা বন্ধ দেখতে পান। এরপর আর কিছুই জানেন না তিনি।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, বিকাল ৩টায় ওয়ার্কশপের এক কর্মচারী জনির খোঁজে বাসায় আসেন।

তিনি বলেন, ভৈরব বাজারে বাগানবাড়ীর মিজান ওয়ার্কশপে জনি কাজ করতেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি তার কর্মস্থলে না যাওয়ায় ওয়ার্কশপ মালিক তার কর্মচারীকে বাসায় পাঠান। বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ পেলে ডাকতে থাকেন। এ সময় দরজায় জোরে ধাক্কা দিলেও ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আমাকেসহ প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন। পরে দরজা ভেঙে রুমের ভেতর জনিকে ঝুলন্ত অবস্থায় ও স্ত্রী-সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এ সময় শত শত মানুষ খবর পেয়ে বাসায় ভিড় করেন।

নিহত জনির মা শিখা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে সোমবার সপরিবারে আমার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সারাদিন বাড়িতে থেকে রাতে ভৈরবের বাসায় চলে আসে। মঙ্গলবার বিকালে ফোনে খবর পাই তাদের মৃত্যুর ঘটনা। খবর পেয়ে দ্রুত ভৈরবে এসে দেখলাম আমার ছেলে, তার স্ত্রী ও দুই নাতির লাশ। এসব কথা বলতে বলতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহিন মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

স্বামী ঝুলছিলেন ফ্যানে, স্ত্রী সহ দুই সন্তানের রক্তাক্ত লাশ পরে ছিলো বিছানায়

স্বামী ঝুলছিলেন ফ্যানে, স্ত্রী সহ দুই সন্তানের রক্তাক্ত লাশ পরে ছিলো বিছানায়

আপডেট: ০২:২১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্বামী-স্ত্রীসহ দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে পৌর শহরের রানীর বাজার শাহী মসজিদ সংলগ্ন শাহজাহান মিয়ার ৭ তলা ভবনের ৭ম তলায় একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ওই বাসার বিছানায় স্ত্রী-দুই সন্তানের রক্তাক্ত লাশ, আর ফ্যানে ঝুলছিল স্বামীর মরদেহ।

মৃতরা হলেন- জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), তার স্ত্রী নিপা মল্লিক (৩০), তাদের ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৮) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৬)। জনির পৈতৃক বাড়ি রায়পুরার আনারবাদ হলেও তিনি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ভৈরবের রানীর বাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। পরিবারটি গত তিন মাস যাবত শাহজাহান মিয়ার বাসায় ভাড়া ওঠেন।

 

জনি চন্দ্র বিশ্বাস নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আনারবাদ এলাকার গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন জনি। তার স্ত্রী নিপা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

পুলিশ ও প্রতিবেশীরা ধারণা করছেন, সোমবার রাতের কোনো এক সময়ে স্বামী জনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করার পর নিজে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। পুলিশ তার বাসা থেকে লাশ উদ্ধারের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায় এবং স্বামী জনির লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত তিন মাস আগে জনি এ বাসায় উঠেন। এ ঘটনায় ভৈরবে শোকের ছায়া নেমে আসে। লাশ দেখতে শত শত মানুষ বাসায় ভিড় করেন। পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রতিবেশী সৃষ্টি বর্মণ জানান, ভবনটি ৭ তলা। এই ভবনে দুই ইউনিটে ১৪টি বাসা। তিন মাস আগে জনি বাসাটি ভাড়া নিয়ে বাসায় ওঠেন। পরিবারটি দরিদ্র। সোমবার জনি তার পরিবারসহ বাবার বাড়ি গিয়ে সারা দিন থেকে রাত ৯টায় ভৈরবের বাসায় ফিরেন। রাত ১১টার পর বাসার দরজা বন্ধ দেখতে পান। এরপর আর কিছুই জানেন না তিনি।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, বিকাল ৩টায় ওয়ার্কশপের এক কর্মচারী জনির খোঁজে বাসায় আসেন।

তিনি বলেন, ভৈরব বাজারে বাগানবাড়ীর মিজান ওয়ার্কশপে জনি কাজ করতেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি তার কর্মস্থলে না যাওয়ায় ওয়ার্কশপ মালিক তার কর্মচারীকে বাসায় পাঠান। বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ পেলে ডাকতে থাকেন। এ সময় দরজায় জোরে ধাক্কা দিলেও ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আমাকেসহ প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন। পরে দরজা ভেঙে রুমের ভেতর জনিকে ঝুলন্ত অবস্থায় ও স্ত্রী-সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এ সময় শত শত মানুষ খবর পেয়ে বাসায় ভিড় করেন।

নিহত জনির মা শিখা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে সোমবার সপরিবারে আমার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সারাদিন বাড়িতে থেকে রাতে ভৈরবের বাসায় চলে আসে। মঙ্গলবার বিকালে ফোনে খবর পাই তাদের মৃত্যুর ঘটনা। খবর পেয়ে দ্রুত ভৈরবে এসে দেখলাম আমার ছেলে, তার স্ত্রী ও দুই নাতির লাশ। এসব কথা বলতে বলতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহিন মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।